somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ের মত আপন কেহ নাই, মায়ের কোন দিবস নাই

১৩ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মা, ইচ্ছে করে তথাকথিত মা দিবসের পর তোমাকে লিখছি। মা দিবস না তুমি বোঝ, না আমি বুঝি। না তুমি আমাকে শুনিয়েছ, না আমি শুনেছি। পেটের দায়ে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রিত একটি আধা-সভ্য, আধা-ভন্ড, আধা-শিক্ষিত, আধা-বর্বর ও মোটা দাগে অন্ত:সারশুন্য মেকি অহমিকায় ভরা নকলসর্বস্ব আর্থ-রাজনৈতিক কর্পোরেট ব্যবস্থায় মাস বেতনে কামলা খাটছি। অনেক শব্দ শুনতে মন চায়না, তবু কানে তো তুলো দেয়া যায়না; অনেক দৃশ্য চোখ এড়াতে চায় কিন্তু পলক খুলে যায়; অনেক বাক্য শুনে বায়ুমন্ডল মুচকি হাসে তবু বলি; অনেক লিখার ভন্ডামিতে কি-বোর্ড নিজেই লজ্জিত হয় তবু নিস্পাপ জড়বস্তু মালিকের অংগুলির উপর জোড় খাটাতে পারেনা। সেরকম বাধ্যতামূলক পরিবেশে বছর কয়েক যাবৎ, এবং এ দফায় একটু জোড়ে সোরে, মা দিবস মা দিবস বলে একটা শোরগোল কানে বাজছে। তাহলে গত হওয়া বছরগুলোর কি হবে মা?
মা, যতদুর বুঝেছি আটলান্টিকের উজানের দুই তীরের স্বঘোষিত উন্নত বিশ্ব বস্তুটির পয়দা করেছে। নানাবিধ কাহিনী, মিথ, গল্পের লবণ, মরিচ ও মসলা মিশ্রিত করে ইতোমধ্যে Target Segment এরমগজে Interest Create করতে পেরেছে। এখন শুধু Product Available করার পালা। কার্ড, ফুল, চকলেট, মিস্টি, শাড়ি, চূড়ি, প্যাকেজ ট্যুর, মগ, পেয়ালা, ফুলদানী সম্ভাব্য অসম্ভাব্য অযুত লক্ষ পণ্য অপেক্ষা করছে মা তোমার জন্য। কি মা খুশি?
মা, অসুবিধে কি? একদিন তো তুমি পেলে? একটা ফোন কল, মেসেজ, চিঠি বা একটু সাক্ষাৎ। কম কি? বাদবাকী ৩৬৪ দিন না হয় তুমি Old Lady. পরিত্যক্ত। বাড়তি। বোঝা। ঝামেলা। উপদ্রব। যুবক-যুবতীর বাঁধ ভাংগা যৌবন জোয়ারের মাঝে অনাব্শ্যক উপস্থিতি। খামোকা কি দরকার...? তার চেয়ে ঢের ভাল নয় কি একদিনের হট্টগোল!
মা, ওরা হয়ত ভুলে গেছে তোমার শরীরের একটি নল থেকে অক্সিজেন এসে আমাকে শ্বাস দিত। তখনো আমার ফুসফুসটি চালু হয়নি (নির্মিতব্য অবস্থায়)। তোমার ভাত, মাছ, ডাল, সব্জি, আইসক্রিমের ভাগ চুপি চুপি আমি নিয়ে নিতাম অন্ধকার প্রকোস্ঠে। একটুও তুমি রাগ করতে না। মাঝে মাঝে বোর হয়ে দিতাম এক লাথি তোমার জরায়ু দেয়ালে। তবু তুমি রাগ করতে না। বরং নড়াচড়া না পেলে উদ্দিগ্ন হতে।
মা, আজ বড়সড় এপার্টমেন্টের এক কোনায় থেকেও তুমি অনাহুত। তুমি সেকেলে। বাচ্চাদেরকে গেয়োঁ বানানোর দাগী আসামি। নামি দামি অথিতিদের মাঝে তোমার গেয়োঁ বচন। মান গেল, মান গেল, মা।
মা, আমি কিছুই খেতে পারতাম না। মোটে দাঁতই তো ছিল না। এমন কি খাবারের কথাটা বলার মত ভাষা ব্যকরনও অজানা। তবু তুমি আমার ভাষা বুঝতে। পৃথিবীর শুদ্ধভাষাবিদদের কাছে নিছক কান্না হলেও তুমি বুঝতে মর্মাথ। Carbohydrate, Protein, Fat, Minerals, Vitamins, Water যা যতটুকু লাগে তার প্যাকেজ নিয়ে তুমি এগিয়ে আসতে আমার ঠোঁটের মাঝে। সময় নেই, কান্ডজ্ঞান নেই নির্বোধের মত মল-মুত্র ত্যাগ করে বড্ড বিরক্ত ও বিব্রত করতাম তোমায়। এমনকি তোমার কর্মস্থলে কলিগদের সামনেও। মা, তুমি রাগ করোনা। আজ হয়তো তোমার হটাৎ উপস্থিতিই সে সন্তানকে বিব্রত করবে। তোমার বার্ধ্ক্যজনিত অসুস্থতার দায়দায়িত্ব প্রকৃতি/নার্স/গভর্নেসের হাতে।
মা, তুমি চিনিয়েছ বর্নমালা অ আ ক ১ ২ ৩ A B C যতিচিহ্ন যোগ, বিয়োগ, গুন। তুমি চিনিয়েছ আল্লাহ, রাসুল, পরকাল, দুনিয়া, সত্য, মিথ্যা, ভাল, মন্দ, উপকার, ক্ষতি, বিনয়, নম্রতা। তুমি মুছে দিয়েছ খাদ্যাভাসে অনভ্যস্ত শিশুর নোংরা ওস্ঠদেশ, পাহারা দিয়ে পাঠিয়েছ পাঠশালায়, প্রার্থনায় মগ্ন রইলে যখন আমি নিমগ্ন পরীক্ষালয়ে। পিতার অগোচরে গুজেঁ দিয়েছ বাড়তি জমানো টাকা গুলো। বেচে দিলে প্রিয় হার, কানের দুল, নাকের নোলক, আদুরে গাভী। কাদঁলে বকনা বাছুরটার উছৃংখল পথচলা যতক্ষন না দিগন্তে মেলায়।
মা, তোমার দায়িত্ব শেষ। তোমার ছুটি। পাওনা বেতন ভাতা নিয়ে নিতে পার। এ অফিসে (বাড়িতে) প্রতিদিনকার উপস্থিতি আর কাম্য নয়। তবে বছরে একদিন তোমার স্মরনে বরাদ্ধ করা হল। Alumni Day র মত। মা, তোমাকে নিয়ে সেদিন সব কটি টিভি চ্যানেলে ম্যারাথন রিপোর্ট হবে, মানববন্ধন হবে, র‌্যালী হবে, আলোচনা হবে, জাঁকজমকপুর্ণ ভাবে ব্যাপক মর্যাদাসহ দিবসটিতে ব্যস্ত থাকবেন মন্ত্রী, সচিব, গন্যমান্যরা। বিকেলে ওসমানী মিলনায়তনে তোমাকে শ্রেস্ঠ মা ঘোষনা করে একখানা পদকও ধরিয়ে দেয়া হতে পারে। এসো মা। তৈরী থেকো।
মা, ওদের ভুল বোঝনা। ওরা শিশু। শিশুদের যে যা বুঝায় তা ই বুঝে। মা, লন্ডনে তুষারপাত হলে ওরা ছাতা ও জ্যাকেট নিয়ে বেরুয়। কেন না ওরা চেয়ে থাকে রয়টার, এপি, বিবিসির পর্দায়। ঢাকার চামড়া ছিলা গরম ওদের স্পর্শ করেনা। মা, ওদের দোষ নেই। চামড়া ভোঁতা। কান খাড়া।
মা, অভিমান করোনা। প্রতিদিন আবার ওরা তোমার কাছে আসবে। দিবস টিবস ভুলে যাবে। অফিস শেষে বাসায় গিয়ে আবারো তোমায় বিরক্ত করবে। তোমার চুল ধরে টান দিবে। তোমার কাছে বায়না ধরবে ক্ষীর বানিয়ে দেয়ার জন্য। তোমায় টেনে নিয়ে যাবে স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখানোর জন্য। তোমার কাছে সমাধান খুজঁবে নিযুত সমস্যার। বায়না ধরবে নন্দনপার্ক, মামার বাড়ি, কক্সবাজার, আশুলিয়া নিয়ে যাবার জন্য। ভেবে দেখ এত ধকল তুমি সইতে পারবে কি না? আর, ওরা তো এখন একা নয়। বউ আন্ডা বাচ্চা সমেত!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৮
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×