somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আততায়ী প্রেম ....

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




টুং টাং টুং টাং ...... উইন্ড চাইমটা দুলছে ।

শুভ অফিসের জন্য বেরিয়ে যায় সেই ৯টার মধ্যেই । তারপর সংসারের টুকটাক কাজ করতে করতেই সকাল গড়িয়ে দুপুর । এরপর নন্দিতার হাতে অফুরন্ত অবসর । গোটা বাড়িটা খাঁ খাঁ করে । কখনো টিভি ছেড়ে দেয়, কোন গল্পের বই হাতে নেয়- শেষ করা হয়না ।

উইন্ডচাইমের টুং টাং শব্দের সাথে নন্দিতার দীর্ঘশ্বাস মিশে হারিয়ে যায় ....

অভ্যেসবশতঃ ফেসবুকে লগ ইন করে । একটা মেসেজ । অন্যসময় কারো মেসেজই চেক করা হয়না । আজ কি মনে হতে সেটাতে ক্লিক করে ।
"কেমন আছো ?? অনেকদিন পর ..!!!!"
..... ছোট্ট একটা লাইন । সেন্ডার 'অন্যরকম একজন" ।

অদ্ভূত তো !! এ আইডি তো তার লিস্টে অ্যাড করা নেই । প্রোফাইলও অচেনা !!!

ডোরবেল বেজে ওঠে । কুরিয়ারের লোক । শুভ'র নামে একটা পার্সেল । কাগজে সই করে বক্সটা ঘরে এনে রাখে ।
'অনেকদিন পর !!' .. শব্দগুলো মাথায় ঘোরে ।

কে হতে পারে ? মনে হয় পরিচিত । নিজেকে লুকোতে চাইছে । তিতাস ?!! তার সাথে তো ৫ বছর আগেই সব চুকে গেছে । নাহ ! এতোদিন বাদে সে খোঁজ নিতে চাইবে কেন ? অনার্সে তার ক্লাশমেট বিজয়ের সাথে কিছুদিন ভাব হয়েছিল । সে তো কবেই বিয়ে করে বিদেশে সেটেল্ড !!

কৌতুহল আরও বাড়ে । সম্মোহিতের মত ল্যাপটপটা হাতে নেয় ।

টাইপ করে " স্যরি, আপনাকে তো চিনলাম না !!"

কয়েক সেকেন্ডের স্তব্ধতা । মেসেজ 'সিন' হয় । ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে...

: চেনার কথা । একটা সময় আরো অনেক কিছুর সাথে চেনাজানাটুকু আমাদের মধ্যে ছিল ।
: হেঁয়ালি রেখে নিজের পরিচয়টা দিন ।
: আড়ালে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি । তাই ভয় হয়, ধাক্কাটা সামলাতে পারবে তো ?
: মানে ??
: খুব সহজ । আমাকে চিনতে হলে অযত্নে ফেলে রাখা 'স্মৃতি' নামক বদ্ধভূমির অনেকটা দূর হাঁটতে হবে । অবহেলায় ভুলে যাওয়া একটা মুখের ওপর আলো ফেলতে হবে ।
: কথা প্যাঁচাচ্ছেন কেন ? আর আপনি আমাকে তুমি করেই বা বলছেন কেন ?? আজব ?!!
: হা হা .. রেগে গেলে তোমাকে একসময় 'দেবী'র মত লাগতো । ফর্সা কান দুটো লাল হতো । অনেক বর্জনের ভীড়ে এই 'তুমি'টুকুই আমার অর্জণ । এতোদিন ধরে আগলে রাখার ফলে মায়া পড়ে গেছে । হারাতে ইচ্ছে করছে না ।
: আপনি নিজের পরিচয় না দিলে আমি আর কোন রিপ্লাই দেবোনা ।
: হা হা... । ভেবেছিলাম ঠিকই চিনে ফেলবে । আর রিপ্লাই তো তুমি আমার লাস্ট চিঠিরও দাওনি । আজও সেটা পাওনা আছে ।
: কে আপনি ? অনিক ?!
: হা হা ...

গোটা শরীরের প্রদেশজুড়ে ভূমিকম্প ঘটে যায় । বিছানা ছেড়ে এক লাফে নেমে ড্রয়িং এ এসে বসে ।
অনিক !! ১০ বছর পর !! কেন ?!!

একটা একটা করে স্মৃতির অ্যালবাম চোখের সামনে খুলে যায় ।

এইচএসসিতে অনিক ছিল তার ক্লাশমেট । সহজ-সরল-ভদ্র ছেলেটির প্রতি সব মেয়েদের আলাদা একটা উইকনেস ছিল । নন্দিতাও তার সাথে মিশতে চাইতো, এক সময় সম্পর্কটা সহজও হয় । তবে লাজুক ছেলেটি কখনোই নন্দিতার প্রতি তার দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইতোনা । অনেক নাটকীয়তার পর তাদের মধ্যে একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরী হয় । খেয়ালী, ভাবুক অথচ মেধাবী ছেলেটি হয়ে ওঠে নন্দিতার প্রথম ভালোবাসা ।

বন্ধুরা এমনকি গোটা শহর সে সম্পর্কের কথা জানতো । একসময় পরিবারও জেনে যায় । ধর্ম আলাদা বলে বাসা থেকে প্রচন্ড চাপ আসে । সে চাপে আবেগের বাঁধ ভাঙ্গে ..কঠোর হতে হয় ।

নন্দিতাই অনিক কে ডেকেছিল । সব শুনে অনিক কেবল একটা চিরকুট দিয়ে বলেছিল "ভালো থেকো" । চিরকুুটে লেখা ছিল, " তোমাকে কোনদিন হারাতে পারবোনা । হয়তো নিজেই হারিয়ে যাবো । তবুও ..... "

সেই তুমি এতোদিন বাদে !!?? কেন ? কেন ? ঘরের দেয়ালে লেগে সে প্রশ্ন প্রতিফলিত হয় । দু'চোখ প্লাবিত হতে থাকে ।


উইন্ডচাইমটা দুলছে । টুং টাং টুং টাং .......
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:০৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×