somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৭ বছরের উত্থান-পতনের মাঝেও স্বকীয়তায় উজ্জ্বল রাজনীতিবিদ বেগম খালেদা জিয়াঃ যেতে হবে আরো দূর

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেগম জিয়া যখন বি এন পি এর চেয়ারম্যান হোন (১২ জানুয়ারি, ১৯৮৪) তখন আমার বয়স মাত্র ২ বছর তাই সেই সময়ের কোন কিছু বলা হলে তা হবে লব্ধ জ্ঞান থেকে বলা। এই ধরনের বলা অনেকেই হয়তো পছন্দ করবেন না। রাজনীতির ব্যাপারে জ্ঞান লাভ শুরু করি ১৯৯০ সালের শেষের দিক থেকে যখন এরশাদ পতন আন্দোলন চরমে। মূলত এই সময় খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আপোষহীনতার সুত্রপাত। লব্ধ জ্ঞান থেকে জানতে পারি এই সময় ৭ দলীয় জোটের নেত্রী ছিলেন বেগম জিয়া আর অপরদিকে ৮ দলীয় জোটের নেত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। এরশাদ সরকারের পতনের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের অধীনে হলো ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন যাতে বি এন পি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করে সরকার গঠন করে। মূলত এই সময় থেকেই রাজনীতির ব্যাপারে সম্যকভাবে জ্ঞান লাভ করা শুরু করি। এর আগে জিয়াউর রহমানের প্রশংসা শুনতাম আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছে যিনি এক সময় ছাত্রলীগ করতেন। শেখ মুজিব দেশের স্বাধীনতার জন্যে যে ব্যাপকভাবে কাজ করেছেন সেগুলো সবই ছিলো শোনা। কিন্তু ১৯৮১ সালের পর ১০ বছর একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থার পরে একটা প্রভাব বিহীন নির্বাচনে যখন দেশের জনগন জিয়াউর রহমানের দলটিকেই নির্বাচিত করে তখন সহজেই যেটা অনুমান করা যায় তা হলো জিয়াউর রহমানের ৪ বছরের অর্জিত জনপ্রিয়তা এবং পরবর্তীতে বেগম জিয়ার সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখার প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতার একজন অন্যতম পথিকৃত ছিলেন, সেই সময় দেশে রাজনৈতিক দল বলতে ছিলো শুধু আওয়ামী লীগ যারা এখনো নিজেদের দাবী করে একমাত্র স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে অথচ এই দলটি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১০০ টি আসনও পেলো না। যারা গোঁড়া রাজনীতির বাহিরে তারা কি একবার চিন্তা করেছেন কেন এমন হলো। আজ আদালত থেকে রায়ে দেখা যায় জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা নেওয়া নাকি অবৈধ ছিলো তার মানে তিনি অন্যায় করেছিলেন। তিনি এমন অন্যায় করেছিলেন যে দেশের জনগন তাকে শাস্তি দিয়েছিল মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে বলাকা মোড় (আমার বাবা এবং ওই জানাজায় উপস্থিত অনেকের ভাষ্যমতে) পর্যন্ত জানাজায় শরিক হয়ে এবং ১৯৯১ সালে তার দলকে বিজয়ি করে। ১৯৯১ সালের আগে তো শেখ হাসিনাও প্রায় ৯ বছর দলের সভানেত্রী ছিলেন তারপরও তার দলের এইরকম দশা হলো কেন এইরকম ভেবেছেন কি?

বিভিন্ন সেকেন্ডারী তথ্য থেকে জানা যায় এবং এখনো এই বিষয়গুলো যখন উচ্চারিত হয় আওয়ামী লীগ থেকে কোন প্রতিবাদ করা হয়না যেমনঃ ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ যখন ক্ষমতা গ্রহন করে তখন শেখ হাসিনা নাকি বলেছিলেন- 'আই এম নট আনহ্যাপি'। ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবেন না বলেও ২ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনে যান। ঠিক যেমন এই সময়ের '১০ টাকা কেজি চাল খাবো, নৌকা মার্কায় ভোট দিব" বলে কিছুদিন আগে বললেন- আমি এই রকম কোন কথাই বলিনি। অপরদিকে বেগম জিয়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যে আপোষহীন ভূমিকা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পালন করেছেন তা থেকে বিচ্যুত হন নাই আর তাই জনগন শহীদ জিয়ার ব্যক্তি সততার ছায়া হয়তো খুজে পেয়েছিলেন তার ভিতরে এইজন্যেই বিনা দ্বিধায় সরকার গঠনের ম্যান্ডেট দিয়ে দিয়েছিল তার দলকে। দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে তা ছিলো এক অসাধারন সাফল্য।

জোয়ার-ভাটার ভোটের বাজারে হয়তো পরপর তার দল ক্ষমতায় যেতে পারেনি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই অনেক বেশি প্রতিক্রিয়াশীল, যারা তাদের আবেগ বুঝে মিথ্যা আশ্বাস দেয় তাদের বিস্বাস করতেও তারা এতটুকু চিন্তা করেনা। আর তাই দল হিসেবে বি এন পি এর উপর টানা আস্থা রাখতে পারেনি এ দেশের জনগন। কিন্তু স্বকীয়তা আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া নিজেকে স্থাপন করেছেন প্রতিপক্ষের নেতা হতে অনেক উপরে। এই পর্যন্ত কোন নির্বাচনে তিনি হারেন নি অথচ শেখ হাসিনা ১৯৯১ এবং ২০০১- ২ বারই কোন না কোন আসনে হেরেছেন। মুখের ভাষা ব্যবহারে বরাবরই বেগম জিয়া সংযত, জাতীয় নেতা বা সম্মানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সংসদের ভিতরে বা বাহিরে লক্ষ্যনীয়ভাবে কোনসময় কটু কথা বলেন নি যা তাকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। অনেকেই তার ব্যক্তিগত জীবন যাপন নিয়ে কথা বলে- তাদের প্রতি আমার অনুরোধ খালেদা জিয়া কে প্রথম একজন মানুষ হিসেবে দেখুন যার নিজের জীবন-যাপন পদ্ধতি আছে আর তা যদি তিনি কারো ক্ষতি করে না করেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত না। উনি কি রকম শাড়ী পরেছেন, কি লিপ্সটিক দিয়েছেন এইসব প্রশ্ন করার আগে চিন্তা করুন তিনি কি ধরনের ব্যক্তিত্ব ধারন করেন। শেখ হাসিনার মত তিনি বছরে কাজে/বিনা-কাজে কয়বার বিদেশে যান। কোন গবেষনা না করেই বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়ার প্রবনতা শেখ হাসিনার থাকলেও এইরকম আলগা ফুটানি বেগম জিয়ার মধ্যে ছিলো না



তারপরো আমি বলব না যে তার কোন ভুল হয়নি। ভুল মানুষেরই হবে। যে জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগুনাবলীর জন্যে আজও বাংলাদেশের জনগনের কাছে বি এন পি একটি আশার মূর্ত প্রতিক, দুঃখজনক হলেও সত্যি ১৯৯১ পরবর্তীতে বি এন পি এর নেতাদের সম্পদ-লিপ্সা সেই মহান নেতাকে খাটো করেছে। তার নিজের ছেলেদের ব্যাপারেও এইরকম সাংঘাতিক অভিযোগ এসেছে যা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জিয়া ভক্ত সাধারন মানুষদের চরমভাবে ব্যথিত করেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দুর্নীতি কোন বড় ঘটনা না কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি অনেক বড় হয়ে যায় কারন সাধারন মানুষের মধ্যে 'আঙ্গুর ফল টক' মানসিকতার জন্যে। এই আঙ্গুর ফলকে মিষ্টি করা সম্ভব যদি এই মানুষদের সামান্য ন্যায্য দাবীগুলো মেনে নেওয়া যায় এবং তাদের জন্যে সত্যিকারভাবেই কিছু করা হয় বৈষম্যহীন ভাবে। সমস্যা হলো জনপ্রিয় নেতারা (যেমন তারেক রহমান) হয়তো ধরতে পারেন না কে তার চাটুকার আর কে তার আসলেই প্রশংসা করছে। বেগম জিয়া এই চাটুকার প্রভাব থেকে নিজেও মুক্ত হতে পারেন নি এবং নিজের ছেলেদেরও মুক্ত করতে পারেন নি। এই চাটুকারগুলোই সম্পদের মচ্ছব গড়ে আর বিপদের সময় সটকে পড়ে। আবার সুসময়ে নতুন চাটুকার শ্রেনী সেই জায়গা দখল করে। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কাছে তাই আমার একান্ত অনুরোধ- বি এন পি যেন বাংলাদেশের জনগনের ভালোবাসায় সম্পদশালী থাকে, পার্থিব সম্পদের দিকে না ঝোকে সেই দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন।

আরো একটি অনুরোধ একজন সাধারন কিন্তু নিবেদিত জাতীয়তাবাদি সমর্থক হিসেবে করতে চাই তা হলো দয়া করে কথামালার রাজনীতি থেকে এখন বের হয়ে আসুন। ২৭ বছরে দেশের মানুষের মানসিকতার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের ভিতর উচ্চ শিক্ষার হার বেড়েছেন, স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা বেড়েছে, বিভিন্ন মিডিয়া বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে কারো আত্মপ্রচারের প্রতি মানুষের বিমূখতা। টিভি বিজ্ঞাপন গুলোর মানূষের বিরক্ত হওয়া দেখেই তা বোঝা যায়। কেই আর প্রচারনায় অতটা বিশ্বাস রাখেনা। মানুষ দেখতে চায় কাজের প্রতিফলন। সুদীর্ঘ ২৭ বছর বিভিন্ন উত্থান-পতনের মাঝেও নিজস্ব স্বকীয়তা আর ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে যে এক অনন্য অবস্থান আপনি তৈরি করেছেন তা দিয়ে আরো কিছুটা পথ আপনি পাড়ি দিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। যে দল নিজের প্রতিষ্ঠাতা (মৌলানা ভাসানী) কে ভুলে যেতে চায়, যে দলের লোক (তাজউদ্দিন আহমেদ) স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনা করার পরও 'জাতীয় সরকার' গঠন করার প্রস্তাব দেয়ায় মন্ত্রীসভা থেকে বের করে দেওয়া হয়, যে দলের নেত্রী ওয়াদার বরখেলাপের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সেরকম মোনাফেক দলের বিপরীতে দেশের জনগন আপনার দলকে পছন্দ করে আপনার স্বামী এবং আপনার ব্যক্তিগত গুনাবলীর কারনে। এটা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার সব জেনারেশনের কাছে। তাই আপনাকে আরো রাস্তা পাড়ি দিতে হবে। মহান আল্লাহপাক আপনার সহায় হোক।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫৩
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×