somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলা মিত্রের পৈত্রিক ভিটা বেদখল। গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা, চলছে তামাকের চাষ!

১৬ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় কুমার নদের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম, নাম বাগুটিয়া। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানে না তাদেরই গ্রামের একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন এমন একজন বিপ্লবী যাকে নিয়ে গর্ব করে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ। যিনি অধিকার বঞ্চিত গনমানুষের বিপ্লব ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। যার পর্বপুরুষের বসত ভিটে এখনো রয়েছে এই গ্রামে। এমনকি অধিকাংশ মানুষ জানে না, কখনো শুনেনি ‘ইলা মিত্রের’ নাম!


এই বাড়িতেই শৈশব কাটিয়েছেন ইলা মিত্র।
গ্রামটির একটি প্রান্তে মাঠের মধ্যে ঘন জঙ্গলের ভেতর রয়েছে পাশাপাশি দুটো পুরনো বাড়ি। এলাকায় বাড়ি দুটোর একটি হাজী কিয়ামউদ্দীনের বাড়ি এবং অন্যটি হাফেজ সাহেবের বাড়ি নামে পরিচিত। হাজী এবং হাফেজ উভয়েই প্রয়াত, ফলে বাড়ি দুটোতে এখন বাস করে তাদের উত্তরাধিকারীরা। তারাই এই বাড়ি এবং সংলগ্ন কয়েকশত বিঘা সম্পত্তির মালিক।
হাজী কিয়ামউদ্দীনের এই বাড়িটিতেই একদা বাস করতেন নগেন্দ্রনাথ সেন ( এলাকার প্রবীনদের কাছে নগেন সেন নামে পরিচিত ) ও মনোরমা সেন দম্পতি। নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বাংলার একাউন্ট্যান্ট জেনারেল। সরকারী চাকুরীর কারণে নগেন্দ্রনাথ সেনকে চলে যেতে হয় কোলকাতায়। সেখানেই ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম নেন ইলা। জন্মের পর যার নাম রাখা হয় ইলা সেন। আর এই শিশুটিই পরে হয়ে উঠেন বিপ্লবের সূতিকাগার, নাচোলের গণমানুষের 'রানী মা'।
নগেন্দ্রনাথ সেন যত দিন বেঁচে ছিলেন, মাঝে মাঝে আসতেন নিজ বাড়িতে। শৈশবে বাবার সাথে এসেছেন ইলা মিত্রও, থেকেছেন বেশ কিছু কাল এই প্রত্যন্ত পল্লীতে। ফলে বাড়িটি এই মহিয়সীর স্মৃতিবিজড়িত।

নগেন্দ্রনাথ সেনের ছিল বিস্তর ভূ-সম্পত্তি। এই বাড়ির আশপাশের সব জায়গাই ছিল তার মালিকানাধীন। ভারত বিভক্তির পর তার গোমস্তা কালীপদ চক্রবর্তী বেশ কিছু সম্পত্তি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ওই সময়ে সুযোগ সন্ধানী কতিপয় মানুষ কালীপদ চক্রবর্তীর সহায়তায় হাতিয়ে নেয় বিপুল সম্পত্তি। কিছু জমি বিক্রি করেন নগেন্দ্রনাথ সেনের শাশুড়ি সরোদিনী সেন যদিও সরোদিনী সেন ওই জমির মালিক ছিলেন না।


বাদশা মিয়ার দীঘি
পাকিস্থান আমলে বাদশাহ মিয়া নামে পুলিশের এক কর্মকর্তা হাতিয়ে নেয় বেশ কিছু জমি। সেখানে এখন মাছ চাষের জন্যে খনন করা হয়েছে দীঘি ও পুকুর।


বাড়ির প্রাঙ্গনে গড়ে উঠেছে একটি মাদ্রাসা!

জনশ্রুতি আছে এই এলাকায় একসময় বাঘ ও টিয়া বসত করতো; তাই গ্রামের নাম হয়েছে বাগুটিয়া! তবে নগেন্দ্রনাথের এই বাড়িটি জনবসতি থেকে কিছুটা দুরে। সম্ভবত তারা বিলুপ্ত বিলের ভেতর দিয়ে নৌপথে যাতায়াত করতেন বলেই জনবসতি থেকে দুরে বিলের কাছে বাড়ি করেছিলেন। এলাকার প্রবীনদের সাথে কথা বলে জানা যায়
নগেন্দ্রনাথ সেন একসময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে পার্শ্ববর্তী হাট ফাজিলপুর গ্রাম থেকে কিছু মানুষকে এনে নিজের বাড়ির পাশে বাড়ি তৈরি করে থাকতে দিয়েছিলেন।
এখনও সেখানে একটি হিন্দু পরিবার রয়ে গেছে। বাড়ির আশপাশের বাকী জমিতে চাষ হচ্ছে তামাক।

তামাক চাষ

যে মানুষটি জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সংগ্রাম করে গেছেন বাঙ্গলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে, তারই পূর্ব পুরুষের ভিটা আজ বেদখল! এই বাড়িটি ও নগেন্দ্রনাথ সেনের সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে ইলা মিত্রের স্মরণে একটি কমপ্লেক্স নির্মান হতে পারে মহিয়সী এই বিপ্লবীর প্রতি স্বাধীন বাঙ্গালি জাতির ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৪২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×