মায়ের জন্য একটু লেখা (বিশ্বকবির কাছ থেকে ধার করা)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই শুরু হয়ে গেছে মা দিবস ...ভাবলাম মাকে নিয়ে কিছু লিখি ..কিন্তু লিখার মত আসলে কিছু খুজেঁ পাচ্ছি না..মুখে আসছে অনেক কিছু কিন্তু সেটা লিখতে পারছি না ..আসলে যা অনেক আপন ,অনেক ভালবাসার তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টকর ,বোবাদের মত মুখ দিয়ে অনেক কিছু বের হতে চায় কিন্তু বোবাতো বোবাই সে প্রকাশ করবে কিভাবে..
অবশেষে ছোটবেলার একটা কবিতা মনে পড়ল..বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকীর প্রক্কালে এই কবিতাটি মনে পড়াই স্বাভাবিক ...
তাই তার অসাধারণ এই কবিতাটি শেয়ার করলাম...যখন ছোট ছিলাম তখন কেমন যেন এই কবিতাটি বুঝতে পারতাম না্,আজকে আবার কবিতাটির নতুন জন্ম হল আমার কাছে ...
বীরপুরুষ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার 'পরে
টগ্বগিয়ে তোমার পাশে পাশে।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।
সন্ধে হল, সূর্য নামে পাটে,
এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে।
ধূধূ করে যে দিক-পানে চাই,
কোনোখানে জনমানব নাই,
তুমি যেন আপন-মনে তাই
ভয় পেয়েছ-- ভাবছ, "এলেম কোথা!'
আমি বলছি, "ভয় কোরো না মা গো,
ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।'
চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে,
মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে।
গোরু বাছুর নেইকো কোনোখানে,
সন্ধে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে,
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,
অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
"দিঘির ধারে ওই যে কিসের আলো!'
এমন সময় "হাঁরে রে রে রে রে,'
ওই যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে।
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
"আমি আছি, ভয় কেন মা কর।'
হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল,
কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল।
আমি বলি, "দাঁড়া, খবর্দার!
এক পা কাছে আসিস যদি আর--
এই চেয়ে দেখ্ আমার তলোয়ার,
টুকরো করে দেব তোদের সেরে।'
শুনে তারা লম্ফ দিয়ে উঠে
চেঁচিয়ে উঠল, "হাঁরে রে রে রে রে।'
তুমি বললে, "যাস নে খোকা ওরে,'
আমি বলি, "দেখো না চুপ করে।'
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
ঢাল তলোয়ার ঝন্ঝনিয়ে বাজে,
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে,
শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।
এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে
ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, "লড়াই গেছে থেমে,'
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে--
বলছ, "ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল!
কী দুর্দশাই হত তা না হলে।'
রোজ কত কী ঘটে যাহা-তাহা --
এমন কেন সত্যি হয় না, আহা।
ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,
শুনত যারা অবাক হত সবে,
দাদা বলত, "কেমন করে হবে,
খোকার গায়ে এত কি জোর আছে।'
পাড়ার লোকে সবাই বলত শুনে,
"ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।'
এই খোকার মত মাকে ভালবাসতে চাই ...মা যেন আমাকে নিয়ে অহংকার করতে পারে ...আর এভাবেই বলতে যেন পারে " "ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।'"
কিন্তু পারব কি?????
মাকে নিয়ে আমার আর একটি লিখা(৬/০৪/২০১০)
মা দিবসে(৮ই মে ২০০৯) লিখা আমার ১ম পোস্ট
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন
যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।
আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন