সংগত কারণেই প্রথম প্রথম দোটানা ভাব থাকলেও, ২০০০ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের স্নাতক চাকুরীপ্রার্থীদের মহা-আখাংকিত কর্মস্থল হয় জিপি। বুয়েট, বিআইটি, আই ইউ টি, আই বি এ, ঢা.বি., চ.বি., জা.বি., এন এস ইউ, আই ইউ বি কিংবা জাতীয় সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা, অ-ব্যবসা, প্রযুক্তি সব রকমের গ্র্যাজুয়েটদের মিলনমেলায় পরিণত হয় জিপি। । বলা চলে বাংলাদেশের চাকুরীর বাজারে রীতিমত সাইক্লোন বইয়ে দেয় জিপি। তা কর্মীসংখ্যা, পদ-পদবী ও বেতন ভাতাদি সব ক্ষেত্রেই। ২০০৭ সালের শেষ নাগাদ জিপির কমপক্ষে স্নাতক লোকসংখ্যা পৌছে প্রায় ৬০০০!!সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ বেতন আমার জানা নাই। বেতন ছাড়াও অন্যান্য ভাতাদি, কাজের পরিবেশ, দীর্ঘমেয়াদী বেনিফিট ইত্যাদি বিবেচনায় বাংলাদেশের সনাতনী চাকরির বাজারে কোম্পানিটী মারাত্নক প্রভাব ফেলে। মাল্টিন্যাশনাল ও ব্যাংক থেকেও দলে দলে লোকজন জিপিতে যোগ দেয়। ঠেলায় পড়ে বেশীরভাগ প্রতিস্টান তাদের বেতন কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনেও বটে!
তবে জেয়াফত বা মেজবান স্টাইলে এভাবে লোকের আমদানীর পেছনে খুব ভাল কোন বিজনেস কেইস ছিলনা। বরং বোকা বিদেশীদের ঠিক পরের স্তরে কর্মরত ধান্ধাবাজ দালাল কিসেমের লোকেরা চাইছিল যার যার পিরামিড বড় করে 'বড় কর্তা' সাজতে। এজন্য খামাকাই রং বেরংয়ের নাম দিয়ে ডিভিশন, ডিপার্টমেন্ট, ইউনিট খোলা হয়েছে- যার অনেক গুলোই পরবর্তীই 'বেহুদা প্রমানিত' হয়।
যথারীতি এর খেসারত দিচ্ছে এখন ভুক্তভোগীরা। ২০০৯ সালের শেষার্ধে 'হে' নামক একটি কনসাল্টিং ফার্ম জিপির মেদ ভূড়িঁর উপর অডিট করে এবং নানান পর্যায়ের সাজেশন দেয় তা হ্রাসের! এ মহা-কর্মসূচীর আওতায় প্রথমে সাইজ করা হয় কমিউনিকেশন্স ডিপার্টমেন্ট। সর্বশেষ খোদ হিউম্যান রিসোর্চ এন্ড এডমিন। গত মাসে এ বিভাগেও কমবেশী ৫০জনকে বিদেয় করা হয়েছে। নানান কর্পরেট 'কায়দায়' ডিরেক্ট সেলস থেকেও শতাধিক লোক বিদেয় করা হয়েছে গত ১ বছর ধরে।
কারা কারা ছাঁটাই হচ্ছে: জি এম, ডিজিএম, ম্যানেজার, তথাকথিত স্পেশালিস্ট, এক্সিকিউটিভ (সাবেক অফিসার) প্রায় সবাই।
লোক খেদানোর জিপি স্টাইল-১: ধরা যাক আপনি একজন ডি জি এম। ১২ বছর ধরে আছেন। ফলে বর্তমান বেতন ২/৩ লাখ টাকা! কিন্তু কাজ করেন ১৫ হাজার টাকার!! মুখ ফুটে কিছু বলা হবে না। আপনাকে ট্রান্সফার করা হবে ঝালকাঠির টি ও হিসেবে!!!
লোক খেদানোর জিপি স্টাইল-২: আপনি বেশ সিনিয়র পজিশনে আছেন কিন্তু তেমন কোন কাজ নেই। আপনার অধীনস্ত ছিল এমন কারো আন্ডারে আপনাকে বদলি করা হবে!
লোক খেদানোর জিপি স্টাইল-৩: আপনাদের গোটা ডিপার্টমেন্টের সবাইকে ওএসডি করা হবে। তারপর নয়া অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আবার এপ্লাই (ইন্টারনাল) করে, ভাইবা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাণিতিক ভাবেই বাহুল্য লোকেরা ঝড়ে পড়বে। সান্তনা পুরস্কার: ৬ মাসের স্যালারী।
লোক খেদানোর জিপি স্টাইল-৪: ২ টি ডিপার্টমেন্ট মার্জ হবে। আপনা আপনি ১ টা মাথা কাটা যাবে। সাথে যাবে কিছু সাংগ পাংগ।
ইত্যাদি ইত্যাদি..............
মিডিয়া নীরব কেন: জিপির এড মিডিয়ার রক্ত। তাই সাংবাদিকরা জানলেও তাদের ম্যানেজমেন্ট এভাবে পায়ে কুড়াল মারবে না!!
এটা ঠিক যে, জিপি তে বেশীরভাগ কর্মী নিজ নিজ যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশী বেতনে কাজ করেন। গার্মেন্টসে ২৫০০০ টাকা যাকে বেতন দেয়া হয় তার কাজের ১০০ ভাগের ১ ভাগ না করেই জিপিতে এ টাকা পাওয়া যায়। ফলে কর্মীদের মধ্যে সাময়িক অহমিকা, ভাব, অপচয়, কর্পোরেট মেকিপনার আধিক্য দেখা যায়। মেয়েদের মধ্যে তা আরো বেশী। তবে এ বয়সে বাংলাদেশে জব লুস করা খুবই মানবিক সংকট। কেননা এটা আমাদের দেশের স্বাভাবিক চিত্র নয়। আর জিপির কাজের বয়ান এমন আহামরি কিছু না যে অচিরেই আরেকটি ভাল কাজ পাওয়া যাবে।
তবু আমরা তাদের সহানুভুতি জানাই, জিপি ম্যানেজমেন্টকে জানাই ঘৃণা! আর বিচারের দাবি জানাই দালালদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৪