somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক ঘাঠেতে রান্দি-বাড়ি মোরা আর এক ঘাঠে খাই

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়ছিলাম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেধেনী। কি সুন্দর করেই না তিনি রাধিকা চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। তীক্ষ সুন্দরী রাধিকার রুপের বর্ননা দিতে গিয়ে লিখেছেন – ‘কালো সাপিনির মত ক্ষীণতনু দীর্ঘাংগিনি বেদেনীর সর্বাংগে যেন মাদকতা মাখা’। প্রেমের সাথে কামনা, রুপের সাথে শরীরের প্রতি মোহ যে কেবল একটা পুরুষের না মেয়ের থাকতে পারে রাধিকা চরিত্রটি তারই প্রতিফলন। তাই দেখা যায় রাধিকা শিবপদ ছেড়ে শ্নম্ভু’কে তারপর শম্ভুকে ছেড়ে কিষ্টোকে নিয়ে সুখি হতে চায়। নিজের প্রয়োজনে শিবপদ কিংবা শম্ভু কাউকেই নিঃশেষ করে দিতে তার বুক এতটুকু কাপানি। গল্পটি শেষ করেই ধরলাম বেদেদের জীবন নিয়ে তারাশঙ্করের আরও একটি অনন্য গল্প – বেদের মেয়ে। আহা – শিবি'র কি রুপ, কি যৌবন আর উজ্জলতা। ভোলা’কে সে ভালবাসে। দীর্ঘদেহি ভোলা শুধু সুপুরুষই না – এক অসীম সাহসী দুঃর্দশ্য ডাকাত। কিন্তু ভোলা জেলে চলে গেলে তার চোখ পড়ে প্রভাত বাবুর উপর। নিজের অজান্তে প্রভাত বাবুকে সে ভালবেসে ফেলে। শেষে আবার ভোলাকে বাচাতে গিয়ে অজান্তে সে প্রভাতের বুকে ছুড়ি বসিয়ে দেয়। কি কঠিন চরিত্র! নিদারুন ভালবাসার সাবলীল বর্ননা।



গল্প পড়া শেষ, বিশ্লেষনের পালা। ভাবছিলাম প্রতিটি চরিত্র নিয়ে, গল্পের প্রেক্ষাপট নিয়ে। কল্পনায় জেগে উঠে বেদে সম্প্রদায়ের মানবেতর জীবন চিত্র। ‘এক ঘাঠেতে রান্দি-বাড়ি মোরা আর এক ঘাঠে খাই, মোদের সুখের সীমা নাই’। সত্যিই কি তাই! খবরের কাগজে চোখ রাখলেই দেখতে পাই চাঁদপুরের মতলবে দুইশ বেদে পরিবারের ৩’শ বেশি শিশুর মধ্যে ৪৫ জনের বেশি স্কুলে যায় না। খুবই অল্প বয়সে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে তাদের। নীলফামারী কিংবা সুনামগঞ্জের সোনাপুরেও একই ঘঠনার পুরাবৃতি। নৌকায় বসবাসকারী বেদে সমাজ চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকাসমূহ থেবে বঞ্চিত। আধুনিক সমাজ তাদেরকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। বর্তমান সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলা এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য তাদের জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। এই সমাজের শিশু, কিশোর ও নারীরা সব ধরনের টিকা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ১০ লক্ষ্য বেদের জন্য জাতীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতি সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু উল্লেখ নেই। অথচ এক সময় এই বেদেরা ঘুরে ঘুরে মানুষকে সেবা দিত এমন কি মুখ দিয়ে সাপের বিষ বের করত।

অতি ক্ষুদ্র হলেও এরা একটা সম্প্রদায়। কি হবে এদের ভবিষ্যৎ? শিংগা দিয়ে বিষ নামানোর দৃশ্য দেখেছিলাম খুব ছোটবেলায় আমার নানার বাড়ীতে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষ আস্তা হারিয়েছে ঝাড়-ফুক আর তাবিজ-কবজের উপর। বাতের ব্যাথা নামাতে মানুষ আর বেধেনী’কে ডাকে না। দাতের পোকা বের করতে ডাক্তারের অভাব নাই। তন্ত্রমন্ত্র, চোখের ভেলকি আর সাপের খেলা মানুষকে আকর্ষন করে না। তাহলে এদের চলবে কি করে! না চললে কে এদের পুনর্বাসিত করবে! নাকি বানের জলের মধ্যেই ভেসে যাবে পলিথিনের অস্থায়ী ঘরখানি। এবারের শীতে নীলফামারীর বেদে শিশুরা অনেক চেষ্টা করেও একখানি শীতের কাপড় ভিক্ষা পায়নি। কষ্টের কথা কারে বলি কষ্ট কারে বলে!

চারিদিকে নানান সমস্যা দেখে ইদানিং চোখের জলও শুকিয়ে গেছে। এর মধ্যেই মনের মাঝে ভেসে উঠে সেইসব নিস্পাপ চাহনি। একটু সুখের খোজে যে চোখ তাকিয়ে থাকে আমার চোখে, আপনার চোখে। ভাবতে ভাবতে মন ভিজে গেলেও কিইবা করতে পারি!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে ফেরার টান

লিখেছেন স্প্যানকড, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১

ছবি নেট।

তুমি মানে
সমস্ত দিনের ক্লান্তি শেষে
নতুন করে বেঁচে থাকার নাম।

তুমি মানে
আড্ডা,কবিতা,গান
তুমি মানে দুঃখ মুছে
হেসে ওঠে প্রাণ।

তুমি মানে
বুক ভরা ভালোবাসা
পূর্ণ সমস্ত শূন্যস্থান।

তুমি মানে ভেঙ্গে ফেলা
রাতের নিস্তব্ধতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×