মাঝ রাতে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরছি । দূর থেকেই ক্ষীণ আলোর নাচন দেখা যাচ্ছে । আমি জানি ওটা কে দাড়িয়ে আছে । নিষ্পাপ মুখায়ব নিয়ে মায়ামতি নবনিতা । বাতির আলো ক্ষীণ হলেও তার চোখে যে দীপ্তি ছড়ায়, তার দিকে আমি কোনদিনই তাকাতে পারিনি । তাই বোধ হয় ভালোবাসাটা আমাদের মাঝে এখনো অধরাই রয়ে গেছে ।
চাঁদনী রাত । উঠুনে বসলাম । এই সময়টায় সে খুব চুপচাপ থাকে । কোন কথা না বলে আমার পাশে এসে বসল । সে আমায় কোনদিন এ ব্যাপারে কিচ্ছু বলেনি । জানি প্রচুর অভিমান নিয়ে থাকে । কিন্তু কখনো মুখ খুলবে না; এয়োও আমার জানা । আমি তার প্রতিটা শিরা-উপশিরা চিনি । এখানেই আমার মরন । খুব বেশি বুঝাপড়ার মাঝে অনুভুতি গুলো মৌন থাকে ।
সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি তার দিকে তাকালাম । সে চাঁদের দিকে তাকালো । আমি তবুও তার দিকেই তাকিয়ে আছি । বুঝার চেষ্টা করছি মানুষ কেনো তার প্রিয়জনকে চাঁদের সাথে তুলনা করে । তারা বোকা বলেই হয়তুবা । আমি মাতাল কিন্তু বোকা নই । আমি বেশ বুঝতে পারি । নবনিতা আমার চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দরী ।
মৃদু স্বরে বললাম, বান না ডাকলেই কি নয় ? কাজল যে লেপটে যাবে ! সে আমার দিকে মুখ ফিরে তাকালো । মায়াবী চোখ । সেই চোখের নীচে যেটা আছে তা ক্লান্তির ছাঁয়া, কাজল নয় । সাহস করে বলে ফেললাম, একটু সর্বনাশের কাজল হলে ভালো হতো । আজ রান্না হয়নি । বুঝতে বাকি নেই কাজলের উৎস আজ মুখ ফিরিয়েছে ।
সে আমার কাঁধে মাথা রাখল । আমি তখনো মাতাল ছিলাম, কিন্তু আমার নেশা ছিলো না । আমি তার হাতটা চেপে ধরলাম । কাজল হাহাকারের রাতজাগা পাখি হয়ে ডেকে গেলো । সে বলল, '' পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই ।'' আমি চুপ হলাম, কিন্তু হৃদয়ে অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে চলল । ঠিক কতোটা সময় আমি এভাবে তার হাত ধরে বসে ছিলাম তার আন্দাজ নেই । কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি সেও কাঁদছিল তবে তা মৌনতার আবরণে ঢাকা ছিল । যেখানটায় কারো প্রবেশ অধিকার থাকে না ।
আমি এখনো মাতাল হই; তবে তার ভেজা চুলের সুভাসে । আজকাল আমার নেশা ঘুরেফেরে আটকে যায় তার কাজল-কালো আঁখি পটে ।
এটা স্বপ্ন ; তবে এখনো আমি তার হাত ধরেই বসে আছি; উঠুনে । চাঁদ রুপোলী হচ্ছে । রাত ভারী হচ্ছে । আমি এখনো তার মুখের পানে চাইতে সাহস করছি না । মাতাল বলেই হয়তুবা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮