প্রথমেই বলে নিতে হচ্ছে এটা আমার নিজস্ব মতামত। তাই দ্বিমত থাকলে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলনে গিয়ে থেমেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আন্দোলন শুরুটা বিশেষ ভাবে কোটা সংস্কার নিয়ে ছিল। তাদের দাবি কোটা সংস্কার পর্যন্তই ছিল। তারা না সরকার পতনের ডাক দিয়েছিল। না তারা সরকার পতন করতে চেয়েছিল।
আন্দোলনের শুরুর দিকে যদি আমরা তাকাই তবে একটা বিষয় দেখতে পাব। সাধারণ ছাত্ররা কিন্তু তাদের দাবিতে কোটাকে সংস্কার করে সেখানে কোটার ধরন ক্যামন হতে পারে সেটার বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছিল। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে কেন এই দাবি সরকার পতনের দাবিতে গিয়ে ঠেকল। এটা কিন্তু যৌক্তিক একটি প্রশ্ন। এটা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। কিন্তু আপাতত কেউ এটা নিয়ে আলোচনা করছে না। অথচ এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি প্রশ্ন।
আসুন আন্দোলনের শুরুর দিন গুলোতে ফিরে যাই।
যখন কোটার রায় আসল তখন দেখা গেল ৫৬ শতাংশ চাকরির পদ কোটাতেই চলে যাচ্ছে। আপনি একজন সাধারণ মানুষ যার রাজনীতির সাথে কোন সম্পর্ক নেই আপনি ভেবে দেখুন তো এটা কি যৌক্তি নাকি অযৌক্তিক।
এখানে অনেকেই বলছেন যে চাকরির ক্ষেত্রে আগে পরীক্ষায় পাশ তো করতে হবে। এটা তো অবশ্যই পাশ করতে হবে। তবে যদি ৪০ পেয়ে পাশ করছেন আর যিনি ৬০ পেয়ে পাস করছেন তাদের দুজনের মধ্যে তখন কাকে আপনি প্রাধান্য দেবেন। যার কোটা আছে সেই কিন্তু চাকরিটি পেয়ে যাবে। কারণ কোটাপূরণ করার পর তো বাকিদের চাকরি দেয়া হবে। এই দিকে রেলওয়ের চাকরিতে ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটা রয়েছে।
আমাদের আলোচনার বিষয় কোটা নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় সরকার পতনের দিকে আন্দোলন কেন গেল। আওয়ামীলীগ কোথায় ভুল করেছে।
২০০৮ এর যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতা এল সবার মতো আমিও খুশি হয়েছি। কারণ বিএনপি ও জামতা শিবির কর্মকান্ড সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই অবগত ছিলাম। তাদের অত্যাচারের অনেক চিত্রের সাক্ষী আমি। তাই যখন লীগ ক্ষমতায় এল ভাবলাম দেশ এবার এগিয়ে যাবে।
সত্যিকার অর্থেই দেশ এগিয়েছে। তবে ধীরে ধীরে আওয়ামীলীগ স্বেচ্ছচারী হয়ে উঠছিল। তারা ক্ষমতাকে অপব্যবহার শুরু করেছিল। বলা যায় যত ভাবে ক্ষমতা নিজের করে ব্যবহার করা যায় সেটাই তারা করে যাচ্ছিল। তাহলে দেশের এত উন্নয়ন কি হাওয়াতে হয়েছে। অবশ্যই নয়। কিন্তু এই উন্নতি মাঝেও যে ফাক রয়েছে সেটার কথা তো কেউ বলছে না।
আমরা আলু খেতাম ২০ টাকা কেজি সেটা আজ ৮০/৯০ টাকা। কচুর মত সবজ্বি বাজারে কেনার মত সামর্থ্য হয়ে ওঠে না। করল্লার মত সবজ্বি সাধারণ পরে থাকে তাও যখন ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন আমি এই উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করতেই পারি।
দেশের লক্ষ লক্ষ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে সেটা প্রধানমন্ত্রী দেখেও না দেখে থাকার ভান করে পরে থাকেন। হাসতে হাসতে বলেন আমার ড্রাইভার ৪০০ কোটি টাকার মালিক। এসব নিয়ে উনি মন্তব্য করেন কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেন না। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ কখনও উনি নেননি। উনি জনগণ কে বেগুণের পরিবর্তে কুমড়ো খেতে বলেন, পেয়াজ ছাড়া রান্না করতে বলেন। এগুলো কোন সমাধান নয়। উনি জাস্ট জনগণকে গোণায় ধরেননি।
আওয়ামীলীগ ভেবেছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন জোরদার আন্দোলন আজ পর্যন্ত সফল হয়নি। এবারও হবে না। দমন করে ফেলবেই তারা। ছাত্রলীগ দিয়ে তারা সব দমিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে। কিন্তু এবার সাধারণ জনতা পর্যন্ত রাস্তায় নেমেছে। তারা ভাবেনি যে এই অবস্থায় তাদের যেতে হবে।
লীগ সরকার শুরুর ভুল ছিল তারা এই যে দুর্নীতি, টাকা পাচার ও দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি এর লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু সরকার এটা করেনি। সরকারের লোকজন খোলাখুলি স্বীকার করে যে তারা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না। এটা জনাব ওবায়েদুল কাদের নিজেই বলেছেন। অথচ আপনারা সরকার, ক্ষমতায় আপনারা। এদের বিরুদ্ধে আপনার কথা বলতে পারেননি। আপনারা জনগণ কে পিষ্ট করেই চলে ছিলেন।
শেয়ার বাজারে ধস নামিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছন। গরিব মরেছে আর ধনীরা আরও ধনী হয়েছে। এস আলম এর মত গ্রুপ খোলাখুলি ভাবে শ্রমিক হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কোন একশন এ জাননি। এই যে মানুষের ক্ষোভ জমেছে। সেটা একদিনে হয়নি। দিনে দিনে বেড়েছে।
তাহলে দেশে কি উন্নয়ন হয়নি। অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু ৫০টাকার কাজ যখন ৫০০ টাকা দেখানো হয়েছে আর কাজ করা হয়েছে ৫ টাকার। তখন সেটাকে কি আমি উন্নয়ন বলব। নাকি দুর্নীতি বলব।
এবার বলি দ্বিতীয় ভুল কি করেছে, তারা দমন করায় বিশ্বাসী ছিল। ভেবেছিল সব কিছুতেই দমন করে তারা ঠিকে থাকবে। অথচ ইতিহাস বলে যখনই কেউ ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে তারাই শেষ পর্যন্ত ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। সেটা আপনি চাইলে বাংলাদেশের ইতিহাস ঘেটেও দেখতে পারেন।
আওয়ামীলীগ তাদের অংগ সংগঠনের মাধ্যমে প্রথমে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছে। এরপর পুলিশ দিয়ে গুলি টিয়ার শেল চালিয়ে চেষ্টা করেছে আন্দোলন দমানো। এমনকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন দমানো। এই যে দমনের রাজনীতি সেটা আওয়ামীলীগ শুরু থেকেই করে আসছে।
আমার নিজের ঘরের ঘটনা বলি,
আমি আমার সংসার পরিচালনা করি। না কোন রাজনীতি, না কোন দল। আমার দরকার খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা। আমার মুল তো খাদ্য। এই খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া তো সরকারের দায়িত্ব যখন আমি দেখি বাজারে যাবার পর কিছুই ক্রয় ক্ষমতায় থাকে না। তখন আমার ক্ষোভ আসা স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক।
লীগ তো নির্বাচনের ভাষণে বড় বড় কথা বলেছিল আমরা এটা করে দেব ওটা করে দেব। সামান্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তারা যে ক্ষমতা ঠিকে ছিল এটা বিস্ময়কর।
তো যাইহোক,
ছাত্রদের উপর গুলি চালানোটাকে কেউ ভাল চোখে নেয়নি। এরপর কারফিউ, ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট। সব কিছু মিলিয়ে আওয়ামীলীগ ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। আর ছাত্রদের সাথে যখন সাধারণ জনতা একাত্বতা প্রকাশ করেছে তখন তাদের বোঝা উচিত ছিল যে এখন আর কোন কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তবুও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা দমনের কথাই বলে গিয়েছেন।
চাইলে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারতেন। হতে পারতেন কালের অন্যতম সফল নেতা। তবে তিনি পালিয়ে গিয়েছেন। এরচেয়ে কলংক জনক কিছু সম্ভবত আর নেই।
আমার বাবা আওয়ামীলীগের পার ভক্ত। মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে আপোষহীন। যার জন্য তার চাকরিও চলে গিয়েছে বিএনপির আমলে। তিনি আপোষ করেননি। তিনিও আজ বলেন যে শেখ হাসিন চাইলে এই আন্দোলন খুব সহজেই শুরুতেই শেষ করতে পারতেন। তিনি তা করেন নাই। ভেবেছিলেন ছাত্ররা আর কি করবে। অথচ ইতিহাস বলে ছাত্ররাই দেশের পরিবর্তন এনেছে। বাবার সাথে ২০১৯ এর নির্বাচনের পর কথায় কথায় বলেছিলাম আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে কুলষিত করবে। তারা এমন ভাবে এই দুটোকে ব্যবহার করেছে যে মানুষ বিরক্ত হবে। তখন এর দায় ভাবে আওয়ামীলীগেই নিতে হবে।
আজকের যে পরিনতি এর দায় ভার পুরোটাই আওয়ামীলীগের নিজের।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৪০