আমি গত পরশু সামু ব্লগে সাম্প্রতিক বিলবোর্ডের বিতর্ক নিয়ে “বিলবোর্ড কাহিনীঃ শাসক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সাফল্য কোথায়?” এই শিরোনামে একটা ব্লগ লিখেছিলাম। Click This Link
সেটার জবাবে নানা গালির পাশাপাশি বেশ কিছু উপাধি জুটেছে মুফতে। আমি আওয়ামী লীগের প্রচারণার তথ্যের সত্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলিনি, প্রশ্ন তুলেছি একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ডিসকোর্স নিয়ে। আমার লেখার মুল বক্তব্য ছিল, আওয়ামী লীগ তাদের সাফল্য বলতে এমন বিষয়গুলো উপস্থাপিত করছে যেগুলো একটা রাষ্ট্র পরিচালনার সাফল্যের যথার্থ সুচক নয়। এটা নিয়ে ফলেন লিফ সচলায়তনে একটা ব্লগ লিখেছেন। http://www.sachalayatan.com/mother/49923 আমি লেখাটিকে স্বাগত জানাই। এই ধরণের যুক্তিনির্ভর লেখায় সমাজের চিন্তার অর্গল মুক্ত হয়। তর্ক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে আমরা সত্যের কাছাকাছি পৌছাই। সেই ব্লগে আমাকে লেখক আমাকে তিনটা প্রশ্ন করেছেন।
১/ যে যে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তার পূর্ববর্তী সরকারের রেখে যাওয়া ট্রেন্ড গুলোকে উলটো দিকে টেনে নিয়ে গেছে সেগুলোকে আওয়ামী লীগের সাফল্য বলা যাবে কিনা?
২/ যে যে ক্ষেত্রগুলোতে বি এন পি সরকার আওয়ামী লীগের সাফল্যের ট্রেন্ড ধরে রাখতে পারে নাই সেগুলোকে বি এন পির ব্যর্থতা বলা যাবে কিনা?
৩/ গ্রাফের স্লোপ উন্নত হলে সেটাকে সাফল্য বলা যাবে কিনা?
প্রশ্নগুলো সরল, কোন প্যাচ ঘোচ নেই। এর উত্তরে সবগুলোতে “হ্যাঁ” বলে দিতে কোন যুক্তিবাদী মানুষেরই সমস্যা হবার কথা নয়। আমারও নেই। দেশ এগিয়ে গেলে দেশের কোন নাগরিকের অখুশি হওয়ার কারণ নেই। এখন আসছে আসল প্রশ্ন। তেমন কিছু ডাটা কী সত্যিই আছে? উৎসাহী হই এমন কিছু দেখার যেখানে আওয়ামী লীগ আমলে শৈন শৈন উন্নতি হচ্ছিলো কিছুর তারপর বি এন পি ক্ষমতায় আসার পরে ধপাস করে সেটা মাটিতে পড়ে গেল, এরপর আবার আওয়ামী লীগ ত্রাতার ভুমিকায় আসলেন এবং সেটাকে টেনে টেনে অনেক কষ্টে উপরে তুললেন। উনি আশাহত করেন না। তিনি কয়েকটা গ্রাফ উপহার দেন।
১/ পপুলেশন গ্রোথ রেট বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
২/ বার্থ রেট বা জন্ম হার।
৩/ ডেথ রেট বা মৃত্যু হার
৪/ লাইফ এক্সপেন্টেন্সি অ্যাট বার্থ বা প্রত্যাশিত গড় আয়ু।
৫/ টোটাল ফার্টিলিটি রেট
গ্রাফ গুলো দেখলেই চমকে যেতে হয়। সত্যিই তো। আচ্ছা এই গ্রাফ গুলোর উৎস কী? উনি উৎসের রেফারেন্স পরে কমেন্টে দিয়েছেন। http://www.indexmundi.com/। এটা একটা ডাটা পোর্টাল। অবশ্য উনি বলেছেন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের হেলথ সেকশন এ এই গ্রাফের তথ্য আছে। আমার এক বন্ধু ফোন করে বললেন, যে আমি গ্রাফ গুলো দেখেছি কিনা? আমি সম্মতিসুচক বাক্য বলায় উনি বললেন, আপনার কী চোখে পড়েছে, টোটাল ফার্টলিটি কি করে কি করে ২০০২ এর ২.৭ থেকে লাফিয়ে মাত্র ১ বছরের মধ্যে ২০০৩ সালে ৩.২ এর কাছাকাছি চলে যায়, তা বুঝতে পাললাম না। অন্য অনেকগুলি সূচকের বিবেচনায় এটা কি কখনো হতে পারে? সন্দেহ জাগে। আমার বন্ধুটি নিজেও এ নিয়ে কিছু পড়াশুনা করেছেন। সুতরাং তথ্য যাচাই করার প্রশ্ন এসে যায়। হাতের কাছে Bangladesh Demographic and Health Survey 2011 টা ছিল। পাতা উল্টেয়ে দেখা গেল, লেখক প্রদত্ত গ্রাফের সাথে তার কোন মিল নেই।
এবার আসুন আমরা উনার দেখানো গ্রাফের পাশে বিশ্ব ব্যাংকের গ্রাফ বসাই। প্রথমে নেই প্রত্যাশিত গড় আয়ুর গ্রাফটা। যেখানে ফলেন লিফ দেখাচ্ছেন ২০০৯ সালে গড় আয়ু হুট করে কমে ৬০ এর নিচে নেমেছে সেখানে বিশ্ব ব্যাংক বলছে এটা ৬৮.৩২ বছর।
এর পর আমরা ক্রুড বার্থ রেটের গ্রাফটা দেখি। ফলেন লিফের দেখানো গ্রাফের উচু নিচু বন্ধুর পথের সাথে বিশ্ব ব্যাংকের গ্রাফের কোন মিল নেই। ক্রুড বার্থ রেট একটা নির্দিষ্ট হারে ক্রমাগত কমেছে।
এরপর আমরা দেখি ডেথ রেট বা মৃত্যু হারের ডাটা। বিশ্ব ব্যাংকের ডাটা তে একটা জায়গায় উচ্চ মৃত্যু হার দেখা যাচ্ছে সেটা ১৯৭১ সাল। কেন সেটা আমরা তা জানি। কিন্তু ফলেন লিফের গ্রাফে ঠিক একই রকম একটা পিক, কিন্তু আশ্চর্য সেটা ২০০৯ এ। ২০০৯ এ কি মুক্তিযুদ্ধের মতো গণহত্যা হয়েছে?
এবার আসুন প্রত্যাশিত গড় আয়ু নিয়ে। আমার মনে হয় মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
এবার দেখি শেষ এবং যেই ডাটা নিয়ে এই অনুসন্ধান শুরু সেটা নিয়ে এই তথ্য তুলনা করা হয়েছে সরকারের তথ্যের সাথে, যার তথ্যসূত্র আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে ফলেন লিফ কোন মিথ্যাচার করেননি। উনার তথ্যের উৎস ভ্রান্ত ছিল যেটাতে উনি বিশ্বাস স্থাপন করছেন। এর দায় ফলেন লিফের নয়, বরং সেই উৎসের যা ভ্রান্ত তথ্যে ভারাক্রান্ত। ফলেন লিফের তথ্যের এই বিভ্রাট মেটাতে পারলে, উনি নিজেই দেখবেন উনার এই সংক্রান্ত সকল যুক্তি খারিজ হয়ে যায়। তার মানে ‘আওয়ামী লীগের অর্জন’ খারিজ হয়ে যায়, এই সরল সিদ্ধান্ত আশাকরি কেউ নেবেন না। আমি যেটা বলতে চেয়েছি, অর্জন দেখানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ফোকাস ঠিক হয়নি। এটা আওয়ামী লীগের মতো দলের কাছে প্রত্যাশিত নয়।
আমাকে যারা লেখার জন্য গালি দিয়েছেন তাদের বলছি, আমি আমার চিন্তাকে কোন শক্তির কাছে বন্ধক দেইনি। আমার মত হয়তো ধুলিকনার মতো ক্ষুদ্র কিন্তু স্বাধীন। আমি মনে করিনা দ্বি দলীয় বৃত্তের কাছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অসহায় হয়ে বাধা পরে আছে।
জনগন তার শক্তি নিয়ে উত্থিত হবে, সেটা আজ না হোক কাল হবেই। আমরা না পারি আমাদের সন্তানেরা পারবে। আর সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে আমার কী বোর্ড সচল থাকবে অবিরাম।