somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৪ সিটি নির্বাচন ও কিছু কথা

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ কেউ বলছেন 4-0 White Wash আম্বালীগ!
আবার কেউবা আনন্দে লাফাচ্ছেন যে, হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চলছে বিএনপি এবং ১৮ দল। বলছেন, ২০০৭এর মইন-সিডরে একে একে ক্ষমতা এবং সবগুলো বড় সিটির মেয়র জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আবার সময় নিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছে বিএনপি। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে যাত্রা শুরু করে সিলেট দিয়ে রাজশাহী হয়ে খুলনা দিয়ে বরিশালে এসে পড়েছে। এরপরে গাজীপুর দিয়ে প্রায় ঢুকে পড়ছে রাজধানীতে। তাদের জন্য বলব, এত সুখ সুখ না!

এ পর্যন্ত যা খবর পাচ্ছি রীতিমত ভয়াবহ। ৪ সিটিই প্রথমে কেটে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, আম্লীগের ভোটারদের ২টা করে ব্যালট দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট পোলিং অফিসারের কাছে গিয়ে “শাহবাগ” শব্দটা আওয়াজ করলে তাকে কৌশল করে দু’টি ব্যালট দিয়েছে। বরিশালে এজেন্ট বের করে দিয়ে সীল পিটিয়েছে সরকারী দল। মোট কথা যতরকমের জালিয়াতি, কারচুপি আছে সব করেছে আম্লীগ। শেষ পর্যন্ত ব্যবধানটা কত হবে, তা আন্দাজ করতে পারেনি, তাই গ্যাপ ফিলাপ করতে না পেরে ৪টা সিটিতেই ফলাফল ঘোষনা বন্ধ করে দেয়। বলা হয় কালকে দেয়া হবে ঘোষনা। এরপরে ঘেরাও আর চাপসৃষ্টি করে ফলাফল ঘোষনা করতে হয়। আরো অপেক্ষা করলে বিস্তারিত অনিয়মের খবর পাওয়া যাবে।

আম্লীগ ভোট কেন্দ্র দখল করেছে (বরিশালেই ১২টা কেন্দ্র), এজেন্ট বের করে দিয়েছে শক্তি দিয়ে, জাল ভোট দিয়েছে, সিল পিটিয়ে হাজার হাজার জাল ভোট দিয়েছে। ভোটের ব্যবধান যদি আরো কম হতো, তবে আমাদের প্রার্থী জিততে পারত না। কেন্দ্র দখল করার বিষয়ে বরিশালের প্রিজাইডিং অফিসাররা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দিনভর নগরীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সরকার সমর্থকরা প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া, মারধর, প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রহার, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে। নির্বাচনের আগের রাতে আঞ্চলিক রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ৮৫টি ‘সাংবাদিক’ লেখা স্টিকার সরকারদলীয় প্রার্থী হিরনকে দেয়া হয়। ওই স্টিকারে ব্যবহার করে হিরনের স্ত্রীসহ ক্যাডাররা কেন্দ্রে ঢুকে প্রভাব বিস্তার করে। এসব অপকর্মের পাশাপাশি মেয়র প্রার্থী হিরন এবং তার সমর্থকরা আহসান হাবিব কামাল, সাবেক এমপি আবুল হোসেন খানসহ তাদের অনেক নেতাকর্মীকে মারধর করেছে। এমনকি সরকারী দলের মেয়র প্রার্থী হিরন সাগরদী আলিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে এক ভোটরকে তার মার্কায় ভোট দিতে নির্দেশ দেন, এতে আনারস প্রতীকের এজেন্ট জুবায়ের প্রতিবাদ করলে এতে হিরন ক্ষিপ্ত হয়ে সবার সামনেই জুবায়েরকে চড়থাপ্পড় মারেন। বরিশালে রাত ১২টার দিকে সব কেন্দ্রের ফল চলে আসলেও রিটার্নিং অফিসার মুজিবুর রহমান ফল পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানান, এতে কামালের সমর্থক নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ফল ঘোষণার জন্য রিটার্নিং অফিসারের ওপর চাপ দিতে থাকেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে রিটার্নিং অফিসার রাত সোয়া ১২টার দিকে আহসান হাবিব কামালকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এটা ফল পাল্টানোর অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

রাজশাহীতে লিটন হেরে যাওয়ার পরিস্থিতি হলে চরম অনাসৃষ্টি করেছে, ফল প্রকাশে বাধা দিয়েছে, এমনকি সরকারী দলের তান্ডব ঠেকাতে র‌্যাব অ্যাকশনে যায়। বিএনপির সব সিনিয়র নেতাদের শহর থেকে বাইরে যেতে বলে পুলিশ। খুলনায় সোনাডাঙ্গা থানার হাজী ফয়জুদ্দিন স্কুল ভোটকেন্দ্রের ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে গেছে আম্লীগের লোকজন যা পরে র‌্যাব উদ্ধার করে। রাজশাহী ও বরিশালের রেজাল্ট ঘোষণা আটকে দেয়া হয়। পরে রাত ১১টায় বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে চাপ প্রয়োগ করে ঐ দুই সিটির ফলাফল ঘোষনা করতে বাধ্য হয়।
সিলেটের খাসদবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার সরকার দলীয় প্রার্থী কামরানের সমর্থকদের অতিরিক্ত ব্যালট সরবরাহ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। ব্যালট জালিয়াতিতে তারা কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করেছে “শাহবাগ”, আর তবেই ভোটারের হাতে দেয়া হতো ২টি ব্যালট!! ইভিএম ব্যবহার হয়েছে এমন কেন্দ্রে পোলিং অফিসাররা কামরানের পক্ষে বাটন চাপতে ভোটারদের উৎসাহিত করেন! সিলেটের ৩ কেন্দ্রে ইভিএম জালিয়াতি করে কামরানকে দেয়া হয় ২৫১২ ভোট এবং আরিফকে ১২৮৪ ভোট- যা অসম্ভব, অবাস্তব। আরিফের ফলাফল ঘোষণাও একদিন পিছাতে চেষ্টা করে রিটার্নিং অফিসার। আরিফুল হকের সমর্থকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা নির্বাচন কমিশনারকে ‘ঘেরাও’ করেন। পরে বাধ্য হয়ে কমিশনার আরিফুল হককে সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

তো, কারচুপি আর সরকারী জোর জুলুম ছাড়া নির্বাচনটা হলো কোথায়? কেবল ভোটের ব্যবধান বেশী ছিল বলে কাভার করতে পারেনি সরকারী দল। আগেই আমরা বলেছিলাম, সরকার আগামী সাধারন নির্বাচনের কারচুপির ড্রেস রিহার্সেল করবে এ সিটি নির্বাচনে। কাজেই সাধারন নির্বাচন করলে হাসিনা এর চেয়ে অেনেক বেশী কারচুপি করবে। অতএব, এটা প্রতিষ্ঠিত হলো- হাসিনা জুলুম করে ভোটের ফল পাল্টে ফেলতে চায়, এবং চেষ্টা করে। এ নির্বাচনে আনুমানিক ১০% ভোট কেটে নিয়েছে আম্লীগ। আর তাই এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্দলীয় সরকারের দাবী সুপ্রতিষ্ঠিত হলো। বিএনপির কাছে হাসিনাকে বিশ্বাস করার মত কোনো নূন্যতম কারন নাই! জিতে গেছি, তাই আত্মতুষ্টিতে ভুলে গেলে চলবে না, যে আম্লীগ অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসানোর মত আহাম্মক নয়।

মোটকথা আগামী সাধারন নির্বাচন সুষ্ঠূ করাটা যে কত জটিল আর চ্যালেঞ্জিং হবে - সেটাই জানান দিলো ৪ সিটির নির্বাচন! আর তাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের এ কষ্টার্জিত বিজয় বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলনকেই জোরদার করবে। নবউদ্যমে ১৮ জোট কর্মীরা শেষ পর্যন্ত এটা আদায় করেই নির্বাচন করতে হবে।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×