হন্ন হয়ে নগরীর বাস স্টপ থেকে শুরু করে মরুভূমির মরীচিকার দ্বার প্রান্ত অবধি কাকে যেনো নিজের অজান্তে খুঁজে বেড়াই আমরা। যদিও সে ইতিমধ্যে চিন্তার জগতে বিদ্যমান। মনোবিজ্ঞানীরা একে সাবকনশাস মাইন্ডও বলে থাকেন। মানে চিন্তার জগতে আছে বলেই তো বাস্তবে তাকে খুঁজি আমরা।,তাও কখনো সজ্ঞানে আবার কখনো অজান্তে। এই অস্তিত্ব আসলে ভিন্ন আর কেউই নয়, স্বয়ং মানুষটি নিজে।
আমরা যখন রেগে যাই , খুব হাসি তামাশা করি , কষ্ট পাই ইত্যাদি সময়ে আমাদের সাবকনশাস মাইন্ডে লুকিয়ে থাকা সেই চরিত্রের আচরন প্রকাশ পায়। এই চরিত্র কি করে আচরণ রপ্ত করল সেই প্রশ্ন থেকে যায়।
আসলে আমরা যখন গল্প করি কাউকে নিয়ে বা জীবন সংক্রান্ত বই পড়ি,সিনেমা দেখি ,পথে ঘাটে মানুষের কনভারসেশন দেখি ইত্যাদি করি, তখন আমাদের সবকন্সাস মাইন্ডে লুকিয়ে থাকা সেই অজানা অস্তিত্বে তার প্রয়োজন মত ক্যারেক্টারিস্টিক্স গ্রহণ করে এই সব ঘটনা থেকে । আরো একটু পরিষ্কার করি। ধরুন হলিউডের কোনো রোমান্টিক মুভি দেখতে দেখেতে আমরা কিছুক্ষনের জন্য কোনো ক্যারেক্টারের মাঝে হারিয়ে যাই। সেই সময় আসলে আমাদের ভেতরের সেই অস্তিত্ব হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে সেই মুভির ক্যারাক্টার থেকে। এটা যেকোনো মুভি থেকেও হতে পারে। গল্পের বই পড়েও হতে পারে। বছর খানেক পর হয়ত সেই মুভি বা গল্পের বইয়ের ক্যারেক্টার সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি মনে থাকে না। কিন্তু আমাদের সাবকনশাস মাইন্ড ঠিকই সেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অস্তিত্ব বয়ে বেড়াচ্ছে। যার প্রতিফলন ঘটে যখন আমরা আবেগে আপ্লুত হই।
প্রতিটা মানুষের ভেতরেই এই দ্বিতীয় অস্তিত্বটি খুবই মজবুত ভাবে খুঁটি গেড়ে থাকে। চাইলেও তাকে মুছে ফেলা যাবে না। আর বাস্তবে যখন রক্তমাংসের কোনো মানুষ আমাদের প্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে তখন সেই রক্তে মাংসে গড়া মানুষের ভেতরে কল্পনার সেই অস্তিত্ব (যাকে নিত্য দিন লালন করে এসেছি) কে খুঁজতে শুরু করি। এ যেনো শিমুল বৃক্ষের নিচে পলাশ ফুল খোঁজার মত। আদৌ মিলাতে পারি না আমরা এই দুই জনকে(বাস্তব মানুষ আর কল্পনার অস্তিত্ব) , একটা সময় প্রকৃতির টানাপোড়নে জোর করে হলেও নিয়ম বানাই যে শিমুল বৃক্ষের নিচে এইটা শিমুল ফুলই ছিলো। তখনই সমস্যার শুরু যা এক সময় মানসিক ক্যান্সারে রূপ নেয়। আসলে আমাদের চিন্তার জগতের সেই মানুষ কি আদৌ বাস্তবে বিদ্যমান আছে ? ঠিক একই ভাবে আমাদের প্রিয় ভেবে যে মানুষ এগিয়ে আসে তার চিন্তার জগতের সেই অস্তিত্ব কি কখনোই আমাদের মত হুবহু হতে পারি ? অবশ্যই না।
তাহলে সেই চিন্তার জগতের অস্তিত্ব কে ছিল ?
আমরা যেমন নানান পোশাকে নিজেকে আবৃত করতে পছন্দ করি, তেমনি ভালোবাসা আর বেদনার সংমিশ্রনে এক অদ্ভুত শক্তির প্রভাবে নিজের ভেতরে ভিন্ন এক অস্তিত্বকে নিজের অজান্তেই গড়ে তুলতে সাচ্ছন্দ বোধ করি। এ যেনো আমাদের এক রঙিন বা সাদা কালো ছায়া যাকে আমরা নিত্যদিন সাজাই। আবার একে নিয়ে সমস্যার সম্মুখীনও হই যখন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভেতরে আমাদের সেই কল্পনার অস্তিত্বকে খুঁজতে শুরু করি।
এর সমাধান কি ?
এই অজানা অস্তিত্ব কে তো কখনোই মুছে ফেলা যাবেনা। তবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বৈকি। মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন একজন সাধারণ মানুষ তার চিন্তার মাত্র ১২% নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যাকে কিনা কনশাস মাইন্ড বলে থাকি আমরা। বাদ বাকি ৮৮% হলো সাবকনশাস মাইন্ড। তবে বিজ্ঞানী , দার্শনিক বা মহাজ্ঞানী মানুষেরা তাদের কনশাস মাইন্ডের ক্ষমতা কে কিছুটা এক্সটেন্ড করতে পারতো, পাশাপাশি অবচেতন মনের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো।
আমাদের পারিপার্শিক অবস্থাকে সবসময় পর্যবেক্ষন করতে হবে , খেয়াল রাখতে হবে কোনো অবস্থা থেকে আমার সাবকনশাস মাইন্ড কি পরিমান রিসোর্স এবজর্ব করবে। রাগের সময় বা অনেক কষ্টের মুহূর্তে খেয়াল রাখতে হবে সেই অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা অস্তিত্ব যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে।
আমাদের প্রথমেই মেনে নিতে হবে আমরা প্রতিটা মানুষ অনেক আলাদা চিন্তার অধিকারী। কারো সাথে চিন্তার মিল ঘটতেই পারে আর সেই মিল নিয়েই আমাদের বসবাস, বন্ধুত্ব আর প্রীতির সম্পর্ক।
তবে চিন্তার জগতের অস্তিত্ব কে কারো উপর চাপানো অন্যায়, আবার সেই অস্তিত্বের প্রভাব নিয়ন্ত্রণও জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৫