একজন শিশু, যে কিনা হবে ভবিষ্যতের এক আলোচিত ধর্ষক, তার বিকৃত চিন্তা করার ক্ষমতাকে ডেভেলপ করার জন্য ব্যক্তি হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই হয়ত কো-অপারেট করে যাচ্ছি তাকে ।
ইসলামিক আলেমদের একটা বড় অংশ ধর্ষণের কারন হিসেবে নারীদের অশালীন কাপড়-চোপড়, চলাফেরা কে দায়ী করে। বহু মডারেট মুসলিম, অমুসলিম এবং নাস্তিকরা কু-চিন্তা ভাবনা বা খারাপ নজরকেই ধর্ষণের কারণ হিসেবে তুলে ধরে। ধর্ষিতার জীবন যাপন নিয়ে করা হয় কাটাছেড়া। তবে ধর্ষকের জীবনযাপন নিয়ে যতটা কাটাছেড়া করার দরকার তা হয়ে উঠে না। "ধর্ষক তো নিকৃষ্টতম মানুষ, তার জীবন নিয়ে কেন ঘাঁটাঘাঁটি করে গন্ধ ছড়াবো ? মল নিয়ে যত ঘাঁটাঘাঁটি হবে ততই গন্ধ ছড়াবে। " হয়ত এমন কিছু কারণেই ধর্ষকের জীবন নিয়ে কেউ আলোচনা করতে ইচ্ছা পোষন করে না। তবে একজন সুস্থ মানুষ ধর্ষণ করতে পারে না। তাহলে কি এমন আলাদা কিছু আছে তার ভেতর, যা কিনা তাকে মানুষ থেকে ধর্ষক নামের পশুতে রূপান্তর করে ফেলে !
১। এক জন মানুষ একদিনেই ধর্ষক হয়ে উঠে না। আপাতত ধর্ষকের মস্তিষ্ককে একটা কালো সুবিশাল অট্টালিকার সাথে তুলনা করতে পারি আমরা। বেশিরভাগ ধর্ষকের ক্ষেত্রে সেই অট্টালিকার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন হয় পরিবারেই। খুব দারিদ্র, সুশীল, আভিজাত্য কিংবা যেই ধরণের পরিবার হউক না কেন, পরিবারের গুরুজনদের মধ্যকার কলহ শিশুদের পাশাপাশি একটা কোলের বাচ্চার মস্তিষ্কেও স্পর্শ করে। একটা অসুস্থ পারিবারিক পরিবেশ, যেখানে বাবা-মা কেও কাউকে সম্মান দিতে আগ্রহী নয়, পারিবারিক অন্যন্য সদস্যরা একে ওপরের প্রতি সর্বদা অপ্রীতিকর আচরনে অভ্যস্ত, এমন একটা পরিবারে যেই শিশু বেড়ে উঠে তার চিন্তার বিকাশের স্থলে কিছুটা, এমনকি কখনো কখনো অনেকটাই প্রভাব ফেলে এই সব ঘটনা। এর থেকে এটা বলা যায় যে সে সকল পরিবারের শিশুরা একটি পূর্ণাঙ্গ সুস্থ মানুষিক বিকাশের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেনা।
২। বেশ কিছুদিন আগে একটি গবেষণার রিপোর্ট পড়ছিলাম (লিংক দিতে পারব না), সেখানে তারা দাবি করেছে, যে সকল শিশুরা খুবই কম বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তারা বড় হয়ে সুস্থ যৌনমিলন নিয়ে চিন্তা করতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়। মানে সেক্সচুয়াল ইম্পাল্স নিয়ন্ত্রণে তারা উশৃঙ্খল হয়ে উঠে। কোলের যে শিশুটা যৌন নির্যাতনের শিকার হল (এমনকি ছেলে শিশুরাও, অতি নিকটাত্মীয় দ্বারা) তাদের মস্তিষ্ক সেই স্টিমুলেট বিহ্যাবিওর ক্যাপচার করে এবং সেই শিশুটি মস্তিষ্কে এই আন-এক্সপেক্টেড বিহ্যাবিওর কে সাথে নিয়েই বড় হয়।
৩। ছোট বেলা থেকে শিশুর যেই সামাজিক পরিবেশে বেড়ে উঠা, সেখানকার মানুষগুলো শিশুর সাথে যদি শিশুসুলভ ব্যবহার না করে রূক্ষ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে তা শিশুর চিন্তাভাবনার সুস্থ বিকাশের জন্য আরো একটা বিশাল বাঁধা। সাথে খারাপ বা পথভ্রষ্ঠ বন্ধুবান্ধব থাকলে তা শিশুর সুস্থ চিন্তা ক্ষমতার বিকাশে অধঃপতনের কারন হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি শিশুকালেই এইসব খারাপ সঙ্গ থেকে বাচ্চারা সেক্সচুয়াল মিসবিহেবিওর সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে খুব কম শিশু আছে যারা বাকি জীবনে এই ধরনের বিকৃত চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
৪। শিশুরা(ছেলে) যৌন নির্যাতিত হয় স্কুলে, মাদ্রাসায়, পরিবারে, আত্মীয়স্বজনদের দ্বারা, এলাকার বড় ভাইদের দ্বারা, শিশুদের কর্মস্থালে, গণপরিবহেন, বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যালয়ে ইত্যাদি জায়গায়। এই ছেলে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার সাথে ঘটে যাওয়া এইসব ঘটনা সবার কাছ থেকে লুকিয়ে যায়। এর অন্যতম একটা কারন সে মনে করে, একজন ছেলে হয়েও পুরুষদের দ্বারা যৌননির্যাতনের শিকার হওয়া বেশি লজ্জার ব্যাপার। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভয় পেয়েও বলে না কাউকে।
একজন মানুষের চারপাশের পরিবেশে যদি অনেক বেশি অনিয়ম আর অবিচারে ঘিরে থাকে তবে সে মানুষটি একটি সুস্থ জীবন ধারার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে বিকৃত চিন্তা করবেই। আমরা এর দায় কি করে অস্বীকার করি। কখনোই ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব হবে না, যতক্ষননা এই রুট লেভেলে আঘাত হানা না যায়।
আমি শুধু মাত্র একজন ধর্ষকের শৈশবে কি কি ঘটতে পারে তা নিয়ে আলোচনা কৰাৰ চেষ্টা করেছি। এর মানে এই না যে প্রতিটা ধর্ষকের শৈশব এমনি হবে। একজন এবিউসড চাইল্ড ফিউচারে কেমন হবে তার থেকে বড় কথা এই অন্যায় বন্ধ করা জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৫