আমি যখন ব্লগের খবর পাই, দুঃখজনক হলেও সত্যি, তখন নির্দ্বিধায়, নির্বিচারে ব্লগার হত্যা হচ্ছে। মূলত সেই খুন গুলোর কারণেই আমি ব্লগের প্রতি আকৃষ্ট হই। মানুষ এমন কী লিখতে পারে, যার জন্য তাকে খুন করা ফরজ হয়ে যায়! শব্দের সেই ধারটাকে খুজতেই আমি ব্লগে আসি। কিন্তু আমি যখন আসি তখন- সেই খুনাখুনির কারণে ব্লগ থিতিয়েগেছে, ব্লগের যৌবণে ভাটা পড়েছে।
ব্লগ সর্ম্পকে আমার ধারণা ছিলো- এখানে লেখার মূল্যায়ন হয়। ফেসবুকের মত নয়, লাইক ব্যাক। কিন্তু শব্দের সেই ধার আর ব্লগে ছিলো না এবং ব্লগের যৌবনও তাই নিরাশ হলাম। ব্লগে কোন চ্যাট বক্স নেই ব্যক্তিগত আলাপের জন্য। লক্ষ্য করে দেখলাম- সবাই মন্তব্যের ঘরকেই চ্যাট বক্স বানিয়ে ফেলেছে। লেখার সাথে কোনরূপ সর্সম্পৃক্ততা না রেখে মন্তব্য করছে, " প্রথম হয়েছি চা দেন।" তারপর খুনসুটির দীর্ঘ আলাপ চারিতা। এবং আরো ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম, তারা দুই গ্রুপে ভাগও হয়ে গেছে; চাঁদগাজী আর এন্টি চাঁদগাজী। চাঁদগাজীর অতি আক্রমণাত্মক মন্তব্যে জন্য আমিও এন্টি চাদগাজাইতেই ছিলাম। নিজের প্রতি মন্তব্যের ঘরে আমি অনেকবার তাকে আক্রমণ করেছি। সেই সব প্রতিমন্তব্যে এন্টি চাদগাজীদের প্রসংশাও জুড়ে যেত। কিন্তু আমি কোন দলাদলিতে ছিলাম না। পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতেও যাইনি।
ব্লগের এই অবস্থা দেখে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। শুরুর দিকে যদিও এক্টিভ ছিলাম, সেখানেও দেখলাম- আমি যদি কারো লেখায় ভালো মন্তব্য করি, সে আমার লেখাতেও ভালো মন্তব্য করবে। সে লেখা যতই বাজে হোক। আমি ভেবে দেখলাম- সেই মন্তব্য গুলো আমার লেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কেউ করছে না, তাতে আমার লেখার মূল্যায়নও হচ্ছে না। চা খাওয়ার মন্তব্য নিয়ে আমার লাভ নেই। আমি মন্তব্য করা ছেড়ে দিলাম। কারো লেখা ভালো লাগলে লাইক দিয়ে চলে যেতাম। এমনকি নিজের পোষ্টে প্রতিমন্তব্যও করতাম না। একি মন্তব্যের 'সুন্দর হয়েছে, ভালোলেগেছে" এর প্রতিমন্তব্য " ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন। ভালোবাসা নিবেন।" কতবার লেখা যায়! ব্লগে বিচরণ কমে দিলাম। এখন ব্লগে আসি লেখা পোষ্ট করে চলে যাই। যদিও প্রতিমন্তব্য করা শুরু করেছি। কিন্তু ব্লগের অবস্থা এখন খুবি খারাপ। প্রায় মূমুর্ষ প্রতিটি পোষ্ট। ব্লগ আর কখোনই সেই ধারালো লেখা ফিরে দিতে পারেনি, নিজেও উঠে দাড়াতে পারেনি।
যেহেতু আমি ব্লগের যৌবনে আসিনি, তখন কীভাবে ব্লগ চলত আমি জানিনা। যদিও প্রথমেই বলেছি আমি কী কারণে ব্লগে এসেছি, তারপরও আবার বলছি- আমি সেই ধারালো শব্দগুলোকে চিনতে, জানতে, বুঝতেই এসেছি। যেগুলোর কারণে মানুষ, মানুষ কে হত্যা প্রর্যন্ত করতে পারে। পাইনি, শুনেছি ব্লগ থেকে নাকি অনেকে প্রতিষ্ঠিত লেখকও হয়েছেন। সেগুলো আমার কাছে রূপকথার গল্প।
আমি নিজে কখোনো লেখক হতে চাইনি, চাইও না। তারপরও কেন ব্লগে লিখছি? মূলত এই কথা বলতেই প্যাচালটা জুড়িয়েছি। চলচ্চিত্র পরিচালক হবার আমার প্রচন্ড ইচ্ছা। আজ ৫ বছর ধরে এই স্বপ্নই লালন করে যাচ্ছি। যদিও এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি, কিন্তু ঘুমহীন চোখে আমার এ স্বপ্ন ভাঙ্গছে না। বর্তমানে আমাদের মিডিয়া পাড়ার অবস্থা, যারা এই সাথে সর্সম্পৃক্ত নই তারা জানে। এই দূর্দশায় স্ক্রিপ্ট রাইটার নামে একটা পেশাছিলো সেটা ভুললে বসেছি। সুতরাং এখন পরিচালকদের নিজের গল্প নিজেকেই লিখতে হয়। আগেও অনেকেই লিখত, যেমন সত্যাজিত রায়, ঋতিক ঘটক। আমাদের জহির রায়হান। কিন্তু পরিচালক হবার সাথে সাথে উনারা ভালো লেখকও ছিলেন। সাহিত্যে তাদের অনেক অবদান রেখে গেছেন। কিন্তু যারা পারে না, গল্প লিখতে না জানলে যে ভালো পরিচালক হতে পারবে না এমন তো কোন কথা নেই। তাহলে স্ক্রিপ্টরাইটার পেশার জন্মই হত না। আমাদের যেহেতু এই অফশন নেই, সেহেতু আমাদের প্রত্যেক কে জহির রায়হান, ঋতিক ঘটক হতে হয়। সে গল্প লিখতে পারুক, না পারুক; নিজেদের গল্প নিজেদেরই লিখতে হয়। এই কারণেই আমার লেখার যাত্রা শুরু। যেহেতু নিজের গল্প নিজেকেই লিখতে হবে সুতরাং খুব ভালো লেখক না হলেও আমার গল্প বলার মত লেখা আমাকে শিখতে হবে।
কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখলাম আমার ভান্ডার শূন্য। কোন লেখাই বের হয় না। কোথায় যেন পড়েছিলাম " দু পা থাকলেই ভ্রমণ করা যায়, কিন্তু দু হাত থাকলেই লেখক হয়া যায় না।" আমার পা নেই, কিন্তু ভ্রমণ আমাকে করতেই হবে। অন্তত ঘর হতে দু পা ফেলিয়া ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু আমাকে দেখতেই হবে। তাই লেখা শুরু করলাম। আমার কল্পনা শক্তি ভালো। আমি যখন কোন গল্প ভাবি তখন চরিত্র গুলোকে চোখের সামনে নড়াচড়া করতে দেখতে পাই।সেগুলোকেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্যে লিখতে লাগলাম। অনেকেই সেগুলোকে কবিতা ভেবে ভুল করল। আমিও তাদের ভুল আর ভাঙ্গায়নি। অনেকেই ব্যঙ্গ- বিদ্রুপ করতে লাগল। তাতে আমার গায়ে ফোস্কা পরেনি। নির্লজ্জ হতে শিখে গেছি। যেখানে, আয়মান সাদিক, সুলেইমান সুখন, হিরো আলম, রাবা খান সহ বিশিষ্ট্য লেখকরা বাংলা সাহিত্যে চরম উন্নতি ঘটিয়েছে, সেখানে আমার এই লেখা গুলো আর কতটুকু অবনতি ঘটাবে।
কবিতা লেখাও আমার দ্বারা সম্ভব না। আমি কবিতার ছন্দই জানি না। সাদামাটা ঘরের মেয়ে হতে পারে কিন্তু গুণের অলংকার ছাড়া ঘরের লক্ষী হয় না। আমার সাদামাটা ঘরের মেয়ের কারো কাছে চোখ ভালো লাগল, কারো কাছে কেশ। তাদের কাছে আমি কৃতঘ্ন। কিন্তু সেটাতে লেখার মান কতটুকু যাচাই হল আমি জানি না। আমি এটাও ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেছি যে ' যে কোন লেখা বা মুভি কারো না কারো কাছে ভালো লাগবেই আবার কারো না কারো কাছে খারপা।' এরা সাধারণত লেখার সমালোচনা করতে পারে না। ঠিক কী কারণে ভালো লেগেছে বা খারাপ লেগেছে যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে বলতে পারে না। তবুও আমি লিখে যাচ্ছি। আসলে থামাতেও গিয়ে পারিনি। কোন লেখা মাথার মধ্যে ঢুকলে না লেখা পর্যন্ত শান্তি পাইনা। তাই বাধ্য হয়েই লিখছি। শুনে হয়তো অবাক হবেন, আমার সেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্যের কবিতা না হয়ে উঠতে পারা ৪৫ টা কবিতা আমি বিক্রি করে দিয়েছি। সেগুলো এক কবি বইও বের করেছে। সেটা অন্য কথা যে, বইয়ের বাজার নিম্নমুখী হওয়াই বাইটা চলেনি। কিন্তু আমি জানলাম পৃথিবিতে গর্ধোব অনেক আছে।
এরপর আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাক্য গুলো পূর্ণতা পেল। আমি বড় গল্প কে সেই বাক্য গুলো দিয়ে ছোট গল্প আকারে লিখতে লাগলাম। লেখার মান কেমন হচ্ছে? সেটা বাদ দিন। লিখছি কারণ আমাকে লিখতে হবে। পরিচালক হতে হবে। আদৌও পারব কিনা জানি না। আমার বর্তমান অবস্থা এটাই বলে- আমার দ্বারা সম্ভব না। কিন্তু ঐ যে আমার ঘুমহীন চোখের স্বপ্ন ভাঙ্গছে না। তাই লিখছি। লেখা গুলোয় শব্দের বাহার, মাধুর্য কিছুই থাকে না। আমি কল্পনায় যেটুকু দেখি, যেভাবে দেখি, যতটুকু দেখি, সেটাই লিখি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার একটা বড় গল্পে হাত দিয়েছি। এর আগেও একবার দিয়েছিলাম কিন্তু দুই পর্বের বেশি লিখতে পারিনি। এটা তবুও ৬ পর্যন্ত এগিয়েছে। জানিনা আর কতদূর এগোতে পারব! লেখার মান কেমন হচ্ছে? আরে ভাই বাদ দেন না। তৌহিদ আফ্রিদি, সালমান মুক্তাদির কে সহ্য করলে পারলে আমি কী দোষ করছি? আজকাল দেখছি সাবাই বলছে- তুমি অধম হতে পারলে আমি পারব না কেন। সুতরাং এরা পারলে আমি পারব না কেন? নির্লজ্জ তো আগেই হয়েছি।
যে কথা বলতে এত কথার ফুড় তুলছি(যে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে, আমি এমন একটু বেশীই লেখার চেষ্টা করি। সে যত বেহুদা কারণেই হোক, কারণ বেহুদা কারণে হলে লেখা টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমার হয়নি)। আমার এত লেখার মধ্যে যে সামান্য লেখা দু, চার জনের ভালো লাগছে, তাও অতিরিক্ত বানান ভুলের কারণে গ্রহণ যোগত্যা হারাচ্ছে। এ বিষয়ে আমার কিছু করারও নেই। নিজের ভুল চোখে পড়ে না।
মূলত এই কাথা বলতেই কথার দোকান খুলে বসেছিলাম। এখন ঝাপি বন্ধ করছি ভালো থাকবেন। অহেতুক সময় নষ্ট করে যদি পুরোটা পড়ে রাগ হয়, গালি দিতে পারেন। ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৩৩