somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিং খান, স্মার্ট পিয়াল আর মাইকেল জ্যাকসনের গল্প

২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বন্ধু পিয়াল। কৃষ্ণবর্ণ হলেও আমাদের মধ্যে সবচেয়ে স্মার্ট সে-ই। ক্লাস সিক্স থেকে একসাথে পড়ছি আমরা। তখন থেকেই সে শাহরুখ খানের ভক্ত। বলা যেতে পারে অন্ধ ভক্ত। শাহরুখ খানের বউকে নিয়েও কিছু বলা যেত না তার সামনে। আরিফ একদিন বলেছিল, ‘শাহরুখ এইটা কী করল? বিয়া করল কারে? গৌরি তো কালো’ পিয়াল তেলে বেগুনে জ্বলে বলল, ‘তোর দাঁতের চেয়ে সাদা আছে, ছাগল’

পিয়াল বড় হয়ে কিং খান হতে চায় আমরা জানতাম। তাই আমরা ওকে কীভাবে শাহরুখের মত হওয়া যায় তার টিপস দিতাম। সাথে থাকত কিছু তেল মাখন “দোস্ত, তুই তো পুরাই কিং খান” এসবের পিছনে খুব মহৎ উদ্দেশ্য ছিল বলা যাবে না। এই সামান্য তেল মাখনের বিনিময়ে আমরা পেতাম কোক পেপসির স্বাদ।

কিন্তু পিয়ালের চোখ খুলল ক্লাস এইটে উঠে। ও বুঝতে পারল আসলে শাহরুখ হয় লাভ নেই। ওকে হতে হবে স্মার্ট। আমরাও বুঝতে পারলাম পিয়ালের মত প্রতিভাবান একটা ছেলেকে শুধুমাত্র কিং খানের মধ্যে বন্দি করে রাখা উচিত হবে না। আমরা সব বিখ্যাত গায়ক নায়কের সাথে ওর সাদৃশ্য খুজে পেতে লাগলাম। সে ফুটবল খেলে বেকহামের মত, গান গায় ব্রায়ান অ্যাডামসের মত আর সব কিছু মিলিয়ে সে তো ‘পুরাই কিং খান’ আর এত বড় সেলেব্রিটি হওয়ায় বাকি সবাই পিয়ালের বন্ধু। আমরা ওকে স্মার্ট হওয়ার উপায়ও বাতলে দিতাম। আপাতত চুলে স্পাইক করতে হবে। আর ইংলিশ কপচাতে হবে। পিয়ালও আমাদের কথা মত প্রতিদিন স্পাইক করে আসত চুলে আর স্যারদের বেতের বারি খেত পাছায়। ততদিনে কোক পেপসি পর্যায় পার করে আমরা ফাস্টফুডে চলে এসেছি।

মাঝে কেটে গেছে পাঁচ বছর। কিং খানের ভাব বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়েছে। কলেজে ওঠার পর থেকেই যদিও আমাদের এড়িয়ে চলা শুরু করেছিলেন তিনি, ইদানিং আর আমাদের আড্ডায় আসতেনই না। কারণ, প্রতিদিনই তার সি এস ই ল্যাব থাকে। আর ভার্সিটিতেও তার অনেক কাজ। অটোগ্রাফ দিতে দিতেই তো প্রতিদিন তার ২/৩ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। যাই হোক, আড্ডায় না আসায় মধ্যে কিং খানের উপর আমরা মোটামুটি বিরক্তই ছিলাম।
হঠাৎ গত মাসে আমাদের কথা মনে পড়ায় সি এস ই ল্যাব বাঙ্ক দিয়ে আমাদের আড্ডায় চলে এলেন কিং খান। আমরাও ভাব করলাম মহা খুশি তাকে পেয়ে। “ছবি তোল, ছবি তোল” রব পড়ে গেল সব দিকে।

‘আপনি তো পুরা বেকহামের মত হয়া গেসেন, তো আপনার বাচ্চারা কেমন আছেন?’ রাতুল জানতে চাইল কিং খানের কাছে।
‘কী যে বলস না রাতুল। আমি বেকহাম হইতে যামু ক্যান? বেকহামের চুল কি আমার মত লম্বা?’ পিয়াল এমনভাবে কথাটা বলল যেন চুল বড় হলে বেকহামকে দেখতে পিয়ালের মত লাগত।
হঠাৎ নিবিড় বলে উঠল, ‘দোস্ত, মাইকেল জ্যাকসনের কী হইল? তুই থাকতে ওর ডাক্তার ওরে মারল ক্যামনে?’
‘কি জানি। আমার সাথে তো ওর সম্পর্ক ছিল না খুব ভাল’
‘কী কস, তুই না মাইকেল জ্যাকসনের কত ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলি? তুই না থাকলে তো ও তো সারাজীবন কালোই থেকে যেত ’
‘মানে?’ পিয়াল বুঝল না।

তারপর আমরা নিবিড়ের মুখে শুনলাম পুরো গল্প,
মাইকেল জ্যাকসন আর পিয়াল খুব ভাল বন্ধু। বেচারা জ্যাকসন এত কনসার্ট ফনসার্ট করে, গান টান গায়, কিন্তু কালো বলে কেউ ওকে পাত্তা দেয় না। তো জ্যাকসনের এই অবস্থা দেখে পিয়ালের মায়া হল। পিয়াল একদিন জ্যাকসনকে ওর বাসায় ডেকে নিয়ে বলল, ‘তুই আমার চামড়া নিয়া নে। আর তোরটা আমাকে দে। তোর সাদা চামড়া দরকার’
জ্যাকসন ফরসা হল। আর পিয়াল জ্যাকসনের চামড়া নিয়ে হয়ে গেল কালো। এম্নিতে পিয়াল আগে ফরসা ছিল।
আমরা পিয়ালের এই মহান আত্মত্যাগের কাহিনী শুনে অভিভূত হয়ে গেলাম। আর অজানা কারণে পিয়াল গেল খেপে। আমরা বুঝতে পারলাম না অকারণে কিং খান কেন আমাদের উপর এত রাগ করলেন।

কিং খান আর আসেনি আমাদের আড্ডায়। হয়ত তার সি এস ই ল্যাব থাকে। তবে আমরা মাইকেল জ্যাকসনের চামড়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটাকে আজো মিস করি।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×