বন্ধু~ মানে না কোন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য কিংবা শূদ্র, কিংবা কোন ধনী বা গরীব। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মস্থলে প্রতিনিয়ত নানা মতবাদের নানা ধর্মের মানুষের সাথে উঠা-বসা হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বিচিত্র রকমের মানুষের সাথে পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। খুব কাছের এক বন্ধুর প্রেরণায় এই ছোট্ট একটি লিখা লিখলাম।
ভর্তির দিন, অফিসের বাইরে দারায়া দারায়া বাপের সাথে ঝগড়ায় ব্যাস্ত আমাদের সাকীফ। দেইখা মনে হইলো, পুলাটা বেশ ঠাণ্ডা আর ভদ্র কিসিমের। গেলাম আগায়া, বেশ ভালো ভাবেই আমারে রিসিভ করল। প্রথম দর্শনেই, সাবজেক্ট নিয়া কথা কয়া আমার মাথা ঠাণ্ডা কইরা দিল। বুঝলাম এইটা অন্য জাত। যাই হোক, কিসুক্ষণ আজাইরা পেচাল পাইরা মাথা ঘুরায়া দেখি আমার বাপজান ওর বাপের লগে ইষ্টিকুসুম পেচাল সুরু করসে। বাহ বাহ কইরা উঠলাম। পত্থম দিন কিলাস শেষ কইরা বাইর হইয়া একলগে রিক্সায় উইঠা কই, চল নাস্তা কইরা আসি। সিগারেটে নাকি ভালোবাসা বারে; প্রমাণ পাইলাম এইখানে। দুইজনে তো আমরা মেলা খুশি, পাইসি যে আপন জাত। এইরাম ভাবে চলতাসে এখনো। দুইজন দুইজনরে অনেক লাব করি এখনও
শাহবাগ মোড়ে আইসা দেখি ক্যাম্পাস গরম। নতুন নতুন স্টুডেন্ট; আইডি না থাকায় পুলিশ বাবা কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দিয়া এন্ট্রি দিল না। মলিন বদনে মাথা ঘুরায়া চায়া দেখি এক মাইয়া বাৎচিত করতাসে পুলিশের লগে। নাম তাহার ইরা। টাইম মেশিনে কইরা ২ দিন আগে ব্যাক করাতে সৃতি আমারে ফ্ল্যাশ ব্যাক মাইরা কইল যে, ক্লাসে সাকীফ এই মাইয়ারে দেইখা কথা কইতে চাইসিল। যাহাই হউক, ১ম দর্শনে মাইয়ার চক্কু দৃষ্টি তে আলগা ভয় পাইয়া আর পুলিশের লগে বাতচিত করা দেইখা আমি আস্তে আস্তে কইরা সাইড হইয়া দিলাম সামনের দিকে দৌড়। এখনো অবশ্য দৌড়াইতাসি এই মাইয়ার সামনে খামছি খাওয়ার ভয়ে। এখন আর অবশ্য আগের মত ভয় নাই। যে মাইয়া কিনা আমারে মামা বইলা জান দিয়া দেয়, তারে ভয় পামু কেন। কিন্তুক, এখনও আমারে ঐদিন দৌড়াইসিলাম দেইখা খোঁচাটা জায়গা মত বসায়া দেয়।
পত্থম পিকনিক জামু। "সিগারেটের টানে পাশে আনে"... আবারো প্রমানিত। বাসের মধ্যে এইবার কাসে আইল অপূর্ব দেয়াসলাই খুজতে খুজতে। প্রভার রুপের মত আগুন টা জালায়া দিয়া সেই যে ১ম বর্ষে কাছে টাইনা নিসিলাম, এখনও টানতেই আসি, টানতেই আসি। ও অবশ্য আইতেই আসে, আইতেই আসে। আসাটাই স্বাভাবিক। ভোলা ভালা পোলাটারে খালি প্রভা টাইপ কথা কইয়া স্রিতিকাতর করায়া দেই। ভালাই লাগে
"আরমান... রাখবে বাপের মান।" ডিস্টিং ডিস্টিং টাইপ পোলা। অরে দেইখা কইতে মুঞ্চায়, পোলা তো নয় সে যে আগুনেরি গোলা। ফাঁক (সময়ের ফাঁক) পাইলে আমারে পচাইতে সদা উজ্জীবিত এই মানবটি। বর্তমানে অবশ্য নতুন প্রেমে পইড়া বসন্তের দিন গুনতাসে।
অহহ, রাজুর লাল ব্যাগের কথা কইতেই তো ভুইলা গেসিলাম। ৩য় কিলাসে ১০ মিনিট লেট কইরা আইসে। স্যার জিগায়, থাকো কই... উত্তরঃ লালবাগ। পোলা পিসে ঘুইরা যাইতে যাইতে সবাই চায়া দেখে পিঠে ওর লাল-ব্যাগ। এক মাইয়া ফুচকি মাইরা হাসি দিয়া কয় "হিহিহি... লালবেগ" বাসসস... স্যার সহ পুরা কিলাস হাসি। ওই থেকা এই ভদ্র পোলাটার লগে পরিচয়। যাই কই, তাই শুনে। কিঞ্চিৎ শর্ট হইলে কি হইব, ওর দৃষ্টি সীমা কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ব্যাচের আপুদের দিকে বিস্তৃত। কি লুলামি
একটু জাতীয় হওয়ার চেষ্টা করি সানজানার কথা বলিয়া। চাটগাঁইয়া মাইয়া, পচাইয়া ভারি মজা। পত্থম পত্থম চিপায়-চাপায় বইসা মবিলে বয়ফ্রেন্ডের লগে কথা কইলেও এখন কচ্ছপের খোলস থাকিয়া বাহির হইয়া আমার লগে পচানির তেল তুলার চেষ্টা করে। খালি চাটগাঁইয়া দেইখা, নাইলে কই উরায়া দিতাম
বরিশালের মনুরা কুন জাগায় নাই? তাও একটা না, দুই দুইটা। তাও আবার দুই ভাই। থাকে হলে। মুসফিক সারাদিন ঘুমায় আর সারা রাইত নতুন ল্যাপটপ দিয়া ডাউনলোড করে (কি ডাউনলোডায় সেটা নাইবা বলি ), যার কারণে ওর নাম হইয়া গেসে "খেছি মুসফিক"। আর অন্যদিকে হাসিব হলের রুম দখলে রাখতে ব্যাস্ত সারাদিন। পরীক্ষার সময় তার নকলের বাহারের নমুনা দেখলে স্বয়ং আলফ্রেড নোবেল কবর থেইকা আইসা তারে পুরষ্কার দিয়া যাইত
খুলনার সাইফ বাবা। বিখ্যাত ৪-৪-২-২ থিওরিতে (এই থিওরি এইখানে ব্যাক্ষা করলে সামুর মডুরা আমারে মধু দিয়া ধুয়া দিবে)। চরম সিরিয়াস এক মানব। কোন ধরণের ফাইজলামি করা যাবে না এমনকি এই পোস্ট দেইখা আমারে ফোন দিয়া বলবে "মামা, এইটা কিসু হইলো? আমারে নিয়া এইসব কথা না বললে হইত না?" অথচ আপনারা সাক্ষী থাক্লেন, আমি বেশি কিছুই বলি নাই কিন্তুক আরেকটা ইনফো দেই, টিএসসির কেরাম রুমের কোন গুটি না পাওয়া গেলে সাইফ বাবার সাথে কন্টাক্ট করতে পারেন, ওনাকে আবার সব সময় অখানেই দেখা যায় কিনা
সামনে পিলান করতাসি, সবাই মিলা ট্রেন জার্নিতে বাইর হমু একদিনের। দোয়া রাইখেন।
পুনশ্চওঃ বাস্তব-অবাস্তব, হাসি-কান্না... সব কিছুই একমাত্র কার সাথে শেয়ার করা যায়, জানেন? বন্ধুর সাথে। যাদের কথা বললাম, এরা শুধু আমার বন্ধুই না, খুবই আপনজন। যে কোন সময় যে কোন কারণে ছুটে যেতে পারে বন্ধুতের বন্ধন, তাই বলে কি কেউ নিজেকে বন্ধুদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখে? আরও একজনের কথা লিখতে চেয়েও পারলাম না। কারণ সে ধৈর্য পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে আমার জীবন থেকে ১৮০ ডিগ্রি কোণে বাঁক নিয়েছে।
পরিশিষ্টঃ এই লেখাটি উল্লেখিত সবাইকে উৎসর্গ করে লেখা। ভালো থাকিস তোরা। একদিন হয়ত আমি থাকব না, তখন আমার এই লেখাটি থাকবে।