somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসিফ মহিউদ্দিনঃ ব্লগের ট্রয়ে গোয়েন্দা ঘোড়া

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্লগাররা শুধু লেখকই নন তাঁরা সৌশাল অ্যাকটিভিস্টও বটে। কারণ তাঁরা শুধু সৃষ্টির আনন্দেই লেখেন না, তাঁরা সচেতন ভাবে সমাজের সন্মুখ যাত্রার পক্ষে লেখেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র চায় তার শাসক শ্রেণীর (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, জাপা, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ইত্যাদির) স্বার্থ রক্ষা করতে আর সৌশাল অ্যাকটিভিস্ট সেটা বদলাতে চান।

আসিফ নিজের পরিচয় দেন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট বলে। যদি তাই হয়, তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে, রাষ্ট্রের বল প্রয়োগের সংস্থার সঙ্গে তার সখ্য নয় বরং সংঘাত বাঁধার কথা। যে-কোন রাষ্ট্রযন্ত্র বাই ডিফল্ট মুক্ত চিন্তার প্রতিবন্ধক। কারণ রাষ্ট্র হচ্ছে এক শ্রেণীর বিরুদ্ধে অন্য শ্রেণীর শাসনের হাতিয়ার। মার্ক্সবাদীরা মনে করেন, “রাষ্ট্র কর্তৃত্ব শীল শ্রেণী কর্তৃক তাঁর ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনবোধে বল প্রয়োগের একটি যন্ত্র বিশেষ।“ সেই কারণেই কম্যুনিস্টরা রাষ্ট্রের বিলোপ চায়। বল প্রয়োগের একচেটিয়া ক্ষমতা রাষ্ট্রের। আসিফ সেই বল প্রয়োগের জন্য তৈরি রাষ্ট্রের বিশেষ গোপন অংশের সাথে মিলে গেছে। তাঁর সাথে আলাপ ঐক্যমত হচ্ছে বল প্রয়োগের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা কার উপরে প্রয়োগ করা হবে সেটা নিয়ে। এই ঐক্যমতের বিষয়টি গোয়ন্দারা আসিফ কে জানাতে বা আসিফ তাঁর পাঠকদের জানাতে দ্বিধা করছেন না।

আরও হাজার কয়েক বাঙালী ব্লগার আছেন, যাদের কারও ক্ষমতা নেই "গোয়েন্দা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার" সাথে আলাপ করে তাঁকে কোন একটি "প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ইন্টারগেশনে" আনতে একমত করতে পারেন। কিন্তু আসিফ মহিউদ্দীন তা পেরেছেন। আসিফ মহিউদ্দিন তাঁর বন্ধুদের বুঝাতে সমর্থ হয়েছেন যে, জ্বর হলে যেমন ডাক্তারের কাছেই যেতে হয় তেমনি অপরাধ বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেবা নিতে গোয়েন্দাদের কাছে যেতে কোন বাধা নেই।

প্রচলিত আইন বা নর্ম অনুসারে গোয়েন্দারা অভিযোগ গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু তাঁরা কী ব্যবস্থা নেবে সেটা অভিযোগকারীকে কখনোই জানাবে না। আইন বা নর্ম কোনটাই এটা অ্যালাউ করেনা। তাঁরাই গোয়েন্দা দের সিদ্ধান্ত জানতে পারেন, যখন সে গোয়েন্দাদের আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অংশ হন। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় আসিফ মহিউদ্দিন অংশ নিয়ছেন। তাই আসিফ ঐক্যমতটা জেনেছেন। কারণ আসিফ সেই গোয়েন্দাদেরই একজন।

আসিফ মহিউদ্দিন নিপীড়িত হয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে। তারপরেও গোয়ন্দাদের সাথে মিলে যাওয়া কী সম্ভব? এই কথাটা মাসুদ রানা তাঁর “লেখক-গোয়েন্দা সখ্যঃ ফ্যাসিবাদ কতো দূর? “ লেখায় খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, “নিজে নিপীড়িত হয়েও নিপীড়নের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব। সমাজ-মনোবিজ্ঞানে এই মানসিকতার একটি নাম আছে। নিপীড়নের শিকার যখন নিপীড়ক ব্যবস্থার পক্ষে দাঁড়ায়, তখন তাঁর এই মনোস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াটাকে বলা হয় সিস্টেম জাষ্টিফিকেশন। সিষ্টেম জাষ্টিফিকেশনের মধ্য দিয়ে নিপীড়িত নিজের অসহায়ত্বের একটি যৌক্তিক কারণ প্রতিষ্ঠা করে আত্মমূল্য সংরক্ষণ করতে চায়। এটি হচ্ছে নিপীড়িতের ওপর নিপীড়কের হেজেমোনি বা বোধাধিপত্যের ফল। নিপীড়িতের বোধে যখন নিপীড়ক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, তখন তাকে হেজেমোনি বা বোধাধিপত্য বলে।“

আসিফ যেন এই সিস্টেম জাষ্টিফিকেশনের গ্যরাকল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন সেজন্য আমরা সকলেই আসিফের গোয়েন্দা খপ্পরে পড়ার বিষয়ে প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থানে যেতে চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম আসিফ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসুক। মাসুদ রানা গোয়েন্দা সংস্থা কে লক্ষ্য করেই বলেছিলেন, “আমি আসিফ মহিউদ্দিনের উল্লেখিত ‘গোয়েন্দা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা’র প্রতিও এই অনুরোধ করবো, দয়া করে আপনারা লেখক-বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিকদের আপনাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাথে জড়িত করবেন না। কেউ নিজে থেকে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য, খেতাব, বৃত্তি, ইত্যাদি পাওয়ার অথবা পেয়ে সুরক্ষার আশায় ‘সেলফ-এ্যাপয়েণ্টেড’ বা স্ব-নিয়োজিত হতে চাইলেও প্রত্যাখ্যান করুন। কারণ, এটি আপনারও দেশ, আপনারও জাতি। নিজের জাতির ইণ্টিলিজেনশিয়া বা বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীন থাকতে ও স্বাধীন চিন্তা করতে দিন। স্বাধীন বুদ্ধিজীবী ছাড়া কোনো জাতি সুসভ্য ওমর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে দাঁড়াতে পারে না।“ আসিফের প্রতি আমাদের সকলের তরফ থেকে মাসুদ রানার মাধ্যমে আহ্বান ছিল, “ আমি তাঁকে অনুরোধ করবো, দয়া করে তিনি যেনো এ-চর্চা বন্ধ রাখেন।“

তিনি আমাদের অনুরোধে কর্ণপাত করেননি, বরং আমাদের প্রকারন্তরে রাজাকারের সাথে তুলনা করেছেন, আমাদের চিন্তা মৌলবাদকে শক্তিশালী করছে বলে তাঁর অনুসারীদের বিভ্রান্ত করেছেন, পরিশেষে যুক্তিতে টিকতেনা পেরে আমাদের ব্যাঙ্গ করতে স্বপ্ন দৃশ্যের অবতারণা করেছেন। আসিফ নিজের অবস্থান কে ডিফেন্ড করতে চেয়েছে। তার মানে এই অশুভ সখ্য ইজ নট বাই চান্স বাট বাই চয়েস। এটি স্বতঃপ্রমাণিত যে আসিফ মহিউদ্দিন ব্লগারদের ভার্চ্যূয়াল জগতে গোয়েন্দাদের চর। রাষ্ট্র অনলাইন আক্টিভিজমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তার ফ্যাসিস্ট রুপান্তরকে অনলাইনে ডিফেন্ড করতে চায়। আসিফকে সেই কারণে গোয়েন্দাদের বড়প্রয়োজন। গোয়েন্দারা অনলাইন অ্যাকটিভিজমের কমপ্লেক্সিসিটি জানেন না, ডাইনামিজম জানেন না, কে কেমন লেখেন, কার চিন্তা কেমন সেটা জানেন না। উনাদের আসিফের মতো কাউকে প্রয়োজন ছিল। যে অনলাইন অ্যাকটিভিজমের নাড়ি নক্ষত্র জানেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এভাবেই গ্রেফতার করে বুদ্ধিজীবীদের রিক্রুট করা হয়। সে-কারণেই আজ আসিফ মহিউদ্দিন জার্মানীতে যে সুবিধা পেয়েছে, সেটি অনেকের কাছেই কিন্তু বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়েরয়েছে। আসিফ ট্রয়ের ঘোড়া হয়ে আমাদের মুক্তাঞ্চলে ঘুরবে, আর অন্ধকারে তার পেটের মধ্যে থেকে মারণাস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে আসবে শত্রুরা। আমি বাংলা ব্লগ স্পেয়ারের সবাইকে সাবধান করে দিতে চাই, কেউ যাতে তাঁদের গোপন কথা আসিফ মহিউদ্দিনকে না বলেন।সাবধানের মার নেই। আসিফের প্রিয়তম বন্ধুকেও সাবধান করে দিতে চাই। আমার আশংকা আসিফ এর মধ্যেই দল ভারী করার জন্য রিক্রুটমেন্টে নেমেছে। রকমারি বর্জন গ্রুপ বুঝতেও পারলো না আসিফ মহিউদ্দিন তাঁদের ঘাড়ে বন্দুক নয় কামান বসিয়ে দাগিয়ে দিল।

আসিফ নিজের হাতেই তাঁর ফিরে আসার শেষ সেতুটিকে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কাজ এবার ট্রয়ের ঘোড়াটিকে দুর্গের ভিতরে না এনে জ্বালিয়ে দেয়া। আসিফ বাংলা ব্লগ কে কলঙ্কিত করেছেন। আমরা তাই পুলিশের দালাল ব্লগার কে ত্যাগ করতে চাই। হে গোয়েন্দা পুলিসের এ্যাজেণ্ট আসিফ মহিউদ্দিন, আপনার জন্য করুণা হয়।কিন্তু যেহেতু আপনি পতনে গা ভাসিয়েছেন, তাই কামনা রইলোঃ আপনার অনন্ত পতন তরান্বিত হোক!
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×