নানী জানের চা চক্রের নেমন্তন পাইয়া একটু হেলিয়া দুলিয়া গিয়া বসিলাম টেলিভিশন যন্ত্রখানার সামনে... কোন একখানা চ্যানেলে চলিতেছে বাংলা সিনেমা "মা আমার স্বর্গ"। অভিনয়ে এক সময়কার নামজাদা, পর্দা কাঁপানো নায়ক চাকিব খান। এক সময়কার বলিলাম তাহার কারণ বর্তমানে তিনি জলিল ভাইয়ের কাছে হিট খাইতেছেন। তাহার বিপরীতে নায়িকা পূর্ণিমা। যতখানি দেখিলাম তাহা সকলকে শুনাইবার সাধ জাগিল বিধায় লেখিতে বসা...
পূর্ণিমাঃ (মনে মনে) শ্রাবণ সন্ত্রাসী হলেও তার মন ভালো। সে পড়ালেখায় ভালো ছিল। তাকে যদি বলি আমি তাকে পছন্দ করি না, যদি আমাকে তুলে নিয়ে যায়? তাকে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয় বুঝবে।।
( পূর্ণিমা ওরফে মেঘ... মোবাইল খানা হাতে লইয়া টিপাটিপি করিতে লাগিল... অপরপ্রান্তে তাস খেলায় মগ্ন চাকিব খান ওরফে শ্রাবণ মোবাইল এ মেঘ নাম খানা দেখিয়া তিরিংবিরিং করিয়া ৫খানা লম্ফ দিয়া বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইল। এইখান হইতে আমরা নায়ক নায়িকার চরিত্রের নাম ব্যাবহার করিব)
শ্রাবণ - আমি জানতাম, তুমি আমার প্রেম কে অস্বীকার করতে পারবে না। তুমি ও আমাকে ভালোবাসো । (ইত্যাদি ইত্যাদি)
মেঘ- আমি আপনাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছি। আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
(ইহা শুনিয়া শ্রাবণ দ্বিগুণ লম্ফ দিল... কেন দিল বুঝা গেল কিন্তু এতো লম্ফ দিবার কিছু ঘটিয়াছে কি?)
ঠিক এইখানে আমার নানী জান বাঁধা দিয়া বলিল... "ও এই বুঝি মেঘ?? তা তুমরার কুনো মেঘ আসে নি? থাকলে ক... ব্যাবস্থা করি।। তুমরার ভাইজানেও তো আমারে আনিয়া দেখাইল দেইখা বিয়া করতে পারল। কিতা রে... কস না? মেঘ বৃষ্টি থাকলে দেখা..."
তাহার এই প্রশ্নে আমি কিঞ্চিৎ বিব্রত বোধ করিলাম। নীরব থাকিলাম। কোন উত্তর করিলাম না।। নতুন উদ্দমে পুনরায় সিনেমা দেখায় মনোযোগ দিলাম।
শ্রাবণ - হ্যাঁ। বল কোথায় দেখা করতে হবে?
(অতঃপর কথা শেষ হইলে শ্রাবণ তাহার আড্ডাতে গিয়া তিনগুন লম্ফ ঝম্ফ করিতে লাগিল)
পরেরদিন শ্রাবণ গিয়াছে মেঘের সাথে দেখা করিতে... গিয়াই একখান ছেঁকা খাইল।।
মেঘঃ আমি আপনার কাছে একটা অনুরোধ করতে চাই। আপনি আমাকে মুক্তি দিন।। আমি আমার বাবা মা এর একমাত্র সন্তান। তারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। তাদের মনে কষ্ট দিয়ে আমি কোন কাজ করতে পারব না। আপনি মাস্তান হলেও শিক্ষিত। আপনি কথাগুলো বুঝবেন। তাই অনেক আশা নিয়ে আপনাকে বলা।
( শ্রাবণের তখন কান্নাকাটি অবস্থা)
শ্রাবণঃ আমি তোমাকে কখন ভালবেসে ফেলেছি এটা আমি জানিনা। এটা যেমন আমার হাতে ছিল না। এখন তোমাকে কিভাবে মুক্তি দিব তাও আমার জানা নেই।
(আহ সিনেমাটিক)
মেঘ - জানতে আপনাকে হবেই। আপনি যদি আমাকে মুক্তি না দিতে পারেন তাহলে আমার নিজেকেই নিজের মুক্তির পথ তৈরি করতে হবে।
(এই দিকে চাকিব... থুক্কু বিদ্যুতের বিপক্ষ দলের গুন্ডা পাণ্ডা তাহাকে খতম করিয়া ফেলার উদ্দেশে পিস্তলে সাইলেন্সার লাগাইতে ব্যাস্ত)
শ্রাবণ - ঠিক আছে। তুমি যখন আমাকে ফিরিয়ে দিলে তখন... আমার হাজার কষ্ট হলেও আমি তোমাকে আর ডিস্টার্ব করব না।
মেঘ - ধন্যবাদ। আপনার দেয়া নোট গুলো আমার ভালো লেগেছে। ওগুলো রেখে দিলাম। আর এই নিন আপনার দেয়া মোবাইল।
( মোবাইল বের করে ফেরৎ দেয়। শ্রাবণের তখন হাউকাউ অবস্থা। মেঘ চোখ তুলে তাকাতে পারে না আর। চোখ সরিয়ে নিয়ে ফেরত দেয়)
আচমকা ব্যাটা শ্রাবণ মেঘের উপর উপুর হইয়া তাহাকে লইয়া মাটিতে পরিয়া যায়। শ্রাবণে চাপা পড়িয়াছে মেঘ।
মেঘ- সরেন সরেন।।
(বলিতে বলিতে শ্রাবণের পিঠে হাত দিয়া দেখে রক্ত। তাড়াতাড়ি লইয়া যায় হাসপাতাল। তাহার পর পানি আরও কিছুদুর গড়াইবার পরে তাহাদের মধ্যে মধুর মিলন হইয়া যায়)
ঠিক এইখানে আমি উঠিয়া আমার কক্ষে চলিয়া আসি। মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম যদি চাকিব খানের মত একখান সন্ত্রাসী হইতে পারিতাম। মন্দ হইত না। কে বলে বাংলা সিনেমা বাস্তবতা বিবর্জিত ?? মনে মনে চাকিব খান হইবার স্বপ্ন জাগ্রত হইতে লাগিল। বাংলা সিনেমার জয় হোক...।।
২৬ অক্টোবর। ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:১৭