মিঠুর জীবনের অনেক গল্পই অমিমাংসীত।অনেক প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। তবুও জীবনের ২৬ টি বছর পেরিয়ে এসেছেন তিনি।
দুই ভাই এক বোনের মাঝে তিনি মেজো। কর্মঠ আর মেধাীব ও। তার পরিবার তাকে বড় করেছেন একজন মানুষ হিসেবে ।
ছোটোবেলা থেকেই ডানপিটে মিঠু পোশাকের ব্যাপারে বেশ উদাসীন,ভাইদের হাফ প্যান্ট কিনে দিলে তার মন খারাপ হতো।একবার বাবার ফুল প্যান্ট কেটে হাফ প্যান্ট বানালেন তো ছাড়লেন।সেই থেকে বাড়িতে ভাইদের কাপড়ের সাথে মিলিয়ে তাকেও কিনে দেয়া হতো শার্ট প্যান্ট।
মিঠুর বাবা কখনোই চান নি তার মেয়ে নিজেকে মেয়ে মানুষ ভেবে পিছিয়ে থাকুক ,চেয়েছিলেন মেয়ে তার ছেলে দুটোর মতোই এগিয়ে যাক।কিন্তু এই অংকের হিসেব মেলাতে মিঠু কোথাও একটা গড়মিল পাঁকিয়ে ফেলে।
মিঠু টম বয়। ক্রিকেট ,ফুটবল তার প্রিয় খেলা।বাবা প্রায়ই ঠাট্টা করে বলতেন 'আমার তো তিনটি ছেলে'। ধীরে ধীরে মিঠু বেড়ে উঠল।সে নিজেকে ছেলে ভাবতেই পছন্দ করে।ছিপছপে গড়ন,বয় কাট চুল,ছেলেদের পোশাকে সে নিজের লাবণ্য কে আড়াল করে নিয়েছে নিজের অজান্তেই।
সত্যি বলতে আমাদের সমাজে এরকম অনেকেই আছেন যারা এ ধরনের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগেন ।তাদের মধ্যে ব্যাপারটি প্যাসিভ তাই আমাদের চোখ তা এড়িয়ে যায়।
বাবার ইচ্ছেয় সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিপত্তি ঘটল সেদিন যেদিন তাকে শাড়ি পড়তে বলা হলো।
অফিসে মণ্ত্রী সাহেব আসবেন,তার সম্মানে অনেক অনুরোধ করে তাকে রাজী করানো হলো। শাড়ি পড়লেন ঠিক ই কিন্তু পেটীকোটের পরিবর্তে পরলেন ফুল প্যান্ট! এক ধরনের অসস্তির মাঝে দিনটা কাটলো তার।
মিঠুর খালু এক প্রবাস ফেরত পাত্রের খোঁজ আনলেন যে কিনা মডার্ন মেয়ে খঁুজছে। যথারিতী বাবার অনুরোধে ছেলের সাথে দেখা করতে রাজী হলো সে। দ্বিতীয়বারের মতো প্যান্টের উপর শাড়ি পরলেন মিঠু।
এক রেস্তোরায় সপরিবারে দেখা করেন তারা।
ছেলে মেয়েকে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেয়া হলো।
আপনিতো বেশ সুন্দর! চুল গুলো বড় করলে মনে হয় ভালো লাগবে।শাড়িতে ভালোই লাগছে।
কিছুই উত্তর দিলনা মিঠু।
প্রায় এক ঘন্টার উপর কথাবার্তা চললো।
এক পর্যায়ে মিঠুর বাবা যাবার অনুমতি চাইলেন।
ছেলের বাবা জানালো তাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
মিঠুকে আড় চোখে সুযোগ পেলেই দেখছে পাত্র। হঠাৎ সে দেখতে পেলো শাড়ির নিচ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট!
তারিখ করার আগে মেয়ের মতামত নিতে এলেন মা।মিঠুর সোজা উত্তর বিয়ের ব্যাপারে আমার একদম আগ্রহ নেই মা। তোমরা যা বোঝো কর। আমার কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করোনা।
মেয়ের মতামত ছাড়া বিয়ে হয়?কি জানি তোকে আমি কোনোদিন বুঝতে পারলাম না।
মহা ধুমধামে মিঠু আর মতিনের বিয়েটা হয়ে গেলো।
বাসর রাতে তিনি মতিন একটা অনুরোধ করলেন,তা হলো সিগারেট খাওয়ার অনুমতি।
একটু অবাক হলেও অনুরোধ রাখলেন তিনি।
বারান্দায় বসে দুজন নববিবাহিত সিগারেট টানছেন দৄশ্যটা খুব একটা সাভাবিক না।
একটু পর আপনি আমার কাছে কিছুটা আবদার করবেন এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমার ভেতর সব সময় একটা দ্বিধা কাজ করে,আমার একটু সময় দরকার।
মতিন ভিতরের রাগ চেপে বলল আপনি শাড়ির নিচে কেনো গ্যাবার্ডিন পরেন ব্যাপারটা আজ বুঝলাম।
দু সপ্তাহের মাথায় মতিন এবং মিঠুর ডিভোর্স হয়।
কারনটা দু পরিবারের কারোরই জানা নেই।
মিঠুর মা দোষারোপ করছেন তা স্বামীকে। তার আহলাদেই নাকি আজ এ দিন দেখতে হচ্ছে তাদের।
মিঠু কিছুটা বদলে গেছে।রোজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে দ্যাখে নিজেকে ,বিড়বিড় করে কি যেনো বলে!
এরকম পরিবর্তন দেখে তার এক খালা তাকে নিয়ে যান সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে।
ডাক্তার আর মিঠু মুখোমুখি বসেছেন,পরিবেশ হালকা করতে ডাক্তার জিগেস করলেন কেমন আছেন মিঠু?
ভালো।
আপনার জীবনের গল্পটা শুনলাম আপনার খালার কাছ থেকে,তারপর ও আমি আরো কিছু শুনতে চাই,আপনার মুখ থেকে।
বলুন কি শুনতে চান?
আপনি কি রেগে আছেন?
নাহ্।
কয়েকটা প্রশ্ন করি?
হুম।
আপনি নিজেকে পুরুষ ভাবতে ভালোবাসেন?
হুম।
অকপটে স্বীকার করার জন্য ধন্যবাদ।
নিজেকে পুরুষ ভাবতে কেনো ভালোবাসেন?
তারা যতখুশি বেপরোয়া জীবন যাপন করে তারা মেয়েরা তা পারে?
কিছু মনে করবেন না,আপনার উত্তরটা সন্তোষজনক নয়।আপনি নির্দিধায় আমাকে আপনার কথাগুলো বলতে পারেন কেউ জানবেনা।
বল্লামতো!
প্লিজ,উত্তেজিত হবেন না।
আমি এখন আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবো,খোলামেলা উত্তর আশা করছি কেমন?
নারী-পুরুষের শারিরীক সম্পর্কের ব্যপারটা কেমন লাগে?
কিছুটা বিরক্ত হয়ে মিঠু বললো আশ্চর্য এগুলো কেমন প্রশ্ন?
দেখুন আপনার চিকিৎসা চলছে প্লিজ কোঅপারেট করন।
ভালো না।
কেনো?
জানি না।
কখনো কোনো পুরুষের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছেন?কোন বণ্ধু,কোনো অচেনা পুরুষ কিংবা কোনো সেলিব্রিটীর প্রতি?
না্হ এরকম কিছু মনে পড়ছেনা।আর তাছাড়া পুরুষাংঙ্গটা আমার পছন্দ নয়।
ডাক্তার তার উত্তর প্রায় পেয়ে গেছেন।
কখনো কোনো নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছেন?সানি লিওন,নাইলা নাঈম কে কেমন লাগে?
মন্দ না,মুচকী হাসল মিঠু।
আসলে আমি জানতে চাইছি আপনি কখনো কোনো নারীর প্রতি শারিরীক ভাবে আকর্ষণ অনুভব করেছেন??
প্রশ্নটা শোনা মাত্রই মিঠুর ভিতর তড়িৎ বেগে এক প্রকার শিহরণ অনুভুত হলো..মনে পড়ল তার শৈশবের বান্ধবী পৄথুর কথা।
তাদের বয়স তখন পনেরো। পৃথু প্রায়ই মিঠুর বাসায় বেড়াতে এলে দু একদিন থেকে যেতো। প্রবল আগ্রহ থেকেই তাদের মাঝে একধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।আর তা পৃথু এবং মিঠু ছাড়া কেউ জানত না।ডাক্তার কি তবে এমন কিছুরই ধারনা করছেন?
ডাক্তার অনবরত প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন কিন্তু মিঠু ভ্রুক্ষেপ করলো না। দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলেন মাথায় তার একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে-পৃথু কে তার খুঁজে বের করতেই হবে।