somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউ এন মিশনঃ কিছু অজানা তথ্য এবং অর্থহীন প্রলাপ

২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটি মূলত একটি শেয়ার করা লেখা। মূল লেখকের অনুমতি নিয়েই লেখাটা শেয়ার করলাম। মূল লেখা হুবুহু দেয়া হয়েছে। মূল লেখার কিছু ছবি নিজস্ব দূর্বলতার জন্যে যোগ করতে পারলাম না জন্যে দুঃখিত।

লেখালেখিতে বরাবরই খুব দুর্বল। তবুও খুব ইচ্ছা ছিল বিষয়টি নিয়ে লেখার। কিন্তু দুর্বল লেখকদের যা হয় আর কি, গুছিয়েই উঠতে পারছি না কিভাবে শুরু করবো। সে যাই হোক প্রথমেই বলে নেই বিষয়টি নিয়ে আমার লিখতে শুরু করার কারন। মিশনে ইতিমধ্যেই ৯ মাস পার করেছি এবং প্রায়শই বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হই। যার বেশির ভাগেরই মূল বক্তব্য হচ্ছে যে , মিশনে আমরা কি আর এমন কাজ করি? মিশনে আমাদের পাঠিয়ে দেশের সরকার আমাদের অনেক বড় উপকার করেছে কিন্তু দেশের তো কোনই লাভ হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

আসলে আমরা অনেক সময় ই অনেক মন্তব্য করে ফেলি মূল বিষয় না জেনেই। আমিও তাই কেউ এই ধরনের মন্তব্য করলে কিছু মনে করি না। ধরেই নেই উনি না জেনেই বলেছেন। তাই ইচ্ছা হল যে এই বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়ে একটা লেখা দেই যাতে যাদের ব্যাপারগুলো জানা নেই তারা জানুক এবং সমালোচনা করলে গঠনমূলক সমালোচনা করুক।

বর্তমানে বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেনা প্রেরণকারী দেশ। যে কারনে ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী ও আমরা পেয়ে গিয়েছি যাদের প্রধান লক্ষ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেনা সংখ্যা কমিয়ে তাদের দেশের সংখ্যা বাড়ানো যার মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো অন্যতম। ইতিমধ্যে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল ও হয়েছে। এবারে আশা যাক দেশ আমাদের জন্য কি কি উপকার করেছে তার বর্ণনায়। মিশন সম্পর্কে সাধারন অনেকেরই ধারনা যে মিশন করলে খুব সম্ভবত এক জন ৫০-৬০ লাখ টাকা পায়। তাদের জন্য জানাচ্ছি যে বিভিন্ন পদবি ভেদে এই পরিমান পুরো বছরে সর্বমোট ১২ লাখ থেকে ২৮ লাখ(আনুমানিক)। হ্যা অনেকেই বলবেন যে এটা কি কম? অবশ্যই না। এটা অনেক বেশি এবং এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক উপকারি, এটা স্বীকার করতে কোন দ্বিধা নেই। তবে একটা ব্যাপার এখানে বলে রাখি পুরো ইউ এন এর মধ্যে আমাদের সামরিক সদস্যদের ই বেতন সব চেয়ে কম, বেসামরিকরা আরও বেশি বেতন পায়। সে হিসেবে যাব না , তবে অবশ্যই মিশন আমাদের জন্য অনেক উপকারি অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায়।

এখন আসি আদৌ আমাদের পাঠিয়ে দেশের কি কোন লাভ হচ্ছে??? নাকি শুধু আমাদের লাভ দেয়ার জন্য মিশনে সেনা পাঠানো হচ্ছে। উপরের অনুচ্ছেদে যা লিখেছে ওই অংশটুকু সবাই জানে এবং সবার সকল মন্তব্য ওই জায়গায় ই সীমাবদ্ধ। এবারে বলছি এই সেনা প্রেরনের মাধ্যমে দেশ কি পাচ্ছে। মিশন এলাকায় কোন দেশ সৈনিক প্রেরন করলে তারা কিভাবে থাকবে তার ২ ধরনের নিয়ম আছে। Wet Lease System এবং Dry Lease System।

Dry Lease System অনুযায়ী সৈনিকদের থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে সকল সুযোগ সুবিধাদি ইউ এন সরবারহ করবে।কিন্তু Wet Lease System অনুযায়ী ইউ এন শুধু সৈনিকদের থাকা এবং খাওয়ার বাবস্থা করবে আর সংশ্লিষ্ট দেশ বাকি সকল সুযোগ সুবিধাদি সরবারহ করবে যার বিপরীতে ইউ এন ওই দেশকে Re-Imbursement সোজা বাংলায় বললে “ভাড়া” দেবে সকল কিছুর জন্য। উপরোক্ত টাকা পাওয়ার জন্য আমাদের দেশ সকল মিশনে Wet Lease System নিয়ে থাকে। যার ফলে দেশের সরকার থাকা এবং খাওয়া বাদে বাকি সব কিছুর বাবস্থা করে এবং এর বিনিময়ে টাকা পায়।

এই টাকা মুলত ৩ টি খাতে সরকার পেয়ে থাকে।

১। ব্যাক্তিগতঃ এই খাতে প্রতি জনবলের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসিক অর্থ পায়।

২। Major Equipment: এই খাতে বিভিন্ন Major Equipment যেমন গাড়ি, এ পি সি , জেনারেটর , Ablution Facility , রায়োট কন্ট্রোল দ্রব্য সামগ্রী ইত্যাদি সচল অবস্থায় থাকার জন্য অর্থ পায়।

৩।Self-Sustainment: এই খাতে একটি ইউনিট সয়ং সম্পূর্ণ থাকার জন্য যা যা দরকার যেমন আসবাবপত্র, বেডিং, ক্যাটারিং সামগ্রী, লন্ড্রি সুবিধা, ফায়ার ফাইটিং সুবিধা , ইন্টারনেট , যোগাযোগ বাবস্থা , পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা , Minor Repair/Minor Engineering ইত্যাদি।

এখন আমি বিভিন্ন খাতে একটি ব্যাটালিয়ন(জনবল=৭৫০) এক বছরে কত টাকা পায় তার একটি হিসাব দিচ্ছি। এরকম ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ১৫-১৬ টি ব্যাটালিয়ন কর্মরত রয়েছে। কোন কোন ব্যাটালিয়ন নিম্নোক্ত হিসাবের চেয়েও বেশি টাকা পায়।তবে এখানে একটি Standard হিসাব দেখানো হয়েছে।

ব্যাক্তিগতঃ

এই খাতে ৭৫০ জনের জন্য প্রতিমাসে সরকার পায় = ৮,৪৮,৪৭৫ USD

সে হিসেবে ৭৫০ জনের জন্য ১ বছরে পায় = ১২ X ৮,৪৮,৪৭৫=১,০১,৮১,৭০০ USD

Major Equipment:

এই খাতে বিভিন্ন Major Equipment যেমন গাড়ি,জেনারেটর,অস্ত্র, এ পি সি, রায়ট কন্ট্রোল দ্রব্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন Equipment মিলে প্রতিমাসে সরকার পায়=৩,১০,০৯৭.৬১ USD

সে হিসেবে বছরে সরকার পায়= ৩৭,২১,১৭১.৩২ USD

Self-Sustainment:

এই খাতে সরকার ৭৫০ জনের ইউনিট কে বিভিন্ন বিষয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকার বিনিময়ে উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন খাতে সর্বমোট হিসেবে মাসিক যে পরিমান অর্থ প্রদান করে তার পরিমান = ২,৪০,৫২৬.৩৮ USD

সে হিসেবে বাৎসরিক প্রাপ্তি = ২৮,৮৬,৩১৬.৫৬ USD

(সুত্রঃ Memorandum of Understanding Between United Nations and Government of Bangladesh এবং COE Manual 2011 Edition)

বি. দ্র.: উপরোক্ত হিসাব সমুহ বিস্তারিত দেয়া হয় নি। ৩ খাতে থেকে প্রাপ্ত সর্বমোট পরিমান দেখানো হয়েছে।বিস্তারিত হিসাব জানার কারো আগ্রহ থাকলে জানানো যেতে পারে।

উপরোক্ত ৩ খাত যোগ করলে ১ বছরে শুধু ১ টি ব্যাটালিয়ন থেকে সরকারের সর্বমোট আয় হচ্ছে = ১,০১,৮১,৭০০.০০+৩৭,২১,১৭১.৩২+২৮,৮৬,৩১৬.৫৬= ১,৬৭,৮৯,১৮৭.৮৮ USD

১ USD = ৮১.০০ টাকা হিসেবে হিসাব করলে সর্বমোট প্রাপ্তি দাড়ায় = ১,৬৭,৮৯,১৮৭.৮৮ X ৮১.০০= ১৩৫,৯৯,২৪,২১৮.২৮ টাকা( একশত পঁয়ত্রিশ কোটি নিরানব্বই লাখ চব্বিশ হাজার দুই শত আঠারো টাকা)

এটি শুধু একটি ব্যাটালিয়ন থেকে সরকারের আয়।আর এই অর্থ পুরটাই জমা হয় বাংলাদেশ ব্যাঙ্কে সরাসরি।এর উপরে সেনাবাহিনীর কোনই হাত নেই। এখন হিসাব করে দেখুন প্রতি বছর এই ১৫-১৬ টি ব্যাটালিয়ন পাঠিয়ে আদৌ সরকারের কি কোন লাভ হচ্ছে???

আর এই অর্থ সমুহের সঠিক প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ইউ এন পরিদর্শন দল প্রতিমাসে আসে এটা নিশ্চিত করতে যে , তারা আমাদের যে যে খাতে অর্থ দিচ্ছে তা সম্পূর্ণ সচল এবং কার্যকর। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃতীয় বিশের একটি দেশ হিসেবে ইউ এন এর সামনে আমরা যা উপস্থাপন করি তা উপযুক্ত প্রমান করতে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়। তবুও আপ্রান চেষ্টা করে যাই যাতে কোন ভাবেই তারা কোন খাতে অর্থ কর্তন না করে, কারন তারা তাদের পরিদর্শনে যে জিনিস কে উপযুক্ত মনে না করবেন ওই জিনিস এর বিনিময়ে টাকা পাওয়া যাবে না। আর তারা এ বিষয়ে ১০০% সঠিক এবং নিশ্চিত না হলে ওই জিনিস কে উপযুক্ত ঘোষণা করেন না। তাই আপাত পক্ষে এই পরিদর্শন দলকে সামলানো হয়ে পড়ে এই বিরাট যুদ্ধ। কারন আমরা তাদের যে ভাবেই হোক প্রমান করার চেষ্টা করি যে এই জিনিস ঠিক আছে এবং এটা দিয়ে আমরা ঠিক ভাবে কাজ করতে পারব কোন সমস্যা হবে না(যদিও সমস্যার কোন শেষ নাই)। এ প্রসঙ্গ কিছুদিন আগে এই পরিদর্শন দলের প্রধান COE Chief Mr.Francis Babtunde বললেন, “ I find Bangladesh troops are the most patriotic nation.The way they try to prove the things in front of us to declare those as fully operational I never found it in any other contingent”

মিশনে কতটা জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয় এটা আমার মনে হয় অনেকেই জানেন। তবে উপরের বিষয়টি হয়ত অনেকের ই অজানা ছিল। আমার এ লেখাটি পড়ে অনেকে অনেকে নেতিবাচক ধারনা ও হয়ত নিতে পারেন যে নিজেদের সাফাই গাওয়ার জন্য লিখেছি। আসলে অনেকটা অভিমান থেকেই এই লেখাটা দিলাম। জীবনের ঝুকি নিয়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে দূর দেশে আছি , এটা যথেষ্টই মানসিক ব্যাথার কারন। তবুও দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য ভালো ভাবে কাজ করার পাশাপাশি একই সাথে দেশের জন্য এই অর্থ সংস্থানে যেন কোন সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে প্রতিটি সেনা সদস্য থাকে সদা তৎপর। এতো কিছুর পরে ও আসলে কোন নেতিবাচক মন্তব্য শুনলে একটু কষ্ট লাগাটা কি স্বাভাবিক না?? আমরা তো এই আপনাদের ই একজন। অন্য দেশের লোকজনের কাছ থেকে শত প্রশংসা শুনলেও আপন লোকেরা যদি নেতিবাচক মন্তব্য করে তা আরও অনেক বেশি কষ্ট দেয়। প্রশংসা না করুন অন্তত নেতিবাচক মন্তব্যগুলো করে আমাদের কষ্ট দেবেন না প্লিজ।



…………রায়হান সোবহান
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×