১৭ই এপ্রিল,২০১৩
মাস্টারদা সূর্যসেন হল, রুম নম্বর ১০৪
হাটহাজারী, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আমার প্রিয় মা,
কোন ঠিকানায় লিখলে চিঠি তোমাতে পৌঁছুবে তা আমার জানা নেই।
জ্বরের তাড়নায় চোখে শুধু তোমার কবরের উপরে জেগে থাকা
হাসনাহেনা গাছটাই বারবার ভেসে আসছে।
আরো জেগে আছে এ শহরে ভিড় করা অট্টালিকার মত ব্যথাগুলো।
একটুও উঠে বসতে পারছি না, মা। সমস্ত শরীর ব্যাথায় টনটন করছে।
হাসনাহেনার পাতাগুলো যেন আমার চোখের পাতায় ঝাপটে ধরে আছে।
মা, সেই চোখের জলে তোমার কবরে আষাঢ়ের ঢল নামল বুঝি?
তোমার খোকার পাঁজরের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া
এক অচীন ব্যাথার চিৎকার কি শুনতে পারছো তুমি ?
কত অপমান আর অপদস্তে কাঁদিয়েছি তোমায়।
যেদিন তরকারি ভালো লাগেনি বলে
ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম ভাতের থালা,
সেদিন বলেছিলে "যেদিন থাকবনা সেদিন বুঝবি খোকা। "
সেদিনের সেই স্মৃতিগুলি আজ মস্তিষ্কের লক্ষ কোটি নিউরনে বিস্ফোরিত হচ্ছে
রাত্রিদিন ইন্টারগেশনের বিভীষিকায়।
তীব্র লজ্জায় চোখ জোড়া খসে পড়ছে অবিরত,
চিৎকার করে হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আজ।
মাগো, তুমি সুতার সেলাই হয়ে আমার শার্টের ছেঁড়া বুতম পকেটে ফিরে আসো।
কাকরল ভাজি আর সেই দিনের সেই পুঁটি মাছের থালায় ফিরে ফিরে আসো।
দেখো কতটা জরাগ্রস্ত হয়ে তোমার অসহায় খোকা আজ ডাকছে তোমায়,
তুমি ফিরে আসো মা, ফিরে আসো।
তোমার খোকা আজকাল ভাতের থালায় খাঁমচে ধরে রাখে তোমার সেইসব স্মৃতি,
নক্ষত্র ঢাকা আঁধারে নিঃসঙ্গ উড়োজাহাজের নিয়ন উড়োউড়ি আর ভাবায় না তাকে।
ভীষণ কান্নায় তার বুকের ছাউনির কম্পন, তুমি কি দেখতে পারছো না মা ?
সারা দেশে বসন্ত আসে, আসে মহাপ্লাবন আর টাইফুন,
তবুও তোমার খোকার হাহাকারের মতন যেনো কিছুই নয়।
মা, হলের এই বদ্ধ ঘরে কাতরাচ্ছে আজ তোমার খোকা।
জ্বরের তান্ডবে কতটা করুন উদ্ভাসে
তার হাঁটুজোড়া ভাঁজ করে লাশের মতন পরে আছে,
কেনো আজ আর তুমি মাথায় জল দিচ্ছো না মা ?
যে বৈশাখে তুমি চলে গেলে,
সে বছর ভেঙ্গে পরা জারুল গাছের মত
তোমার খোকার মেরুদন্ড আজ চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
দেখার মত আর কেউ রইল না তার।
মা, তোমার অবাধ্য খোকা আজ
ভীষণ কষ্টে শান্ত মলীন হয়ে স্মৃতিতে জেগে আছে তোমার।
তুমি ফিরে আসো মা,
তোমার খোকার কপালে টিপ্ হয়ে চাঁদের মত ফিরে আসো।
দারুন অসহায় রাতগুলোর আশ্রয় হয়ে ফিরে আসো মা।
ধূসর সমাধি ছেড়ে তোমার খোকার এই জীবন্ত সমাধিতে ফিরে আসো মা।
তুমি ফিরে আসো।
ইতি
তোমার অবাধ্য খোকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:২৬