somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাজাগতিক ছাগল

২২ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
সবুজ স্ক্রীণের মাঝে লালচে হিট সোর্সগুলো নড়াচড়া শুরু করতেই উত্তেজনায় হার্টের বীট একটা মিস হয়ে গেল জামানের। ই-উ-রে-কা বলে চিৎকার দিয়ে প্রাচীন কালের এক বিজ্ঞানীর মত লাফ দিয়ে দৌড় মারতে ইচ্ছা করল খুব। কিন্তু এই জবড়জং স্পেসশ্যূট পরে সেটা সম্ভব না। তার বদলে সে শান্ত স্বরে নাঈমাকে ডাক দিল। মেয়েটা স্পেসবুকে চ্যাট করছে। যারা স্পেসে আসে তাদের জন্যে ফেসবুকের আপডেটেড ভার্সন। কারণ স্পেসে সময় সঙ্কোচনের কারণে পৃথিবীর সময়ের সাথে তাল মেলানো সম্ভব হয় না। পৃথিবীর বাইরে জীবনের অস্তিত্ব খোজার মত গুরুত্বপূর্ণ একটা মিশন নিয়ে যে সে মহাকাশে এসেছে সে সম্পর্কে মনে হচ্ছে কোন ধারণাই নেই।

আরো একবার ডাকেও সাড়া মিলল না নাঈমার। ধমক দিতেই হল জামানকে।

মুখ হাড়ি করে কাছে আসতেই ওকে এই গ্রহটায় ল্যান্ড করার জন্যে দরকারি ব্যবস্থা করতে বলল জামান। কথাটা শুনেই লাফিয়ে উঠল নাঈমা।

‘জামান ভাই, কোন এলিয়েনের খোজ পেয়েছেন নাকি? দেখতে কেমন? বুদ্ধি কি আমাদের চেয়ে বেশি? কাছে গেলে কামড় দিবে নাতো? হাত পা কয়টা?’

একগাদা প্রশ্ন করে নাঈমা। ওর উচ্ছাস জামানের ভিতরেও সঞ্চারিত হয়। কিন্তু বাইরে প্রকাশ করে না। করলে এই মেয়ে কাজ বাদ দিয়ে এখানেই বকবক করতে থাকবে। খানিকটা বিরক্তি মিশিয়ে তাই বলে, ‘নেমেই দেখা যাবে। ব্যবস্থা কর কুইক।’

কি আর করা, শুকনো মুখে নাঈমা কাজে লেগে যায়।

এদিকে জামান মনোযোগ দেয় গ্রহটা সম্পর্কে খুটিনাটি জানতে। পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই আলোক বর্ষ দূরে ট্রায়াঙ্গুলাম গ্যালাক্সিতে অবস্থিত। কোনো নাম নেই। বিটা ২৩৭ সংখ্যাটা দিয়ে চিহ্নিত করা শুধু। আগে কখনো এখানে মানুষের পা পড়েনি।

অবশ্য প্রাণের সন্ধানে মহাকাশে অভিযান শুরুই হয়েছে মাত্র বছর পঞ্চাশ হয়। এর আগে শুধু মূল্যবান ধাতু আর খনিজের সন্ধানেই ঘুরত মানুষ মহাকাশে। সেই চাহিদা আপাতত মেটায় এখন এলিয়েনের সন্ধানে নেমেছে। উদ্দেশ্য অবশ্য সুবিধার না। বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ ধাতুর খনিতে বেগার খাটানোর লক্ষ্যেই এত হ্যাপা।

প্রবল আপত্তির মুখে তেজস্ক্রিয় ধাতুর খনিতে মানুষের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য মানুষ নাইও বেশি। প্রাচীনকালে মানুষই মানুষকে মারত। তারপর রোবট ব্যবহার করে মারত। তারপর রোবটদের সাথেই লেগে গেল যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষ আইন করে রোবোট বানানো বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ কমে গেছে দুই তৃতীয়াংশ।

এখন তাই এসব খনিতে কাজে লাগানোর জন্যে এলিয়েন খোজা হচ্ছে। বিভিন্ন মাইনিং কোম্পানীর অর্থায়নেই এসব অভিযান চালিত হয়। শামসুজ্জামান ওরফে জামান তেমনি একটা কোম্পানীতে চাকরি করে। প্রায় পনের বছর ধরে মহাকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। যদিও পৃথিবীর হিসাবে পঞ্চাশ বছর। আগে খনি খুজত। এখন এলিয়েন খোজে।

নাঈমা অবশ্য কোম্পানীর কেউ না। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থার তত্বাবধানে শিক্ষানবীশ নভোচারীদেরকে সিনিয়র কারো অধীনে মহাকাশে পাঠানো হয়। এর আগেও দুবার জামানের সাথে দুটো ছেলে মহাকাশে ঘুরে গেছে। তবে নাঈমা তাদের চেয়ে আলাদা। অনেক বেশি আবেগ আর ছেলেমানুষি দিয়ে বোঝাই।

গ্রহটাতে কোনো খনিজ বা ধাতু বেশি নাই। এ কারণেই আগে কারো পা পড়েনি বোঝা যাচ্ছে। তবে যা আছে বলে ধারণা করছে জামান, তা যদি সত্যি পাওয়া যায় তা হবে এরচেয়েও হাজারগুণ বড় আবিষ্কার। গ্রহটার বায়ুমণ্ডল বেশ হালকা, কারণ এর মধ্যাকর্ষণ শক্তি কম। সমস্যা নেই। জেট প্যাক আছে। উড়ে উড়েই গ্রহের প্রানীগুলোকে ধরা যাবে। এ ছাড়া আরও খুটিনাটি জানতে জানতেই নাঈমা জানালো ল্যান্ডিং এর জন্য সব রেডি।

নামার আগে পৃথিবীতে খবর পাঠাতে গিয়ে দ্যাখে নেটওয়ার্ক নেই। আরো কয়েকবার গ্রহটার কক্ষপথে চক্কর দিয়েও নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় খবর না দিয়েই নামতে শুরু করল ওরা।

২।

গোমড়া মুখে সামনে পড়ে থাকা প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে আছে জামান। এই গ্রহের অধিবাসী এরা। দেখতে অনেকটা ছাগলের মত। সামনে বেরিয়ে আসা লম্বাটে মুখ। চোখ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না, তবে লম্বা কান আছে। হাত দুটো অনেকটা ডলফিনের পাখার মত। দু পায়ে হাটে কিন্তু ছোটার সময়ে চার হাত পা ই ব্যবহার করে। বুদ্ধি শুদ্ধিও ছাগলের মতই সম্ভবত।

স্পেসশিপ থেকে নেমে হাতের হীট সোর্স ইন্ডিকেটর ধরে একটু খুজতেই প্রাণীটাকে দেখতে পায়। জামান ট্রাঙ্কুলাইজার মারতে যাবে তার আগেই নাঈমা ওর হাতের বন্দুক নামিয়ে ‘ওম্মা কত্তগুলা কিউট!’ চিৎকার দিয়ে ডাক দিতেই প্রাণীটা নিজেই এসে ধরা দেয়। যেন নাঈমার পোষা ছাগল। স্পেসশিপে থাকতে যখন দেখেছিল তখন মনে হয়েছিল যেন আরো লম্বা আর হাত পা ওয়ালা। কিন্তু এখন এটার আসল চেহারা দেখার পর জামান পুরোই হতাশ। কারণ এই ছাগলকে দিয়ে কিছুই হবে না। জামানের বসেদের ধারণা এলিয়েন মাত্রই তাদের চার পাঁচটা করে হাত থাকবে। এতগুলো হাত দিয়ে চটপট সব কাজ করে ফেলবে। আর এরতো হাতই নেই, খনির কাজ করতে পারার প্রশ্নই আসে না। মাথায়ও বুদ্ধি নাই। ধুর! অলরেডি প্রমোশন আর মোটা বোনাসের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ও। সব জলে গেল। জামানের মন চাচ্ছে ঝেড়ে একটা লাথি মারতে। চারটা হাত পা না থাকা যেন প্রাণীটারই দোষ।

নাঈমা না থাকলে তা-ই করত। ও অবশ্য বেশ জমিয়ে নিয়েছে। ছাগলটাকে পুচি বলে ডাকছে। আদর করছে। সেলফি তুলছে। আর জামান চিন্তা করছে এখন এটাকে দিয়ে কি করবে।

‘জামান ভাই এটাকে কি নিয়ে যাবেন সাথে করে?’

‘হু’ অন্যমনস্ক উত্তর জামানের।

‘তারপর ওকে দিয়ে কি করবেন?’

‘কি আর করব? কেটে কুটে দেখব ওর ভিতরে কি আছে।’ কোনোকিছু না ভেবেই জবাব দেয় ও।

‘কি বলেন এসব? পুচি কত্ত কিউট। আর ওকে মেরে ফেলবেন?’

‘তো ওকে দিয়ে কি করতে বল তুমি?’ বিরক্ত জামান।

‘এলিয়েন আবিষ্কার তো হল। ওকে নেওয়ার দরকার কি? খবর দিয়ে এক্সপার্ট মানুষ আনুন এখানে। এরা নিশ্চয়ই কথা বলতে পারে। ওদের সাথে যোগাযোগ করতে পারলেইতো সব জানা যাবে। কাটা লাগবে কেন?’

‘যাও, তুমি কথা বলো গিয়ে। জানতে পারলে আর কাটব না। যত্তসব।’ শেষ শব্দটা অবশ্য বিড়বিড় করে বলে ও। নাঈমা বুঝল কিনা কে জানে তবে মুখ ঝামটা দিয়ে বেরিয়ে গেল পুচিকে সাথে করে।

অনেক ভাবনা চিন্তা শেষে বিরক্ত জামান শেষমেশ ঠিক করেছে ছাগলটার মত আরো কয়েকটাকে ধরে নিয়ে যাবে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ল্যাব বা চিড়িয়াখানায় বেচতে পারবে। প্রমোশন না হোক বোনাসের দুঃখ কিছুটা ভোলা যাবে এতে।

হঠাত কিছু একটা অস্বাভাবিক লাগে জামানের। ফুসস করে একটা শব্দ। অনেকক্ষণ নাঈমার সাড়া নেই। কিছু হল নাকি? দৌড়ে পাশের কামরাতে যেতেই দ্যাখে স্পেসশিপের হ্যাচ খোলা। ছাগলটাকে কোলে নিয়ে নাঈমা নেমে যাচ্ছে।

দ্রুত রেডিওতে যোগাযোগ করে জামান।

‘নাঈমা তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? কি করছ?’

‘মাথা খারাপ না। ঠিক আছে বলেই এটা করছি।’

‘কি করছ?’

‘পুচিকে ফেরত দিয়ে আসছি।’

‘কেন?’

‘আমার এত সুন্দর বাচ্চাটাকে আমি কাটতে দেব না।’

‘এটা তোমার বাচ্চা হল কবে?’

‘ওকে যখন পেয়েছি তখন থেকেই। আমি ওকে মারতে দেব না।’

‘ওকে। কিন্তু তুমিতো লেজার গান বা ট্রাঙ্কুলাইজার কিছুই নিয়ে যাওনি।’

‘কিছুই লাগবে না। ওরা আমাকে কিছুই করবে না।’

মাথায় রক্ত চড়ে যায় জামানের। শক্ত কিছু বলতে যাবে- কিন্তু এই মেয়েকে কিছু বলে বোঝানো যাবে না বুঝতে পেরে আর কিছু বলে না। ছাগলটা ওর কাছে যেমন কিঊট, ছাগলটাও ওকে কিউট ভেবে কিছু করবে না। কি লজিক!

এতক্ষণ স্পেসশিপে ছিল বলে কিছু করেনি হয়ত। মাটিতে নেমে কিছু করলে? ছাগলাটার গুষ্টিশুদ্ধু আশে পাশে আক্রমনের জন্যে রেডি হয়ে থাকলে কি করবে এই গাধা মেয়ে?

ফলে জামানকে লেজার গান নিয়ে নেমে আসতেই হয়। নামতেই দেখে নাঈমা ছাগলটার গলা ধরে কাঁদছে।

‘ভাল থাকিস পুচি। যা পালা এখন, ঐ যে জামান ভাই আসছে। তোকে মেরে ফেলবে।’ বলেই তাড়া দেয় প্রাণীটাকে। ওটাও ছুটে পালায়।

কষে চড় দেওয়ার ইচ্ছেটা দমন করে জোর করে হাত ধরে টান দেয় নাঈমার। ইচ্ছা ওকে হেচড়ে স্পেসশিপে নিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগেই পায়ের নিচের মাটি সরে যায় ওদের। কিছু বোঝার আগেই পঞ্চাশ ফুট নিচে আছড়ে পড়ে জামান আর নাঈমা।

এলিয়েন ধরতে এসে নিজেরাই এলিয়েনের শিকার হয়ে জ্ঞান হারায় ওরা।

৩।

দুটো আলাদা বেডে শুয়ে আছে জামান আর নাঈমা। এখনো স্পেসস্যূট পরা। তবে এর তার সাথে কি কি তার জোড়া লাগানো। ওদেরকে ঘিরে কিম্ভূত কিছু প্রাণী। এই গ্রহের আসল অধিবাসী ওরা।

“মানুষ!

এরা মনে করে ওরাই মহাবিশ্বের সবচে বুদ্ধিমান প্রাণী।

যদিও এদের কার্যক্রম তা প্রমাণ করে না। এদের প্রধান কাজ হল একজন আরেকজনকে মারা। নিজের সামান্য স্বার্থ রক্ষার্থে বাসভূমি পৃথিবীর মস্ত ক্ষতি করতেও এদের আটকায় না।

এদের সংস্পর্শে আসা মানেই ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া। তাই আমাদের প্রধান কর্তব্য হল এদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকা।

আমাদের বাস মাটির নীচে। এটা আমাদের সবচে বড় সুবিধা মানুষের কাছ থেকে বেচে থাকার। এ ছাড়াও গ্রহের চারপাশে সমস্ত রেডিও সিগন্যাল জ্যাম করে রাখার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনাক্রমেও যদি আমাদের কাউকে মানুষরা দেখে ফ্যালে তো তারা বাইরের কাউকে খবর দেওয়ার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।”

মানুষ সম্পর্কে এই গ্রহের পকেট এনসাইক্লোপিডিয়াতে সংক্ষেপে এটাই লেখা।

এখানে লেখা শেষ ঘটনাটাই ঘটেছে। গ্রহের একজন হঠাত বাইরে কাজে এসেছিল তখনি জামান তার হীট ডিটেক্টরে তাকে দেখতে পায়।

সাথে সাথেই গ্রহের প্রতিরক্ষার সব ব্যবস্থা নিয়ে নেওয়া হয়। জামান আর নাঈমার কথা থেকে ওরা নিশ্চিত হয়ে নেয় যে ওরা গ্রহে নামবেই। দ্রুত ওদের কথাবার্তা থেকে ওদের ব্যক্তিত্ব, পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে ফাদ পাতা হয়।

ঐ ছাগলের মত প্রানীটা আসলেই ছাগল। এই গ্রহের ছাগল এবং এখানকার সবচে কিউট জিনিস। নাঈমার কথা থেকেই স্পষ্ট হয় যে ও এটার প্রতি আকৃষ্ট হবেই। এই গ্রহবাসীদের লক্ষ্য ছিল ছাগলটাকে দিয়ে নাঈমাকে ওদের কোনো একটা গোপন দরজার উপর টেনে আনা। এসব দরজা দিয়ে ওরা গ্রহের ভূপৃষ্ঠে আসা যাওয়া করে। ওর পিছু পিছু জামানও আসবে। তারপরে দুজনকেই গোপন দরজা খুলে নীচে টেনে নামানো। জামানদেরকে ধরার জন্য এটা ছাড়া এদের কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। কারণ এ গ্রহে কোনো অস্ত্র উৎপাদন হয় না। যে কোন ধরনেই হানাহানি নিষিদ্ধ। আর সরাসরি জামানদেরকে ধরতে গেলে ওরা অবশ্যই লেজার গান চালাত। সবচে বড় কথা সামনে গেলে জামানরা এই গ্রহবাসীদেরকে দেখে ফেলত। যা ওরা কখনোই চায় না।

সবই ঠিক ছিল কিন্তু ছাগলটা উলটো নাঈমার দিকে দৌড়ে যাওয়ায় যত বিপত্তি বাধে। আর ওদের প্লান ভেস্তে যায়। কিন্তু পরেরবার নাঈমা ছাগলটাকে নিয়ে ওদের একটা গোপন দরজার উপরেই নামে। জামানও আসে। ফলে এবার আর কোনো সমস্যা হয়নি।

না, ওদেরকে মারা হবে না। ওদের স্পেসস্যূটে বিশেষ ধরনের স্নায়ু গ্যাস ঢোকানো হয়েছে। এর প্রভাবে ওরা গত একদিনে ঘটে যাওয়া সবই ভুলে যাবে শুধু।

জামান আর নাঈমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এই গ্রহের প্রধান। বুদ্ধির কি নিদারুণ অপচয়। একটা বুদ্ধিমান প্রাণী একে অন্যকে মারবে কেন? এসবতো নীচু বুদ্ধির প্রাণীদের কাজ। এই গ্রহে ঐ ছাগল গুলোই মারামারি করে শুধু। গ্রহবাসীদের মধ্যে কোনো বিবাদ নাই। মানুষের বুদ্ধি তো আর ছাগলের মত না। তারা কেন আত্ম বিদ্ধংসী হবে?

মহাবিশ্বে আরো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে। তাদের সাথে এই গ্রহবাসীদের যোগাযোগ আছে। কিন্তু সবাই মানুষের কাছ থেকে নিজেদের সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে। ইশ!

কত ভালোই না হত যদি মানুষ যদি তার বুদ্ধির যথার্থ ব্যবহার করত! তাহলে সবাই মিলে মিশে আরো স্বচ্ছন্দে থাকা যেত।

আরেকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি জামান আর নাঈমাকে স্পেসশিপে ফিরিয়ে দিয়ে এই গ্রহ থেকে দূরে রেখে আসার নির্দেশ দিলেন।

পরিশিষ্ট

চমৎকার একটা ঘুম দিয়ে ওঠে নাঈমা। ওরে বাপ! টানা দুদিন ঘুমিয়েছে। জামান নিশ্চয়ই বকা দেবে, এই ভাবনায় তাকে পটানোর লক্ষ্যে হেভী করে দু কাপ কফি বানায় ও। কাপ হাতে গিয়ে দ্যাখে জামান ক্যামেরাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। ওকে দেখেই উত্তেজিত গলায় বলে উঠল

‘নাঈমা, এই ছাগলটাকে তুমি কই পেলে? এলিয়েন ছাগল? আমাকে ডাকনি কেন ঘুম থেকে?’ প্রায় কান্না বেরোয় জামানের মুখ থেকে।

‘কই দেখি দেখি। ওমা কখন তুললাম এসব। আমিতো জানিই না। আমিতো টানা দুদিন ঘুমালাম। আপনিও ঘুমায় ছিলেন? হায় হায়! তাহলে কি ঘুমের মাঝে ওরাই এসে ছবি তুলে গেছে? জামান ভাই জলদি রকেট ঘোরান। ঘুমের মাঝে যেদিক দিয়ে এসেছি ওদিককার সব গ্রহ চেক করতে হবে।’

কথার রকেট ছোটায় নাঈমা। তবে বিরক্ত না হয়ে প্রথমবারের মত নাঈমার কথাকে গুরুত্ব দেয় জামান। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুজেও ওরা কোনো গ্রহে কিছু আর খুজে পায় না।

হতাশ হয়ে কিছুদিন পর ‘with my pet poochie’ লিখে ছবিটা স্পেসবুকে পোস্ট করতে দেখা যায় নাঈমাকে। পুচি নামটা কেন রেখেছে কে জানে? পর্যাপ্ত লাইক আর কমেন্ট সহজেই পুচির আসল পরিচয় না জানার দুঃখ ভুলিয়ে দেয় ওকে।

তবে জামান বেচারা বোনাস আর প্রোমোশন হারানোর দুঃখে চুল ছিড়তেই বাকি রেখেছে শুধু।

পরের চান্সটা যেন কোনমতেই মিস না হয় সেজন্যে এখন বেশিরভাগ সময় নির্ঘুমই কাটায় সে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×