somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে দাম বাড়ায় ডিজেল পাচারের ঝুঁকি বেড়েছে.....

০৫ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

* দুই দেশের মধ্যে ডিজেলের দামের পার্থক্য লিটারে ১৮ টাকা
* নৌপথে ডিজেল পাচারে চোরাকারবারিরা তৎপর .।
ভারতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ থেকে ডিজেল পাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। ভারত সরকার গত সপ্তাহে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দুই রুপি করে বাড়িয়েছে। এতে বাংলাদেশের ডিজেলের সঙ্গে ভারতের প্রতি লিটারে দামের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা। স্থানীয় বাজার থেকে ডিজেল কিনে চোরাই পথে ভারতে পাচার করলে প্রতি লিটারে বাংলাদেশ সরকারের লোকসান হবে ২৩ টাকা (প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা ভর্তুকিসহ)।
নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র, যানবাহন, সেচ, মিল-ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন কাজে দেশে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ডিজেলের চাহিদা রয়েছে। সরকার উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করছে। ভর্তুকি ছাড়া প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়ে ৪৯ টাকা। প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা ভর্তুকি দিয়ে খোলাবাজারে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। এরপর সরকার এখন পর্যন্ত জ্বালানি তেল পাচার রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ইলাহী চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা জানি দুই-তিন দিন আগে ভারত সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে।' এতে বাংলাদেশ থেকে জ্বালানি পাচারের ঘটনা ঘটবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।'
স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের জ্বালানির দাম কম হলে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিতে হবে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল করিম জানান, গত ২৬ জুন ভারতে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশে দাম বাড়ার ফলে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী জ্বালানি তেলের অবৈধ মজুদ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। সীমান্ত পথে তেল পাচারের চেষ্টা হতে পারে, এ আশঙ্কা প্রকাশ করে বিপিসি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে গত ২৭ জুন একটি চিঠি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন তেল ডিপো ও বিক্রয়কেন্দ্রে জ্বালানি তেলের বিক্রি ও উত্তোলনের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। এ বিষয়গুলো তদারকি করার জন্য তেল বিপণন কম্পানিগুলোতে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, জাতীয় স্বার্থে দেশের সীমান্তবর্তী জেলায় জ্বালানি তেল বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা রোধ, সীমান্ত পথে তেল পাচার এবং অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধ মজুদ গড়ে তোলার মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় সংশ্লিষ্ট বাহিনীসহ পুলিশি নজরদারি জোরদারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে তেলের দামের পার্থক্য ১৮ টাকা। চোরাকারবারিরা সীমান্ত পার করে ভারতের এজেন্টদের কাছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকায় প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করে। এ অবস্থায় পাচারের জন্য তেল মজুদ, ঘুষ ও পরিবহনের পেছনে লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা করে খরচ হলেও আট থেকে ১০ টাকা লাভ করার সম্ভাবনা থাকে। এটাই চোরাকারবারিদের ডিজেল পাচারের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
ভারত সরকার পেট্রল ও কেরোসিনের দাম বাড়ালেও বাংলাদেশ থেকে এ দুই ধরনের জ্বালানি খুব বেশি পাচার হয় না বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে ভারত পেট্রল, ডিজেল এবং কেরোসিন এ তিন ধরনের জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। প্রতি লিটার পেট্রল সাড়ে তিন রুপি, ডিজেল দুই রুপি এবং কেরোসিনের দাম তিন রুপি করে বাড়ানো হয়েছে।
এ দিকে বাংলাদেশে গত বছরের শুরুতে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে চার টাকা কমিয়ে ৪৪ টাকা করা হয়। অন্যদিকে ভারতে ডিজেলের দাম দুই রুপি বাড়িয়ে এখন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৪১ দশমিক ৬ রুপিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৬২ টাকা ৪০ পয়সা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বাদে দেশের সীমান্ত এলাকায় ২০টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এসব পাম্প থেকে ভারতীয় কোনো যানবাহনের জন্য তেল কেনার অনুমতি নেই। ভারতীয় বাস কিংবা ট্রাক সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বিডিআর ওই সব যানবাহনের ট্যাংকের তেল মেপে রাখে এবং বের হওয়ার সময়ও আরেকবার মাপা হয়। এই দুই মাপের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান থাকলে বিডিআর পদক্ষেপ নেয়। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকার ৯ কিলোমিটারের মধ্যে যেসব পেট্রল পাম্প রয়েছে তাদেরও প্রতিদিন তেল বিক্রি এবং মজুদসংক্রান্ত তথ্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এত সব আয়োজনের মধ্যেও তেলের দামের ব্যবধানের কারণে পাচারের ঘটনা ঘটছে। দেশের কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, এ ধরনের পাচারের জন্য কিছু কিছু গ্রাম বিখ্যাত হয়ে গেছে। ভারতীয় যানবাহনগুলোতেই তেল পাচারের ঘটনা ঘটছে। সীমান্ত পার হয়ে আসা যানবাহনগুলো বিডিআরসহ সংশ্লিষ্ট সবার চোখ ফাঁকি, কখনো উৎকোচ দিয়ে ট্যাঙ্কি ভর্তি করে ডিজেল নিয়ে চলে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন শত শত লিটার তেল পাচার হচ্ছে। তবে সড়ক পথের তুলনায় নৌপথে ডিজেল পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে বলে জানা গেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে নৌপথ। সীমান্তবর্তী এসব এলাকায় পাহারাও তুলনামূলক শিথিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে থাকে সংঘবদ্ধ চোরাচালানিরা।
এ ছাড়া সীমান্ত এলাকার কৃষক এবং তেল ব্যবসায়ীর মাধ্যমেও ডিজেল পাচার হচ্ছে। তারা অধিকাংশ সময় প্রয়োজনের থেকে বেশি ডিজেল কেনে। ওই বাড়তি তেল স্থানীয় চোরাকারবারিরা সংগ্রহ করে পাচার করে।

সূত্র:কালের কণ্ঠ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×