somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে জাতির জনক বিতর্ক যে কারণে-

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি সম্পূর্ণ ভাবেই একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি। আওয়ামিলীগ, বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে বিপক্ষে লিখছি না। সত্য বিষয়টি উপস্থাপন করাই শুধু আমার উদ্দেশ্য। আমার এই লেখা কার পক্ষে বা বিপক্ষে যাবে তা আমার ভাবনার বিষয় নয়।

পৃথিবীতে হাজারও জাতি, উপ-জাতি আছে কিন্তু সব জাতি বা গোষ্ঠি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বা প্রতিষ্ঠিত নয়। হাজার বছর সংগ্রাম করেও স্বীকৃতি পায়নি এমন জাতির সংখ্যাও পৃথিবীতে কম নয়। জাতি হিসাবে আমরা বাঙ্গালিরা প্রতিষ্ঠিত এটি আমাদের গর্ব ও অহংকারের বিষয়।

স্বীকৃত বা প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকটি জাতিকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে, যুগে যুগে এই সংগ্রামের নেতৃত্ব যারা দিয়েছেন বা জাতি গঠনে যার অবদান মানুষ সবচেয়ে বেশি মনে করেন, তাকেই জাতির জনক হিসেবে নিজ নিজ দেশের সংবিধানে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আমার আলোচনাটা এখানে নয় আমার আলোচনা হচ্ছে- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, কিংবদন্তি নেতা হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, আমার মনে হয় এ নিয়ে কারোরই বির্তকনেই। তাহলে স্বাধিনতার চল্লিশ বছর পর কেন সংবিধানে জাতির জনক বসাতে হচ্ছে? কেন ১৯৭২ সালের সংবিধানেই জাতির জনক হিসাবে তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি? এই প্রশ্নেরই আইনগত ও প্রকৃত কারন আপনাদের আজ জানাবো-

স্বাধিনতা পরবর্তী বাংলাদেশে যে সরকার গঠন করা হয় বর্তমানের মতোই তা ছিল পার্লামেন্টারি সরকার অর্থাৎ প্রধান মন্ত্রি শাসিত সরকার। ঐ মন্ত্রি পরিষদ শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৭৯২ সালের সংবিধানে জাতির জনক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাম অন্তর্ভূক্ত করার এটাই ছিল প্রধান প্রতিবন্ধকতা। সাংবিধানিক ভাবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রির থেকে প্রেসিডেন্টের পদ উচ্চতর সেহেতু প্রধানমন্ত্রি থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাম জাতির জনক হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হয়নি। আরো সহজ ভাবে বলা যায়- এমন কোন ব্যক্তিকে জাতির জনক হিসাবে ঘোষণা দেয়া যায় না, যার থেকে উচ্চপদস্থ কোন ব্যক্তি ঐ সময়ে থাকে বা রয়েছে।

তাহলে কি এই প্রশ্ন করা যায় জাতির জনক উপাধির থেকে প্রধান মন্ত্রির পদটিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কাছে জরুরি ছিল? ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না’ এটা তাঁর একটা কথার কথা ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই এর উত্তর সম্মানিত পাঠকবৃন্দের হয়তো জানা আছে।

১৯৭৫ সালে এই সমস্যার প্রায় সমাধানই হতে চলেছিল- সংবিধান সংশোধন করে ১৯৭৫ সালে তৎকালিন আওয়ামিলীগ সরকার প্রধানমন্ত্রি শাসিত সরকার থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রূপান্তরিত করে ফেল্লেন, কিন্তু হায়! জাতির জনক বিলটি উপস্থাপনের পূর্বেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে নিহত হলেন। এর পরের ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন, ঐ সব লিখে আপনাদের সময় নষ্ট করবো না।

আজ যদি একজন পাকিস্তানিকে প্রশ্ন করি আপনাদের জাতির জনক কে? তিনি অবলিলায় উত্তর দিবেন- ‌‌'কায়দি-আযম-জিন্নাহ্‌', একজন ইন্ডিয়ান বলবেন- 'মহাত্মা গান্ধি', একনজ মিসরিয় বলবেন- 'সাদ জগলুল', একজন লিবিয়ান বলবেন- 'ওমর আল মুক্তার', একজন ইন্দোনেশিয়ান বলবেন- 'সুকর্ণ', একজন ইসরায়িলি বলবেন- 'ডেভিড বিন গারিয়ান', একজন আমেরিকান বলবেন- 'জর্জ ওয়াশিংটন'................

পৃথিবীর সব জাতিরই জাতির জনক আছে কিন্তু বাঙ্গালি জাতির জাতির জনক কে?

ব্যক্তিটি আওয়ামিলীগ এর হলে বলবেন- কেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
আর ব্যক্তিটি বিএনপি’র হলে বলবেন- আরে রাখেন আপনার জনক-ফনক, জনক দিয়ে কি হবে? দেশের বর্তমান সমস্যা নিয়ে ভাবেন। আমাদের জাতি হচ্ছে যীশূ খ্রীষ্টের মতো, এই জাতির কোন জনক লাগেনা।

অবশ্য দুর্নীতিতে ৬ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের এই জাতিকে ইশ্বরের পুত্র বলার মতো মানুষ আছে কিনা তা আমার জানা নেই বরং পিতৃ পরিচয়হীন সন্তানকে গ্রাম বাংলায় যে নামে ডাকে সেই নামে ডাকার সম্ভাবনাই বেশি।

কিছু দিন পূর্বে আওয়ামিলীগ সরকার বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে জাতির জনক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই সংশোধনের প্রতিক্রিয়ায় বর্তমান বিরোধি দলিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেয়া হবে। বিরোধী দলিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই প্রতিক্রিয়া যৌক্তিক না অযৌক্তিক আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ, বুঝি কম, তাই বলতে পারবো না। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ হয়তো বলতে পারবেন।

এই লেখাটা লিখে খুব ভয়ে আছি। এই ব্লগে এটা আমার তৃতীয় লেখা। আমার দ্বিতীয় লেখা “বরিশাল ও নোয়াখালি অঞ্চলের মানুষদের খারাপ বলা হয় যে কারনে...” লিখে প্রায় জুতা পেটা হয়েছিলাম। এই লেখাটার পর কি হবে তা কে জানে...........!!!!!!!!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৮
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×