somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্সিডেন্ট...পঞ্চাশ টেহা!

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অলস বিকেল। বিল্লালের দোকানে চা খেতে খেতে খবরটা শুনলো মজনু। কালীয়া রোডে বিশাল একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি!

হন্তদন্ত হয়ে সে পথেই যাচ্ছিলো মদন আর মতিন। এত বড় একটা এক্সিডেন্টের ঘটনা শান্ত গ্রাম ইমানপুরের জন্য বড় খবর। মজনুকে দেখে হাক ছাড়ে মদন-
-ওই মইজনা, এক্সিডেন্ট হইছে শুইনছোস?
--হ।
-যাবি না দেখপার?
--না।
-ক্যা? এক্সিডেন্ট কি তোর ঘরের ছামাত রোজকার অয়নি?! ব্যাটা জমিনদার। ল যাই দেইখ্যা আই। ষাইট্টা মরছে নাহি শুইনলাম।

এক্সিডেন্টের খবরটা শুনে আসলে তেমন গা করেনি মজনু। মানুষ তো প্রতিদিনই মরে। এক্সিডেন্টে মরা তো আরো স্বাভাবিক। কিন্তু মদনের কথায় যুক্তি আছে বটে। রোজকার ঘরের দাওয়াও ত আর থেতলানো লাশ থাকে না। তাছাড়া একটা বড় বাস-ও নাকি পুরা পানিতে পরে আছে। বাসের মাথা নিচের দিকে দিয়ে পুরা উলটা হয়ে ডুবে আছে। এই দৃশ্য তো আর রোজ রোজ দেখা যায় না! মদনের পীড়াপীড়ি তাকে ভাবিয়ে তোলে।
--আইচ্ছা চল যাই। মজনু চায়ের দাম দিয়ে উঠে পড়ে।

দ্রুত পায়ে হেটে কালীয়া মেইন রোডে চলে আসে ওরা। রাস্তায় তিল ধারনের ঠাই নেই। হাজার হাজার মানুষ। আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ চলে এসেছে এক্সিডেন্ট দেখতে। দুপাশে পুলিশের দুটি গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এর মাঝে পুলিশ মাইকিং করে মানুষ কে এক্সিডেন্টের স্থান থেকে সরে যেতে বলছে। মাইকিং-এ কি আর কারো কিছু আসে যায়! পিলপিল করে মানুষের স্রোত বাড়ছেই। মজনুরা অবস্থা যা শুনেছিলো বাস্তবতা তার থেকেও খারাপ। ঝিলমিল পরিবহণের বিশাল যাত্রীবাহী বাসটা একটা অটোকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা পানিতে পড়েছে। ভরা বর্ষায় কচুয়া খালের পানি এমনিতেই নয়-দশ হাত বেশি, তারমধ্যে গাড়ি কাদায় ডেবে গেছে। এর মধ্যেই একটা বড় টো-ট্রাক গাড়ি পানি থেকে উঠানোর জন্য এসে হাজির হয়েছে। সেটিকে রাস্তার পাশে আড়াআড়ি ঘুরানর চেষ্টা চলছে। গাড়িটাকে দড়ি দিয়ে বেধে টেনে উঠানোর চেষ্টা করা হবে।

এত মানুষের ভীড় ঠেলে কাছে গিয়ে একটা ভালো করে দেখতেই পারছে না মজনু-মতিনরা। মানুষজন-ও কি যেন পেয়েছে একেবারে...ঠায় দাঁড়িয়ে আছে একদম! কেন বাবা দেখা হলে সরে যা। তোর পিছনে মানুষ আছে না! না সেদিকে কারো কোন খেয়াল নেই। মজনু বিরক্ত হয়ে রাস্তার উলটা পাশে চলে আসে। উদাশ মনে বিড়ি ধরায়।
--হালাগো আর কোন কাম নাই... চ্যাগায় খাড়ায় থাকপো খালি—মুখ ভেংচে খিস্তি করে মদন।
-হু। লাইটার দিয়ে মদনের বিড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় মজনু।
--পানিত পড়ার পর-ও অনেকটি বাইচ্চা আছিলো হুনলাম। অহনো মন হয় দুই-তিনটা বাইচ্চা আছে ভিতরে। বিড়ির ভাগ পাবার আশায় গুটিগুটি পায়ে মতিন-ও হাজির হয়।
-ধূরো... এতহন পর বাইচ্চা থাহে নি কেউ? মদন কারো বেচে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়।
--থাকপার পারে- মজনু সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে নারাজ। -ইস্রাফিলের মাইয়াটার কথা মন নাই? পানিত পইরা অজ্ঞান হইছিলে... পরেরদিন সকাল উঠানির পর-ও বাইচ্চা ছিলে।

আরো কেউ বেচে থাকতে পারে কি না এই নিয়ে তিনজন যখন গভীর আলোচনায় ব্যস্ত, তখন মজনু একটা হালকা আহবান শুনতে পায়।

-ঐ এক্সিডেন্ট... এক্সিডেন্ট পঞ্চাশ টেহা! তাকিয়ে দেখে কৃষ্ণ মাঝি ওদের দিকে তাকিয়ে ডাক দিচ্ছে।

এক মূহুর্ত লাগলো মজনুর বিষয়টা বুঝতে। কালীয়া ব্রীজের নিচ দিয়ে খালের যে অংশটা গেছে সেখান দিয়ে নৌকা করে খুব সহজেই এক্সিডেন্টের বাসের কাছে চলে যাওয়া যায়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় হুড়াহুড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে এক্সিডেন্টের বাস উঠানো দেখার জন্য, সেখানে খালের মধ্যে দিয়ে নৌকা করে ওরা চাইলে সহজেই বাসের কাছে গিয়ে পুরা প্রক্রিয়া দেখতে পারে! কৃষ্ণ মাঝি ওদের পঞ্চাশ টাকায় সেই সুযোগ করে দিতে চাচ্ছে।

অভূতপূর্ব সুযোগ। চোখে চোখে কথা হয়ে গেলো ওদের। মজনু দরাদরি করতে বসে।
--তিনজন তিরিশ টেহা দিমু।
- উহু... একেকজন পঞ্চাশ টেহা কইরা। কৃষ্ণ দাত কেলিয়ে হাসে। চাহিদাটা বুঝতে পেরেছে ভালোই।
-- এহ... দেড়শো টেহা তরে কে দিব হুনি। যা ব্যাটা ভাগ আমার এক্সিডেন্ট দেহা লাগবো না।
-আইচ্ছা না গেলেন... কৃষ্ণ নির্বিকার। কালীয়া কলেজের কিছু ছাত্র ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুকছিলো। ওদের দিকে তাকিয়ে কৃষ্ণ বৈঠা হাতে নেয়।

সুবর্ন সুযোগ যে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে সেটা মতিনও বুঝতে পারে। কাছ থেকে এক্সিডেন্ট দেখার জন্য কলেজের ছোকড়াগুলো কৃষ্ণ মাঝিকে জনপ্রতি পঞ্চাশ কেন, পারলে একশো করেও দেবে। টাকার দিকে তাকালে তো আর চলবে না। এমন সুযোগ আর কয়জন পায়!
-আরে যাও কই মিয়া।দ্রুত মতিন রফা করার চেষ্টা করে।-দেড়শো টেহা তো অনেক। লও একশো দেবানে। তিনজনরে এক্সিডেন্ট লয়া যাও।
--উহু একশো হইবে না। দেড়শ লাগবো।
-এই মিয়া টেহা কি গাছের থন পড়ে?-মতিনের সাহায্যে এগিয়ে আসে মদন। একশো টেহা কম কি! কলেজের পোলাপান তোমারে তো দশ টেহা করেও দেবে না মিয়া বুঝো না।

কৃষ্ণ বুঝলো কথা ঠিক। কলেজের ছেলে ছোকড়ারা খুব বেশি টাকা পয়সা নিয়ে ঘোরে না। শেষে তাই একশোতেই রফা হয়।
তিনজনে নৌকায় চড়ে বসে। ওদের ব্রীজের নিচের দিকে ঘুরতে দেখে শ-খানেক মানুষ উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। মতিন বিজয়ের বেশে হাত নাড়ে। মদন উদাস হয়ে আরেকটা বিড়ি ধরায়। আর কৃষ্ণ তার ছোট নৌকার জন্য হা-হুতাশ করতে থাকে। আজএকটা বড় নৌকা থাকলেই তো কত টাকার দান মারা যেতো! ব্রীজের উপরে উৎসুক হাজার মানুষের দিকে তাকিয়ে কৃষ্ণ সবার অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

কালিয়া ব্রীজের নিচ দিয়ে এক্সিডেন্টের জায়গার কাছে ওরা খুব সহজেই চলে আসে। হ্যা এখান থেকে একেবারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। খালের কাদায় একদম সোজা হয়ে গেথে আছে বাসটা। দারুন দৃশ্য! মতিন পানিতে ঝুকে মরা লাশ খুজতে থাকে। মদন মোবাইল বের করে ছবি উঠাতে থাকে। ব্রীজের নিচ দিয়ে নৌকা একটু বের হয়ে আসতেই হঠাৎ দুলে উঠে একদিকে কাত হয়ে যায়। মজনু চিৎকার করে উঠে। তার বসার জায়গার নিচ থেকে হরহর করে নৌকায় পানি উঠছে। মদন-মতিন ও নৌকা ডুবে যাচ্ছে দেখে চিৎকার করে উঠে। কৃষ্ণ এতক্ষণে সৎবিত ফিরে পায়। কিন্তু কিছু বোঝার আগেই নৌকা পানিতে ডুবতে শুরু করে। লাফিয়ে পড়ে পাড়ের দিকে সাঁতরাতে থাকে মজনুরা। পেছনে শুধু কৃষ্ণর টাকা হারানোর আর্তনাদ শোনা যায়।

খালের ঝুম ঠান্ডা পানি থেকে উঠেই ঘরের দিকে রওনা দেয় মজনু। মতিন-মদন পানি থেকে উঠলো কিনা দেখার সময় নেই তার। পাড়ে উঠেই হাত থেকে নৌকার পাটাতনের আলগা কাঠের টুকরাটা ওদের অজান্তে ছিটকে দূরে ফেলে দেয়। এক দৌড়ে নিজের ঘরে এসে মাচান থেকে বৈঠাটা বের করে সে। ঘরসংলগ্ন ঘাটে এসে দ্রুত চোখ বোলায়। হ্যা ওইতো... তার বাবার বড় নৌকাটা কোনায় বাধা আছে। লাফিয়ে উঠে বাইচের মত বৈঠা মারে মজনু। খালের এই শাখা ধরে ব্রীজের উত্তর পাশে যেতে ওর মিনিট পাচেকের মত লাগে। ব্রীজের উপর থেকে একদল কলেজ ছাত্র পরিশ্রান্ত মজনুর দিকে উৎসুক চোখে তাকায়।

হাপাতে হাপাতে মজনু হাক ছাড়ে। --ঐ এক্সিডেন্ট....পঞ্চাশ টেহা!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×