somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিন্নপত্রঃ একটি বিলম্ব নৈবেদ্য

০৯ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় রবিবাবু ,


তোমাকে যদি কখনো পেতাম তাহলে তোমার এক চিলতে সাদা দাঁড়ি টেনে ধরে বলতাম, “তুমি কি হে ! আমার ভেতরে,খুব ভেতরে ঢুকে আমাকে নিরঙ্কুশ অধিকার করবার মতন এমন সর্বনেশে বিদ্যা তুমি কোথায় শিখলে বল ?” আশ্চর্য একটা মানুষ তুমি ! তোমাকে নিয়ে ভাবতে গেলে আমি কোন কূল পাইনা । মনে হয় এই পৃথিবী গ্রহটিতে আমিই একমাত্র প্রাণী,চিরবিরহী এবং তুমিই একমাত্র আশ্রয় ! কেন এমন হয় বলতো ? গত কয়েকদিন ধরে তোমার দুটো গান শুনছি, “আমায় বোলো না গাহিতে”, “হার মানা হার পড়াবো তোমার গলে।”


আচ্ছা আমার মত তুমিও এক মানুষ,তোমার ভেতরের কোথায় এত মায়া,এত প্রেম,এত অনুরাগ,এত ভক্তি,এত করুণা লুকিয়ে ছিল ? কিভাবে,কেমন করে পেরেছ তুমি ? অনুভূতির এবং চেতনার এমন আত্মিক গভীরতার কোন স্তরে গেলে মানুষ রবিঠাকুর হয়ে উঠে ? অথচ মানুষ তুমিও,সংসারধর্ম তোমারও ছিল,দীনতা ছিল,হীনতা ছিল,ভুল ছিল,পরাজয় ছিল,লজ্জাও ছিল...ছিল চরম আর্থিক অনটনও,তবুও কোন প্রেরণার বলে, কোন শক্তির জোরে মানুষ হয়েও তুমি ভাবের পর্বত হয়ে উঠলে ?


জান,মাঝে মাঝে আমার মনে হয় এই বাংলায় জন্মানোটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি । বাকি জীবনটাতে যতই প্রাপ্তিযোগ ঘটুক না কেন,কোন প্রাপ্তিই আমাকে এতটা মহিমাময়,বীর্যবান করে তুলবে না । এই কি ভাগ্য ? এই পরম ভাগ্যের নিয়ন্তা যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি তাঁর কাছে বশ্যতা স্বীকার করছি ।


সাংসারিক অবগুণ্ঠন খুলে তোমার সৃষ্টিতে অবগাহন করলে আমার আর ফিরতে ইচ্ছে করে না । মনে হয় তলিয়েই যাই,তলিয়েই যাই অন্তহীনভাবে । শেষ সীমায় পৌঁছে দেখি কোনখানে,কোথায় “সীমার মাঝে অসীম তুমি” । আমার নিজেকে কখনো একা মনে হয় না , মনে হয় না কারণ আমি জানি যার ভেতরে আস্ত একটা রবীন্দ্রনাথ আছে,তাঁর কোন কিছুকেই ভয় পাবার দরকার নেই । সে তো জানেই মূলমন্ত্রটা, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে” । পৃথিবীতে খুব সম্ভবত শক্তিশালী বিশ্বাস হল এটাই বিশ্বাস করা যে, আমার সত্তার ভেতরে কিছু একটা আছে যা অবিশ্রাম আমাকে গান শোনাতে থাকে,আমার একান্ত ভেতরের ঘুমজাগানিয়া আমাকে জাগিয়ে তুলবে,ভেতরের দুখজাগানিয়া সদাই আমাকে জাগ্রত রাখবে । এই অপরাক্রমশালী বিশ্বাসের প্রাচুর্যতা আমাকে কখনোই দারিদ্যপীড়িত করে না । এই বিশ্বাসের জোরেই আমি ধনী ।


মাঝে মাঝে তোমাকে স্বশরীরে দেখতে খুব...খুব ইচ্ছে করে । কল্পনা করার চেষ্টা করি তোমার যাপিত জীবনের দিনগুলোকে । কেমন করে লিখতে তুমি, “তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী”, কেমন ছিল তোমার কন্ঠস্বর,কেমন ছিল তোমার পুরুষোত্তম রূপমাধুর্য ।
শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বারবার করে ঘুরে দেখেছি,কল্পনায় ধরতে চেষ্টা করেছি ঠিক এই জায়গাতেই বসে তুমি লিখতে ...লিখতে লিখতে ক্লান্তিদোষ পেয়ে বসলে ওই কার্নিশের দিকে চেয়ে থাকতে ,অথবা বারান্দার রেলিঙ ধরে তাকিয়ে থাকতে নদীটির দিকে । খুব কি বিষণ্ণ ছিল সময়গুলো নাকি উচ্ছ্বল,সৃষ্টিময় ? আমি কোনওদিন জানতে পারবো না,আমি জানতে পারবো না আমার প্রাণের মানুষটার দেবতার মতন শরীরটা ওই কৃষ্ণকায় খাটটার কোন পাশ ফিরে ঘুমোতো ! সে কি স্বপ্ন দেখত ? বুক-মুখ শুকিয়ে যাওয়া কোন দুঃস্বপ্ন নাকি আতিশয্যভরা কোন সুখস্বপ্ন ? মাঝে মাঝে তুমি কার দেখা পেতে ঠাকুর ,প্রাণের ঠাকুর ? কোনদিন তা জানা যাবে না ! এক হিসেবে বোধ হয় এই-ই ঠিক । কিছু আকাঙ্ক্ষাকে কখনোই পূর্ণতা দিতে হয়না,তাহলে কৌতুহল মিটে যায় । আর যেখানে কৌতুহল মিটে যায় সেখানে কোন কল্পনা থাকে না,কোন ভাবালুতা থাকে না,সৌন্দর্যতো থাকেই না । তোমাকে দেখতে না পারার এই দুঃখটাই তাই আমার সুখ,পরম সুখ,নিখাদ সুখ,অটুট সুখ । তোমার স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোই তাই আমার ভাবের তীর্থ,সারাজীবনের আবিষ্কার-অন্বেষণ নেশা । পৃথিবীর আর কোন কিছুই আমাকে এতটা ভাবায় না,যতটা ভাবায় তোমার গান,কবিতা,গল্প,উপন্যাস এবং সর্বোপরি তুমি ।


মোটে একটা মাত্র মানুষ তুমি,কেমন করে পেরেছ নিজেকে এমন বিচিত্রভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করতে ? কেমন করে পেরেছ চিন্তার গতিময়তাকে স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে ? কোন আশ্চর্য প্রাণের অধিকারি ছিলে নাথ ?


ভাবের জগতে ঢুকে রহস্যময় গভীরতার সৌন্দর্যের সাথে সখ্যতা সম্ভব হয়েছে তোমারই কারণে । এই জন্যই বোধ হয় আমার অন্তঃকরণ এতটাই টুইটম্বুর,এই জন্যই বোধ হয় আমার মুখটা কক্ষনোই বিস্বাদ অথবা তেঁতো হয় না । এই জন্যই বোধ হয় সংবেদনশীলতার জ্ঞান এতটাই টনটনে,চৈতন্য বোধ হয় এই জন্যই জাগ্রত ।


আচ্ছা,পুনর্জীবন বলতে কি কিছু আছে অথবা দ্বিতীয় জীবন,নয়তো নতুন জীবন ? যদি থেকেই থাকে তাহলে কেমন রকম সেই জীবন ? আগের জীবনের স্মৃতিগুলোই কি নতুন জীবনের স্মৃতি নাকি স্মৃতিগুলোও নতুন জীবনের মতই নতুন ? আমার খুব কষ্ট হয় ঠাকুর,তুমি জানলে না,জেনে গেলে না,আর কোনওদিন জানবে না,যে পৃথিবীতে তুমি দীর্ঘ দিবস-রজনী বাস করে গেছ,সেই পৃথিবীতেই একটা পাগল আছে ! যার কাছে তুমিই সত্য,সত্যই তুমি,তুমিই ভবজলধিরত্নম । একে কি অবসেশন বলা যাবে ? বৈকল্য ? অন্ধত্ব ? হোক সেটা রোগ বা মানসিক বৈকল্য,হোক সেটা দৃষ্টিহীনতা,এই নিয়েই আমি । আমার সবচেয়ে বড় সত্যি এটাই ।

আমি তো গোটা পৃথিবীকেই আপন করে নিয়েছি,গোটা পৃথিবীটাই তো আমার বাস,কেন একটা ক্ষুদ্র বিন্দুতে আঁটকে থেকে সংকীর্ণমনা হব বল ? কিসের অভাব আমার ? চিরবাস্তবিক চাহিদার সংকট বিহ্বলতাই কি জীবনের শেষ কথা,বেঁচে থাকার অনিবার্য সিদ্ধান্ত ? এর বিকল্প নিরাভরণ বলতে কি কিছুই থাকবে না ?


যাই হোক,এরকম জটিল সমীকরণে মগ্নতা মুলতবীই থাক আপাতত । এখন প্রয়োজন বিশ্রাম,শয়ান,নিদ্রামগ্নতা...ঘুমজাগানিয়ারা,দুখজাগানিয়ারা ঠিক সময়ে এসেই গান শোনাবে... ঘুম ভাঙাবে ।


তুমি তো একজন মানবদেবতা । কি বলে তোমাকে আশীর্বাদ করা যায় বলতো ? তবুও তুমি মানুষই হও আর দেবতাই হও,কোন এক দুর্বল মুহূর্তে যখন অবসন্ন প্রাণে শ্বাসের কষ্ট হবে তখন আমার আশীর্বাদ তোমার কাছে পৌঁছবে । ভয় কোরো না,ঠাকুর । ভয়কে জয় করাই তোমার ধর্ম । আমরা পাশাপাশিই আছি এর চেয়ে বড় সত্য আর কি হতে পারে ? সত্যই শক্তি ।



হৃদয়ে হৃদয় আসি মিলে যায় যেথা
হে বন্ধু আমার,
সে পুণ্যতীর্থের যিনি জাগ্রত দেবতা
তারে নমস্কার ।।
.
.
.
.


পথযাত্রী জীবনের দুঃখে সুখে ভরি
অজানা উদ্দেশপানে চলে কালতরী
ক্লান্তি তার দূর করি করিছেন পার
তারে নমস্কার ।।
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×