somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিশাপ

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ ভরা বিস্ময় নিয়ে উপরে তাকিয়ে গাছগুলোকে দেখছেন মগন মিয়া।এবার পুরা লাখের উপর খেল্মু,বিড়বিড় করে বলছেন তিনি। ওই সালাম ভালো কইরা দেইখা ল,উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন তিনি।পিছন থেকে সাইফুল বলল “আব্বা তুমি কইলে আইজে মেশিন আনাই??হ!আইজ না কাল সক্কাল সক্কাল আইতে ক,এইহানেই সাইজ করুক,আমার সামনে!বলেই বুক ফুলিয়ে হেটে চলে গেলেন তিনি।

মগন মিয়ার স-মিল আছে। বেশ ধনী তিনি। গ্রামের সবাই তার প্রতাপে তটস্থ!
গত দুই বছর ধরে হাফিজ ির্জার বাগানের তিনটা গাছ কেটে নেয়ার ভাবনায় আছেন।কিন্তু কোনভাবেই পারছেন না।
হাফিজ মির্জা বেশ পরহেজগার মানুষ ছিলেন।গ্রামের মাথা বলা চলে। অত্যন্ত আন্তরিক স্বভাবের মানুষগুলোর জীবনে কিছু না কিছু করুন কাহিনি থেকে যায়,যা সময়ের সাথে সাথে লোকমুখের গল্পের আকার নেয়। হাফিজ মির্জার গল্পটা খুব কষ্টের। দুইবছর আগে তিনি মারা জান।কারনটা কেও জানেনা। রোজ ফযরের নামাজ পড়ার উদ্দেশহে বাড়ি থেকে বের হতেন সাথে আর কয়েকজনকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।একদিন তিনি আর ঘুম থেকে উঠলেন না।দুটো বছর পেরিয়ে গেলো।
হাফিজ মির্জার তিনটি মেেয় ছিল,ছিল সহজ সরল একজন স্ত্রী। কোন এক অজানা কারনে তিনটি মেয়েই মারা যায় জন্মের ৭দিনের মাথায়।প্রতিটি মেয়ে জন্মের পরপরই একটা করে গাছ লাগিয়েছিলেন।নিজের স্ত্রী সন্তানের পর তিনি গাছগুলোকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। হতভাগা হাফিজের মেয়ে গুলো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও গাছগুলো রয়ে গেছে। বড় মেয়ের জন্মের সময় লাগানেন সেগুন,মেঝ মেইয়ের সময় কড়ই কিন্তু বাতিক্রম ঘটলো ছোট মেয়ের বেলায়, তার স্ত্রী বায়না ধরলেন যেহেতু ছোট মেয়ে আর দুজনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশী সুন্দরী তাই এবার কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো হোক।খানিকটা ব্যতিক্রম।হয়তবা বৈষয়িক ব্যপারটা অগ্রাহ্য করে গেছিলেন তারা ওইসময়। ছোট মেয়ে মারা গেলো বার বছর;তিনটা গাছই এখন বেশ বড়।
সন্তানের মত আগলে রেখেছেন তারা দুজন গাছগুলকে।হাফিজের স্ত্রীর তারপর আর কোন সন্তান হয়নি। কত মেয়ের বাবা কত প্রলভন দেখিয়েছে তাকে মেয় বিয়ে দেবার জন্ন,কিন্তু তিনি আমলে নেন নি। বিপত্তি ঘটলো হাফিজের স্ত্রী মারা যাবার পর। তিনি এতই একা হয়ে গেলেন যে প্রায়ই দেখা যেত তিনি গাছগুলোর সাথে বিড়বিড় করে কথা বলছেন নয়ত অসহায়ের মতো গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাদছেন। দৃশটা দেখেল যে কারোরই কান্না আসবে।শেষ সময়টা খুব খারাপ কেটেছে তার। পাড়ার ছোট ছেলেমেয়ে গুলো তাকে পাগল বলে খেপাত। মগন মিয়াঁ প্রায়ই গাছ কাটার জন্য তার উপর চাপ দিত।
হাফিজ মীর্জার বাড়ির দরজা গুলো আছে শুধু। আর কিছহু নেই। সব শেষ।তাদের কবর গুলো বাড়ির সাম্নেই,গাছগুলোর ছায়ায়। কোন এক ভালো মানুষের কাছে এই আবদারটুকু সম্মতি পেয়েছিলো।
মগন মিয়াঁ বেশ কয়েকবার লোক পাঠিয়েছেন গত দুই বছরে।গাছের গায়ে আঁচ টুকু লাগতে পারেনা হাফিজের বারিঘর এক ভয়ঙ্কর শব্দে কাঁপতে থাকে! মনে হয় যেন চাপা ক্রোধে রিরি করছে বাড়িটা। তার সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করছে।
প্রথম দিকে লোকজন খুব ভয় পেত। ধিরে ধিরে ভয় কমে এলো। একবার এক লোক সেগুন গাছটার গায়ে প্রথম কোপ বসাল আর অমনি কিভাবে যেনো লোকটা অনুভব করল তার মাথায় বেশ শক্ত কিছু একটা দিয়ে কেও আঘাত করেছে। মূর্ছা গেলো সে। অথচ আশেপাশের মানুষ কিছুই দেখতে পায়নি। ঘটনা দেখে মগনের গলা শুকিয়ে আসে।নিজেকে সাম্লে নিয়ে সে চেঁচিয়ে বলে “ওই শালারে গ্লুকোজ খাওয়া শরিলে জুর পাইতাসেনা” পিছন থেকে ফিস্ফিসিয়ে মগনের বউ বলল “এই গাছটির লুভ ছারতে পারেন্না??”তুমি ছুপ থাকো! মহিলা মানুষ কি বুজো? যাও ভিতরে গিয়া ভালোমন্দ রান্ধ,শহর থিকা গাছ দেখতে লোক আসবে!মুখ বেকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন তার স্ত্রী।
এই ঘটনার দুই মাস পর মগন লোক পাঠালেন আবার। ঠিক করলেন আগে কড়ই গাছটা কাটবেন। বেশ করা রোদ উঠেছে! মগন হাফিজের বাড়ির ভিতর থেকে উঁকি মেরে মেরে আদেশ দিচ্ছেন কি ভাবে কি করতে হয়।এবার গাছে ঠিকমতই কাটাহছহিল কিন্তু মগনের পছন্দ হচ্ছিল না।িত্তেজিতভাবে এগিয়ে গেলেন কিভাবে কি করতে হবে দেখাতে প্রথম সিঁড়ি তে পা পিছলে পাটা ভাংলেন।অথছ পিছলে যাবার কোন কারন কেও খুজে পেলনা।
মগনের স্ত্রী আর ছেলে সাইফুলের চাপাচাপিতে তিন মাস বিরতি দিলেন মগন।

শহর থেকে বড় ট্রাক আনা হলো এবং যথারীতি সেগুন আর কড়ই গাছ কেটে নিল তারা। হাফিজের বাড়িটা বিকট শব্দে কেঁপেছিল সেদিন।তারপর থেকে বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই লোকজন কান্নার শব্দ শুনতে পেতো।

একসাথে খেতে বসেছেন মগন আর সাইফুল।“আব্বা কাম তো সাইরা ফালাইলাম। টেকা পাইয়া জামু এই মাসেই!” মুচকি হাসল মগন,ভাবখানা এরকম যেন এবার সে হাফিজ মীর্জাকে হারিয়ে দিয়েছে। “পরেরটার কি ভাবসস?” ওইটারেও ব্যবস্থা করতেসি,সময় লাগব!ঃদেরি করিস না,বুজস্না? বাপ ছেলের মাঝে ইশারায় কি কথা হলো মগনের স্ত্রী বুঝতে পারলেন না।

সাইফুল শহরে যাবে। এনিয়ে কথা চলছিল তাদের। মগনের স্ত্রী পান বানিয়ে দিচ্ছেন স্বামী আর ছেলেকে। পান চিবুতে চিবুতে মগন বললেন,” তর মারে একখান চেইন কিনা দিস,মহিলা মানুষ মুখ ফুইটা কিসু বলেনা কিন্তু আমি তো বুঝি,কি কও? স্ত্রী কিছু না বলে লাজুক হাসি হাসল।

পনেরদিন পর সাইফুল বাড়ী এলো। চকচকে সুন্দর স্বর্ণের চেইন পেয়ে মগনের স্ত্রীর মনটাই চাঙ্গা হয়ে গেল।স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজ করছেন।ছেলের পছন্দের পায়েস করেছেন, বাটিতে বেড়ে দিচ্ছেন,মগনের চামচটা মাটিতে পরে গেল,চামচ তুলে দিতে গিয়ে স্ত্রী কেমন যেন অসুস্থ বোধ করলেন। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।খুব জোড়ে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। ইশারায় বুঝাতে চাইছিলেন গলায় কিছু একটা পেঁচিয়ে গেছে,মগন তার গলার দিকে তাকাতেই যেন মনে হল মোটা একটা দড়ি তার স্ত্রীর গলায় শক্ত করে পেঁচিয়ে গেছে।কিছু করার আগেই মূর্ছা গেলেন মগন।তার স্ত্রী ওখানেই মারা গেছেন।

তিনমাস পরের কথা।এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী মগনকে একটা ইজি চেয়ার উপহার দিয়েছেন।হাফিজ মীর্জার গাছের কাঠ দিয়ে বানানো।একা থাকেন তাই বেশিরভাগ সময় উঠোনেই বসেন, আজ কৃষ্ণচূড়া গাছটার কথা মনে পড়ায় চেয়ারটা হাফিজ মীর্জার উঠোনে নিয়ে গেলেন, সুক্ষ দৃষ্টি নিয়ে দেখছেন গাছটাকে, ভাবছেন এবার সাইফুল এলে এটাকে ব্যবস্থা করতে হবে। আজ রোদটাও কম,আবহাওয়াটাও বেশ। হঠাত মগনের চেয়ারটা দুলতে শুরু করলো প্রথমে ভাব্লেন ভুমিকম্প কিনা!কিন্তু না,দুলুনি বেড়েই চলেছে।ইজিচেয়ার কোনভাবেই এভাবে দোল খাওয়ার কথা নয়,কিন্তু কি অদ্ভুত!ভরদুপুর বেলা আশেপাশেও কেউ নেই।ঘাবড়ে গেলেন মগন।চেয়ার থেকে নামার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন কিন্তু প্রচণ্ড এক ধাক্কায় বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে মুখ থুবড়ে পড়ে ওখানেই মারা গেলেন মগন। চেয়ারটা তখনো দুলছিল!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×