আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টে একজন মৃত রয়েছেন।ফ্রেন্ডলিস্ট চেক করার সময় যখন তাঁর ছবিটা সামনে আসে,আমি অনেকটা সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকি। সেই মুচকি হাঁসি,এলোমেলো চুল,কালোশার্ট সবকিছুই ঠিকঠাক, এমনকি চোখের উজ্জ্বলতাটাও একটু কমে নি।বিজ্ঞান একটা মুহূর্তকে ধরে রাখার যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারলেও মানুষটাকে ধরে রাখার কোন যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারে নি।ছেলেটা আমার চেয়ে ছোট ছিল,ভাবতে কষ্ট হয়।প্রতি বছর ভার্সিটিগুলোতে অনেকগুলো প্রান ঝরে যায় কয়েকটা কারণে।কিছু সাঁতার না জানার কারণে,কিছু রাজনৈতিক বলি আর কিছু আত্নহত্যায়।আমি নিজেও সাঁতার জানিনা,আমার বাবা সকালের পত্রিকায় কোন পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর পড়লেই সাথেসাথে আমাকে ফোন দিয়ে সাবধান করেন। আমি যে তাঁর কথা খুব একটা এ ব্যাপারে শুনি তা কিন্তু নয়,আমি ঠিকেই পুকুরে গোছল করি,পানিতে নামি।রাজনৈতিক কারণের মৃত্যুগুলো আমার একটু অন্যরকম লাগে।ভার্সিটি লেভেলে বেশীরভাগ স্টুডেন্টকেই রাজনীতি করতে হয় হলের একটা সিটের কারণে।অনেক ক্ষেত্রেই হলে ওঠার আগপর্যন্ত ছেলেটা হয়তো জানেই না,সে যেখানে উঠছে সেই রুমটা কোন দলের কোন গ্রুপের।তাঁরপর সবাই এই যে একটিভ পলিটিক্সে জড়ায় তাও কিন্তু না।একসাথে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া দুটি ছেলে কেবলমাত্র দুটি ভিন্নদল বা দুটি ভিন্নগ্রুপ করার কারণে একজন আরেকজনকে কিভাবে এত বড় শত্রু ভাবে ,যে গুলি চালাতে বা কোপ দিতেও হাতটা একটু কাঁপেনা! অথচ কেউই কিন্তু অস্ত্র চালানো শিখে ভার্সিটিতে ভর্তি হয় না।বাবামার একমাত্র অবলম্বন ছেলেটার ফোন দিয়ে তাঁর কোন বন্ধুই যখন তাঁর মৃত্যু খবর দেয় তখন হয়তো বাবামার কষ্টে আল্লাহর আরশও কেঁপে উঠে।আমার মা বলেন,"কেউ শালা বলে গালি দিলে তাকে দুলাভাই বলে সেখান থেকে চলে আসবে।" আমি আমার মায়ের এ কথাটা রাখতে পাড়ি না,নিজেকে কাপুরুষ মনে হয়।পৃথিবীতে কি একসময় শুধু ক্ষমতাবান আর কাপুরুষ কেবল এই দু শ্রেণির মানুষ বেঁচে থাকবে? ভার্সিটিগুলো মৃত্যুপুরী বা কশাইখানা হয়ে না যাক এই প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০৩