somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিতান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরির পাতা; অতপর আবিদ ভাই

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের মত অলেখকদের লেখাহীন হতে কোনো উপলক্ষের দরকার হয়না। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ একদিন দেখি আর লিখতে পারছি না, আর কারণ থাকলেতো কথাই নেই। অন্যদিকে লেখায় ফিরতে প্রয়োজন হয় নানা ধরনের কসরত আর দেনদরবারের।

সম্প্রতি সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হওয়র পর যতটা না অসুস্থতা, তার চেয়ে বেশি অবসাদের কারণে ব্লগে আসতে পারিনি, লেখাও হয়নি। তারপর ফের ঘুম ফের জাগা ব্যস্ততা’র নিয়ম ধরে আবারও ব্লগে ফেরার পর লেখা যখন আসবো আসবো করছে, তখুনি শুনি আবিদ ভাই করোনা আক্রান্ত!

আবিদ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় কবে থেকে শুরু, কবে সেটা গাঢ় হলো, কবে আমরা আপনজনের বলয়ে ঢুকে গেলাম, সেটার দিন তারিখ টুকে রাখা হয়নি কোথাও। আমার শুধু মনে পড়ে- বেসরকারি উদ্যোগে দেশের প্রথম ক্রীড়া পুরস্কার প্রবর্তনের আয়োজনে জড়িত ছিলেন আবিদ ভাই। আমি অ্যাড ফার্মে থাকাকালীন এক লম্বা বিকেলে তিনি এসেছিলেন শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কাজে। আমরা সারারাত জেগে কাজগুলো শেষ করেছিলাম। শেষরাতের দিকে আবিদ ভাই স্টুডিওর ফ্লোরে ম্যাটের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েন। আমি কিছুক্ষণ ঘুমন্ত আবিদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, পেশায় ডাক্তার, মধ্যবয়স্ক এই ভদ্রলোক কিসের প্রেরণায় সারারাত জেগে অপেশাদার কাজ করছেন?

পরিচয় ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়ার পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছি যে ডাক্তারি করাটাই তাঁর কাছে অপ্রয়োজনীয়, বাকি যেসব কাজ তিনি করেন, সেগুলোই বরং তাঁর আত্মার খোরাক, ভালোলাগার যায়গা।

সাফল্যের সঙ্গে এমবিবিএস পাশ করা এবং বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার-এ যোগদান সূত্রে আবিদ ভাই ডাক্তার, কিন্তু আদতে তিনি একজন সুপার ক্রিয়েটিভ মানুষ। আবিদ ভাই লেখক, উপস্থাপক, একটা বাংলা দৈনিকের স্বাস্থ্যপাতার সাথে জড়িত, একই ধরনের একটা মাসিকের সম্পাদনা করেন, মঞ্চ নাটক বা সাংস্কৃতিক আয়োজনে যুক্ত থাকেন, টিভিতে কাজ করেন। শিশু সংগঠনের সাথেও আছেন। আবিদ ভাই বুদ্ধিবৃত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগের সাথে যুক্ত থাকেন, সর্বোপরি তিনি ‘ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানো’য় ওস্তাদ ধরনের বিরল একজন মানুষ।

এই চরিত্রের কারণে ডাক্তারিটাই আর করা হয়ে ওঠেনি ঠিকমত। যতদিন চাকুরিতে ছিলেন, তদ্দিন মিরপুরের সরকারি হোমিওপ্যাথি কলেজে ছিলেন অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারি কি সব বিষয়ে পড়ানোর জন্য। যেহেতু হোমিও কলেজ, অ্যালোপ্যাথিক সাবজেক্টের খুব একটা ‘বেইল’ হয়তো ছিলো না, আবিদ ভাইও সময় কাজে লাগিয়ে সমানে ভালোলাগার যায়গাগুলোতে সময় দিয়ে গিয়েছেন।

তারপর একদিন সরকারি চাকুরির ধারাবাহিকতায় ঢাকার বাইরে বদলি করে দিলে আবিদ ভাইও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। অবলীলায় চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় থেকে গিয়েছেন আর মোষ তাড়িয়ে চলেছেন। এই মোষ তাড়ানোর সুবাদে তার বন্ধু-শুভাকাঙ্খির সংখ্যাও চোখ কপালে তোলাম মত। যে কারণে নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই দেশের সেরা চিকিৎসার পাশাপাশি অসংখ্য মানুষের দোয়া, শুভকামনা পাচ্ছেন।

পেশাদার ডাক্তার না হলেও ডাক্তারি পরামর্শ নিতে আবিদ ভাই-ই আমার মত অনেকের জন্য সেরা বিকল্প। গত মাসে আমি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আবিদ ভাই প্রত্যেকদিন ফোনে খোঁজ নিয়েছেন, করণীয় বাতলেছেন। সেভাবেই চলছিলো। মাসের শেষের দিকে আমরা তো নেগেটিভ হলাম, কিন্তু এর দুদিন পরই জানলাম- আবিদ ভাই নিজেই করোনা আক্রান্ত। ৩০ শতাংশ অকার্যকর ফুসফুস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্লাস অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট লাগছে!

মনটা বিষাদাক্রান্ত হয়ে আছে। আবিদ ভাই আমার চেয়ে কমপক্ষে ১৫ বছরের বড় হয়েও যেভাবে স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন, সে বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ বা ইচ্ছে আমার নেই। আমার মত এরকম আরও অনেকেই আছেন, যাদের একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন- “আমার বেড়ে ওঠার বেলায় মেন্টরদের একজন। ব্যতিক্রমী মেধার একজন মহীরুহ- যার সাথে আমার শৈশব কৈশোরের কত কত স্মৃতি! একজন ডাক্তার হয়ে নিজ হাতে চিনিয়েছেন প্রিন্টিং পাড়ার অলিগলি- বুনে দিয়েছেন শিল্পীত স্বপ্ন দেখার বীজ। কম্পিউটার গ্রাফিকস যখন তেমন কেউই জানতো না, তার হাত ধরে ঘুরে ঘুরে জানলাম, চিনলাম! কত কত প্রোগ্রামের স্টেজ, ব্যাকড্রপ আর নাটকের শিল্পনির্দেশক এই আবিদ ভাই...

ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো'র মত পরোপকারী এই আবিদ ভাই আজ হাসপাতালে ভর্তি, করোনা আক্রান্ত হয়ে। আমার অন্তর বলছে, তার ব্যস্ততার মাঝে এটা একটা ঐশী ইন্টারভেনশন, ইনশাআল্লাহ তিনি দ্রুতই আরোগ্য হয়ে ফিরে আসবেন- যাতে আমরা আমাদের সামান্য খুঁটিনাটি অসুবিধায় ওনাকে বার বার জ্বালাতে পারি- যাতে এক বসায় ঘন্টা দুয়েক (মিনিমাম!) সরেস আলাপন চালাতে পারি। যারা আবিদ ভাইকে চেনেন, প্লিজ কল দেবেন না- দোয়া করুন, আর বেশী মনে চাইলে মেসেজ করুন! ওনার খুবই বিশ্রাম দরকার!”


ছবিসূত্র: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১০
১৬টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×