somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম কি যৌন হয়রানি করার অনুমতি দিয়েছে?

০৭ ই মার্চ, ২০১২ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে “অই ছেড়ি ওড়না গলায় না, বুকে দে কামে দিব” টাইপের পেজ খুবই জনপ্রিয়। আরো কয়েকটা পেজ দেখলাম এই টাইপের। যেমন “উল্টাপাল্টা ড্রেস পরিহিত নারীদের ইভ টিজিং করার সুযোগ করে দেয়া হোক” বা “উত্ত্যক্ত হওয়া বেহায়া মেয়েদের মৌলিক অধিকার, আসুন তাদের অধিকার সংরক্ষণ করি” এসকল পেজের কর্মকাণ্ড পর্ণ সাইটের চেয়ে খুব উন্নত কিছু নয়। বিশেষ করে “অই ছেড়ি......” পেজটিতে পোস্টকৃত ছবি গুলো আর তার কমেন্ট গুলো দেখলে সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকে না। এই সকল পেজের সমর্থনকারী লোকের সংখ্যাও কম নয়। অই ছেড়ি...র প্রায় ১০ হাজার, উল্টাপাল্টা......য় ৫ হাজারের বেশি, আর বেহায়া...... তে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সমর্থন জানিয়েছে।

এদের সকলের কথা প্রায় একই। মেয়েরা ইসলামী আইন মানে না, পরদা করে না। আমরা কেন তাহলে তাদের হয়রানি করব না। এটা আমাদের দায়িত্ব। আমি আরো অবাক হই যখন সহপাঠীদের মধ্যেও প্রায় একই মানসিকতা দেখি। এক সহপাঠী বলছিল ইভ টিজিং (যৌন হয়রানি) এর জন্য মেয়েরাই দায়ী, কেননা তার ইসলামী আইন মানে না।
এইসকল পেজের ইনফো বা তথ্যে যা কিছুই লেখা থাকুক না কেন তাদের মূল কথা একটাই, “আমরা রাস্তায় নারীদের দেখলে নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারি না, আমাদের পশুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে” কিন্তু নিজেদের সাফাই গাওয়ার জন্য তারা বলে, ওই মেয়েদের ওড়না বুকে থাকে না, তারা নির্লজ্জ, নির্লজ্জ মেয়েদের তো উত্ত্যক্ত করতেই হবে, এটা সবার দায়িত্ব। নিজেদের দিকে তারা একবারও তাকায় না, নিজেদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে না। একজন মানুষকে তার পোশাক আশাকের জন্য, তার জীবনাচরণের জন্য অশ্লীল, কটূ কথা বলার অধিকার কে তাদের দিয়েছে? এদের অধিকাংশই নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে। এবং তারা সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করতে চায়। ওই মেয়েরা পর্দা মানে না বলে তাদের হয়রানি করতে হবে, এ বিষয়ে তারা একমত। ইসলামে কি বলা আছে, কোন মেয়ে যদি পর্দা মেনে না চলে তবে তার দেহের গঠন সম্বন্ধে অশ্লীল মন্তব্য কর? তার বুকে ওড়না না থাকলে তার স্তনের গড়ন নিয়ে কথা বল? তার নিতম্ব দেখে বল যে “খাসা মাল”? ইসলাম কি তাদের সেই অধিকার দিয়েছে? ওই নোংরা কাপুরুষগুলো এর চেয়েও ঘৃণ্য মন্তব্য করে এবং মন্তব্য করা তারা নিজেদের মৌলিক অধিকার বলে দাবি করে। সুযোগ পেলে মার্কেটে বা অন্য কোন জনাকীর্ণ স্থানে মেয়েদের শরীরে হাত দিতেও তাদের বাধে না। কারণ সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করতে হলে রাস্তাঘাটে মেয়েদের শরীরে হাত দিতে হবে।


তাদের বেশীরভাগই নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না। কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তারা নিজেদের জান কোরবান করতে প্রস্তুত। পরিষ্কার করে বললে নিজেদের তৈরি করা পর্দাপ্রথা প্রচলনে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী মেয়েরা বোরকা পরবে, আর পুরুষেরা লক্ষ্য রাখবে তারা ঠিকমত কাপড় পরেছে কিনা। একটু এদিক ওদিক হলেই তাদের শাস্তি হবে।


ইসলামে নারী পুরুষ উভয়কে পর্দা মেনে চলতে বলা হয়েছে। শুধুমাত্র নারীদের জন্য পর্দা নয়। সুরা নূরের ৩০ নং আয়াতে বলা আছে পুরুষরা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। পরের আয়াতে বলা আছে, নারীরা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। এখানে পুরুষের প্রতি নির্দেশ এসেছে আগে, এর অর্থ কি এই না যে পুরুষদের নিজেকে সংযত রাখা অধিক গুরুত্বপূর্ণ? পুরুষরা কি সেই কাজটি করেন? রাস্তায় দূর থেকে কোন মেয়ে দেখলেই হল, তার দিকে চেয়ে থাকা বেশীরভাগ পুরুষের কাজ। আর তাদের চোখ তো চোখ নয়, স্ক্যান মেশিন, মেয়েদের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তারা তাদের চোখ দিয়ে স্ক্যান করেন। ইসলাম কি পুরুষকে এই অধিকার দিয়েছে? বলা হয়েছে, পুরুষরা যেন তাদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। এর অর্থ কু প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সকল পন্থা যেমন ব্যভিচার, মৈথুন থেকে নিজেদের বিরত রাখা। এসকল গ্রুপের একটিমাত্র সদস্যও যদি বলে যে সে নিয়মিত মৈথুন করে না, তবে আমার উপর যেন আল্লাহর গজব নাজিল হয়।


কামপ্রবৃত্তির প্রথম কারণ দৃষ্টিপাত এবং শেষ পরিণতি ব্যভিচার। ব্যভিচার ইসলামে হারাম। আর নিজেদের দৃষ্টিও সংযত রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দুটিকেই হারাম করে দেয়া হয়েছে। ফলে এই দুয়ের মধ্যবর্তী সকলকিছুই হারাম। যৌন উত্তেজক কথাবার্তা, কিংবা স্পর্শও হারাম। সেই অর্থে নারীর প্রতি অশালীন মন্তব্য ও যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করা কি হারাম নয়? নাকি এটি ইসলাম রক্ষার হাতিয়ার?
ইচ্ছাকৃত কোন নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করা নাজায়েজ। হযরত আলি (রা) বর্ণিত হাদিস অনুসারে, “প্রথম দৃষ্টি মাফ, দ্বিতীয় দৃষ্টি গোনাহ”


অন্য একটি হাদিসে আছে, “বেগানা নারীর প্রতি বদ নিয়তে তাকানো হারাম, বিনা নিয়তে তাকানো মাকরূহ” যেখানে নারীর প্রতি দৃষ্টি দিতেও নিষেধ করা আছে সেখানে কোন সাহসে তারা নারীদের বুকের ওড়না আছে কি নাই সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়?


এটি সত্য যে দৃষ্টি চলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু নিজেদের সংযত রাখতে পারাই প্রকৃত ঈমানের পরিচায়ক। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিশাক্ত শর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আমি তার পরিবর্তে তাকে দান করব সুদৃঢ় ঈমান যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করবে” দেখলাম, মন্তব্যও করলাম, সুযোগ পেলে মেয়েদের শরীরে হাত দিয়ে নিজের কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করলাম আর নিজেকে দাবি করি মুসলমান হিসেবে- এর চেয়ে বড় কপটতা (মুনাফিকি) আর কী হতে পারে?

বউ আমার ভার্জিন হতেই হবে- কয়েকজন ধর্মপ্রাণ(??) মুসলিমের সাথে আলাপ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×