কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যে আঙ্গুলটা তুলে ফেলেছিল আমার
এখনো সেই হারানো আঙুলের শূন্যস্থান অনুভব করতে পারি।
ওরা চেয়েছিল কবিরা আর না লিখুক
লিখতে গেলে যেন আমার বীভৎস আঙুলের কথা ভেসে উঠে তাদের হৃদয়ে ।
ওরা জানেনা আঙ্গুল হারানোর ব্যাথার চেয়ে কবিতা লিখতে
কবিরা কতই না ভালোবাসে।
চার মাস তেরো দিন পরের কথা
কালো প্যান্ট আর সাদা শার্টের এক ভদ্র লোক আসল
চোট্টার মত হেসে বললো
এই সব বালছাল লিখে নিজেরে কষ্ট দিয়ে কি লাভ মশাই!
আজকে আপনাকে ছেড়ে দিব আমরা
রাষ্ট্রবিরোধী কথা এবার বন্ধ করেন লিখা।
ভোর পাঁচটা বাজে সাইতিরিশ মিনিট
বহু দিন আকাশ দেখি না।
আজ সব বেদনাকে মুক্তি দিয়ে প্রিয়তমার কাছে ফিরব
জড়িয়ে ধরব, ঠোঁটে এক গাদা চুমোয় দুঃখের স্বরলিপি এঁকে যাব।
ক্যাম্পের প্রতিটা দিন কতটা নিগ্রহের স্বীকার হয়েছি
সব খুলে বলব তাকে।
শার্ট খুলে পিঠে আঁকা জ্বলন্ত সিগারেটের দাগ গুলো নিশ্চয়ই
গোলাপের মত চেয়ে থাকবে প্রিয়তমার দিকে।
দুপুর বেলা ঠিক করলাম চায়ের দোকানে যাব,
পথের মাঝেই মুঠোফোনে জানতে পারলাম
বহুকষ্টে পাওয়া চাকরিটা আর নেই।
হতবাক হইনি যদিও।
ওদিকে প্রেমিকার খবর পেতে বিকেল গড়িয়ে গেলো।
খবর পেয়ে বিশ্বাস করতে পারিনি,
মাথা ঝিমঝিম করতে করতে এই ঢলে পরলাম বলে
মনে হলো সেই ক্যাম্পে ফিরে গেছি
উল্টো করে বেঁধে পায়ের পাতায় কেউ লোহা দিয়ে পেটাচ্ছে।
পাগলের মত লাগছে, চিৎকার করতে চাইছে মন।
হাতপা এতটাই কাঁপছে যে সিগারেট মুখ অবধি যাচ্ছে না।
আরো মাস তিনেক পরের কথা,
পৃথিবীটা দিনকে দিন ফিকে হয়ে আসছে।
প্রখর রোদ, ঝড়ো বাতাস,
তরুলতা, সুনীল আকাশ
কিছুই আর ভালো লাগছে না।
সেদিন যখন সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়েছিলাম,
বড়দা কে বলছিলাম
এত ভালো লাগার সমুদ্রটাও আর লাগছে না ভালো।
এই প্যাথোলজিক্যাল গন্তব্য বা গন্তব্যহীন
জীবন বা শূন্যতায় ভরপুর ট্রাম
ছুটে চলছে মুমুর্ষ কারাগারের রেলিং পেরিয়ে
গভীরের রাত থেকে আরো গভীরতম আঁধারে।
নিঃশব্দ বিলাসের রাত আর মৃত যত জোনাক,
সাথে আমি আর তাহারাত, ছুটেই চলছি ,ছুটেই চলছি।
খুঁজে আর পেলাম না কোথাও
খুঁজে পেলাম না হারিয়ে যাওয়া আমাকে।
নিয়ন আঁধারে বুক চিতিয়ে করি গাঢ় উল্লাস।
এ উল্লাস কতটা আহাজারিতে পূর্ন হয়ে আছে
সে কথা আর প্রিয়তমাকে বলতে পারিনি।
যখন পাহাড়িকা থেকে মহেশখালী
লাইট হাউজ থেকে লালবাগ
সব উজাড় করেও কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না আমায়,
তখন মনে পড়ল,
ডোম ঘরে সেদিন আমার লাশ নিতে কেউ আসেনি।
প্রিয়তমাকে ছিড়েবিরে হত্যা করেছে হায়নার দলেরা।
কেউ তার বিচার চায়নি।
আমার শরীরের পঁচা গন্ধে কবিতার লাইনগুলো মুক্তি পেয়েছিল সেদিন।
রাত তিনটে বেজে সতেরো মিনিটে নিয়ে যায় তারা আমার লাশ।
পরিত্যক্ত গেস্ট হাউজে পুঁতে ফেলা হয় অধিক গোপনে।
না চিতায় জ্বলালো না দিলো গোর।
তখন রুদ্রর সেই লাইন মনে পরে যায়
-আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
(তখন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে
"ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক – সকল দেশের সেরা; – )
photocredit duckduckgo
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৩২