somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার গল্প

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাক্তারের চেম্বার থেকে এক বুক তৃপ্তি নিয়ে বেরোয় তৃণা। রাস্তায় বেরিয়ে লম্বা দম নেয়। আশেপাশে রিকশা নেই কোনো। হাঁটতে শুরু করে তৃণা। বুকে নির্ভার স্বস্তি আর মাথায় সামনের দিন গুলোর ভাবনা নিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই ছেদ পড়ে ভাবনায়। পুরুষ কন্ঠে নিজের নাম শুনে মুখ তুলে তাকায়। রিমন।
রিমনের হাজারটা প্রশ্ন। কেমন আছিস? কোথায় ছিলি ? কোনো খোঁজ খবর নেই, একেবারে উধাও? তৃণার ক্লান্ত লাগে। আজকাল একটুতেই ক্লান্ত লাগে খুব।
রিমন ওকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় একটা ক্যাফেতে। মুখোমুখি বসে প্রশ্ন করে 'এখানে কোথায় এসেছিলি?'
ম্লাণ হাসে তৃণা , 'ডাক্তারের কাছে।'
এবার রিমন ভাল করে ওর মুখের দিকে তাকায়, সত্যিই ওকে অসুস্থ দেখাচ্ছে। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিঙ্গেস করে , 'কি হয়েছে তোর?'
তৃনা হাসে। একটু দ্বিধাগ্রস্ত হাসি। ভেবে পায়না সত্যি বলবে নাকি বানিয়ে যাহয় একটা কিছু বলে দেবে।
ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। চমৎকার বোঝাপড়া ছিল দুজনের।পাস করার পর তৃণাই আর যোগাযোগ রাখেনি। কারণ তার আগেই মানুষটা ওর জীবনে আসে। ওর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কানায় কানায় ভরে দিয়েছিল সেই মানুষটা। স্বার্থপরের মত তৃণা ভুলে গিয়েছিল তারা দুজন ছাড়াও পৃথিবীতে অন্য মানুষ ও আছে।
রিমনের সামনে সেই মানুষটাকে ছোট করতে ইচ্ছে করেনা।বলে , 'এমনি জ্বর জ্বর লাগছিল। উঠি রে, ভাল লাগছে না।'
রিমনের প্রশ্নবোধক চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে আসে তৃণা। সত্যি ক্লান্ত লাগছে। হাত বাড়িয়ে একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ে।
বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করেনা, তবু রিকশাওয়ালাকে বাসার দিকেই নির্দেশ দেয়। শরীরটা বিশ্রাম চাইছে। মাথায় আবার ভাবনারা উঁকি ঝুঁকি মারতে শুরু করে। রাস্তায় বেরোলেই ওর এটা হয়, তৃণা আগেও খেয়াল করেছে। এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে যাওয়ার সময়টুকু যখন কিছুই করার থাকেনা, তখন রাজ্যের ভাবনা ওর মাথায় ঘুরপাক খায়। একারণে রাস্তায় পরিচিত মানুষদেরও ও খেয়াল করেনা। কত মানুষ পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কারো মুখই ও ভালো করে দেখতে পায়না।
কিন্তু যেদিন মানুষটাকে প্রথম দেখে , টিপটিপ বৃষ্টির মাঝে, ঘন নীল একটা ফুলহাতা শার্ট গায়ে। চিনতে কষ্ট হয়নি একটুও। অবাক হয়েছিল ওর বাচ্চাদের মত মুখ আর হাসি দেখে। তারপর একের পর এক আরো কতভাবে যে আবিষ্কার করেছে ওকে! হঠাৎ চোখ উপচে কান্না এলো ওর। কি করছে এখন মানুষটা ?
বাসায় ফিরে নেতিয়ে পড়ে বিছানায়। হু হু করে কান্না আসে। ডাক্তারের কাছ থেকে পাওয়া স্বস্তি উধাও। সেখানে জায়গা করে নিতে থাকে শূণ্যতা আর হাহাকার।
আগে যখনই এমন হত, দৌড়ে যেত মানুষটার কাছে। মানুষটা ওকে শক্ত করে ধরে রাখত। ওর মাথায় হাত রেখে বলতো , 'সব ঠিক হয়ে যাবে।'
তৃণা বিশ্বাস করত।কখনো এক মুহূর্তের জন্যও অবিশ্বাস হয়নি ওর মানুষটাকে।কখনো না। যেদিন মানুষটা প্রথম ওকে বুকে নিল, থরথর করে কাঁপছিল তৃণা। তবু একবারের জন্যও কোন প্রশ্ন আসেনি মনে। একবিন্দু দ্বিধাও না।
মনে হচ্ছিল যেন ওর বুকের সাথে এভাবে লেপ্টে থাকার জন্যই তৃণা জন্মেছে , অপেক্ষা করেছে এত গুলো বছর।
ভাবতে ভাবতে আজও থরথর করেই কাঁপে তৃণা। নখের আঘাতে বিছানার চাদর ফালি ফালি। হঠাৎই হুঁশ ফেরে ওর । নিজের একটা হাত নিয়ে মাথায় রাখে। আরেকটা হাত পেটের উপর রাখে ওর বাবুসোনাটার অস্তিত্ব টের পেতে।
ফিস্ ফিস্ করে বলে, 'ভয় নেই তোর ,ভয় নেই।'
ওর ভেতরটা আকুলিবিকুলি করে বাবুসোনাটার মাথায় হাত রাখতে।কিন্তু সেজন্য ওকে অপেক্ষা করতে হবে আরো চার মাস।
আজ ডাক্তার জানিয়েছে ওর গর্ভের সন্তান কে স্পর্শ করবেনা ওর শরীরের মরণব্যাধি। পাঁচ মাস ধরে যে সন্তানকে ও পৃথিবীর আলো দেখানোর স্বপ্ন দেখছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে সেখানে গর্ত খুঁড়তে থাকা ভয় আজ আর নেই।কিন্তু সময়ও যে নেই।
তবু ভয় করেনা তৃণার । ও জানে ওর সন্তানকে ও দেখে যেতে পারবে।হয়তো খুব বেশিদিন থাকতে পারবেনা বাবুসোনাটার পাশে।তবু ওর সমস্ত টুকু দিয়ে ওর জন্য জীবনের পথ খুলে দিয়ে যাবে।
বড় আত্মবিশ্বাসী দেখায় তৃণাকে। মানুষটা ওকে বলেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। বলেছিল সারাজীবন ওর পাশে থাকবে। দুই হাতে ওকে ধরে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত না হৃদস্পনদন থেমে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সময় শেষ হয়।
তৃণা মানুষটাকে বিশ্বাস করে।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×