
ছবিটিা বড়াইবাড়ি যুদ্ধের
ভারতীয় কিছু মিডিয়ার বক্তব্য শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। একজন ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞ বলতেছে বাংলাদেশ দখল করার জন্য ভারতের দশ মিনিট সময়ও লাগবে না। ওটা একটা পুচকে দেশ। যুদ্ধাস্ত্রের দিক থেকে সাইত্রিশ নম্বরে আছে আর ভারত ৪ নম্বরে। ভারত এখন সুপার পাওয়ার। বাংলাদেশ দখল করার জন্য কয়েকটা পিস্তুলের গুলি ছুড়লেই হবে ট্যাংকও পাঠাতে হবে না। তাদের এরকম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বক্তব্য শুনে বড় চিন্তাই করলাম।
তবে আশার কথা কি জানেন, ভারত এযাবত যতো যুদ্ধ করেছে তার বেশিরভাগই সিনেমায় জিতেছে বাস্তব যুদ্ধে জেতে নাই।বাংলাদেশকে তারা যেভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে পুচকে দেশ মনে করছে বাংলাদেশ কিন্তু এখন সেই পর্যায়ে নাই। বিনা অস্ত্রে ছাত্ররা যদি রাইফেলের সামনে দাঁড়িয়ে দেড় হাজার মরতে পারে ভারত আসলে তারা কি তখন খালি হাতে দাঁড়াবে। মরণ অস্ত্র নিয়েই দাঁড়াবে। বাংলাদেশ দখল করা দাদারা যত সহজ মনে করতেছে অতো সহজ হবে না। দাদারা দূর পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রের ভয় দেখালেও বাংলাদেশের কাছে যে ক্ষেপনাস্ত্র নাই এমন ভাবার কোন কারণ নাই। দূর পাল্লার না থাক স্বল্প পাল্লার হলেও কিছু ক্ষেপনাস্ত্র আছে। সেগুলো দিয়েই সেভেন সিস্টারসহ ঘনবসতির কোলকাতা উড়ে যাবে। বড় বড় বুলি আওড়ানো দাদারা কিরকম যুদ্ধবাজ তা নিচের দু’একটি ঘটনার উল্ল্যেখ না করে পারছি না।
বড়াইবাড়ির যুদ্ধঃ
২০০১সালে রাত ৩টার দিকে ভারতীয় দুর্ধর্ষ কমান্ডো ক্যাটস আই ও বিএসএফ-এর প্রায় ৪০০ সদস্যের যৌথ-বাহিনী বাংলাদেশের বড়াইবাড়ি ক্যাম্প দখল করতে আসে। ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার দৃশ্যটি প্রথম দেখে ঐ গ্রামের মিনহাজ। ভোর সাড়ে ৩টায় মিনহাজ ধানক্ষেতে সেচ দিতে গিয়েছিল। ভারতীয় বিএসএফদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেখে সে দৌড়ে বড়াইবাড়ী ক্যাম্পে এসে খবর দেয়। তখন বড়াইবাড়ি ক্যাম্পে মাত্র দশজন বিডিআর ছিল। ভারতের বিএসএফের সংখ্যার তুলনায় বিডিআরের সংখ্যা খুবই নগন্য। ভারতের বিশাল সংখ্যক বিএসএফ আসার খবরে বিডিআররা ভীত না হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। খবরটি দ্রুত ওয়্যারলেসে পার্শ্ববর্তী হিজলমারী ও খেওয়ারচর ক্যাম্পেও পৌঁছে দেয়।
ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিএসএফরা বড়াইবাড়ী বিডিআর ক্যাম্প দখল করার জন্য পূর্বদিক থেকে গুলীবর্ষণ শুরু করে। বিএসএফ গুলীবর্ষণ করলেও বিডিআর ১০ মিনিট এই গুলির জবাবে কোন প্রকার পাল্টা গুলি না করে চুপচাপ থাকে। বিডিআর চুপচাপ থাকায় ভারতীয় বাহিনী মনে করেছিল বিডিআররা হয়তো বিএসএফের ভয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে। এই ধারনা করেই ভারতীয় বাহিনী পশ্চিম দিক থেকে অসতর্কভাবে বিডিআর ক্যাম্পের দিকে এগুতে থাকলে বড়াইবাড়ী বিওপির চারটি মেশিনগান একসাথে গর্জে উঠে। মিনিটে সাতশ গুলী ছুঁড়তে পারা মেশিনগান থেকে অকস্মাৎ ব্রাস ফায়ারের গুলি খেয়ে ভারতীয় বাহিনী হকচকিয়ে যায়। জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালাতে থাকে। বিডিআরের মেশিনগানের গুলিতে অনেক হতাহত হয়। দুর্ধর্ষ কমান্ডো ক্যাটস আইসহ বিএসএফ-এর ১৬জন সৈনিকের লাশ বাংলাদেশের মাটিতে পড়ে থাকে। কয়েকজন সেনাকে গ্রামের জনগণ ধরে গাছের সাথে বেঁধেও রাখে। ভারত যদিও এতো হতাহতের কথা স্বীকার করে নাই তবে অনেকের ধারনা এই যুদ্ধে ভারতের প্রায় ৭০জন সৈন্য নিহত হয়েছিল।
এই যুদ্ধের সময় বিডিআরের মহাপরিচালক ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান। ফজলুর রহমান আশা করেছিলেন এই অসম সৈনিক নিয়ে যুদ্ধ জয়ের কারণে শেখ হাসিনা হয়তো তাকে বীর খেতাব দিয়ে পুরস্কৃত করবে কিন্তু পুরস্কৃত তো দূরের কথা উল্টো তাকে পদচ্যুত করেছিল। অনেকেই মনে করেন বড়াইবাড়ির সেই প্রতিশোধ স্বরুপ ভারত সুকৌশলে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে।
পাকিস্তানে মিগ-২১ ভুপাতিতঃ
২০১৯সালে ঘটেছিল আরেক ঘটনা। ভারত সরকার পাকিস্তান আক্রমণের জন্য মিগ-২১ পাঠিয়েছিল। পাকিস্তান সীমানায় বিমানটি পৌঁছার পরপরই পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে ভুপাতিত হয়। বিমান থেকে প্যারাসুট দিয়ে পাইলট অভিনন্দন ভার্থামান নামতে সমর্থ হলেও পাকিস্তনি জনতার হাতে আটক হয়। পরে পাকিস্তান সরকার পাইলটের কোন বিচার না করে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। পাকিস্তান থেকে ছাড়া পেয়ে অভিনন্দন ভার্থামান ভারতে ফেরার পর ভারতের গোয়ান্দারা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। যখন তাকে জিজ্ঞেস করল পাকিস্তানে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা এর জবাবে অভিনন্দন ভার্থামান যে জবাব দিয়েছিল তা শুনে ভারতের গোয়েন্দাদের চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল। অভিনন্দন বলেছিল, পাকিস্তানে তাকে নির্যাতন তো দূরের কথা উল্টো তাকে যে পরিমাণ আপ্যায়ন করেছে তাতে সে মুগ্ধ। অভিনন্দনের এই বক্তব্যে পরে ভারতের গোয়ান্দেরা বিস্মৃত হয়ে যায়। তারা মনে করে হয়তো পাকিস্তান অভিনন্দের মাথায় কোন চিপস বসিয়ে দিযেছে তানা হলে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে কেন। এই সন্দেহে তার মাথা স্ক্যান করেছিল।
চীনের কিলঘুষিতে ২০ সৈন্য নিহতঃ
২০২০ সালের চীন ভারত সীমান্তে দুই দেশের সৈনিকদের মধ্যে কিল ঘুষি যুদ্ধ শুরু হয়। তবে এই যুদ্ধে কোন প্রকার আধুনিক অস্ত্র ব্যাবহার করা হয় নাই। শুধু কিল ঘুষি মেরেই চীনা সৈন্যরা ভারতের ২০ জন সেনাকে হত্যা করেছিল। শুধু হত্যায় করে নাই চারজন অফিসার সহ ভারতের দশজন সেনাকে তারা ধরেই নিয়ে গিয়েছিল। পরে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে তাদেরকে চীন মুক্তি দেয়। আরো অনেক যুদ্ধ আছে সেগুলো না হয় নাই বললাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


