এখানে বামপাশের সুউচ্চ মিনার থেকে পবিত্র আযানের ধ্বনি মুসল্লীদের কানে ভেসে যাওয়ার পর হাজারো মুসল্লীদের আগমনে বামপাশের গুম্বুজবিশিষ্ট বহুতল মসজিদ ভরে উঠে।
এখানে নিয়মিত অর্থাৎ নামাযের জামাত চলাকালীন সময় ছাড়া পবিত্র কুরআনের আওয়াজ জারী থাকে, কেউ কুরআন হাতে নিয়ে কেউবা নিজের মুখস্থ থেকে তিলাওয়াত করে যাচ্ছে- সূরা ফাতিহা, ইয়াসিন, ওয়াক্বিয়াহ, আররাহমান, মুলক, মুযাম্মিল, ইখলাছ, ফালাক্ব, নাছ, কাফিরুন, আয়াতুল কুরসী, অথবা পূর্নাঙ্গ আল কুরআন।
এখানে রাসূল (সাঃ) এর ওপর দরুদ পড়া হয়, মিলাদ-ক্বিয়াম করা হয়। এখানে ইসতিগফার শরীফ পাঠ হয়, খোদার রাহে যিকির-আযকার হয়, ওযীফা পাঠ হয়। উসীলা নিয়ে দোয়া করা হয়।
এখানে ফকীর, ইয়াতিম আর মিসকিনদের সাহায্য করা হয়। ল্যাংড়া-আতুরদের সহায়তা করা হয়, এতিম ছাত্রদের ইসলামি আর সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়। মাহে রমদ্বানে পবিত্র কুরআনের শুদ্ধ তিলাওয়াত শিক্ষা দেওয়া হয়।
উপরোক্ত সবগুলোই ভাল কাজ কিন্তু এর একটিও কেউ গলা উঁচিয়ে বলতে চায় না অথবা বলার সাহস পায় না।
নিন্দুকেরা যা বলে তা হচ্ছে- এখানে যিয়ারতের নামে মাযার পূজা হয়, দরগাহকে বলে দূর্গা, পবিত্র গিলাফকে বলে মশারী (নাউজুবিল্লাহ)।
উপরের সবগুলো ঘটনা দরগাহে শাহজলাল (রহঃ) এর সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। এতসব ভালকাজের ভিড়ে বিচ্ছিন্ন কয়েকটা খারাপ কাজ হয় সেটা আমি মানি। ধানের মাঝে কয়েকটা ছোঁচা থাকবে তার মানে এই নয় যে গোটাধান ফেলে দিতে হবে। পবিত্র ওরসকে কেন্দ্র করে তথাকথিত গান-বাজনা হয়, গাঁজার আসর বসে, জুয়ার আসর বসে, আবাসিক হোটেলগুলোতে পতিতাবৃত্তি হয়। কিন্তু এর একটিও ওরসের অংশ না, এই খারাপ কাজগুলো ওরস বহির্ভুত।
ওরস মানে হচ্ছে কোনো ওলীর মৃত্যু দিবসে তাঁর ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে যে ভাল কাজগুলো করা হয় সেটাই। কিন্তু আমরা ওরস শব্দটা শুনলেই কেন জানি সব ভন্ডামী-ভন্ডামী বলে দূরে সরে যায়।
ওলীকূল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ৬৯৬তম ওরস মোবারকের শেষদিন আজ। গতকাল শুক্রবারে শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী এই ওরস আজকে আখেরী মোনাজাতের মাধমে শেষ হবে। মোনাজাতে দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করা হবে।
হযরত শাহজালাল রহ. সম্পর্কে আমাদের সবারই কম বেশী জানা আছে, তারপরেও এখানে যদি তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা না বলি নিজেকে বড়ই নিমক হারাম লাগবে...
পাক-ভারত বাংলাদেশ তথা এ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে ওলি, দরবেশ ও ওলামায়ে কেরামের মাধ্যমে। তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে একমাত্র ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করেন। সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি নয় বরং আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমেই এ সকল ওলি-দরবেশগণ এ দেশে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। যার ফলে বাংলাদেশ আজ একটি মুসলিম রাষ্ট্রহিসেবে বিশ্বের দরবারে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
ইসলাম প্রচারের এ ধারাহিকতায় বিশেষত সিলেটে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যে নামটি সর্বাগ্রে উচ্চরিত হয়, তিনি হলেন হযরত শাহজালাল মুজাররদ ইয়ামনী (রহ.)। তাঁর সাথে তিনশত ষাট জন আউলিয়ায়ে কেরাম ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করেন। প্রধানত তাঁদের তাবলীগে দীন ও সুমহান চরিত্র মাধুর্যে আকৃষ্ট হয়ে বহু লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর আধ্যাত্মিক প্রভাব ক্রমে ক্রমে সিলেট জেলার সমস্ত এলাকা ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে।
পরিশেষে এই মহান ওলির ওফাত দিবসে তাঁর ইসলামের প্রতি, মানুষের প্রতি মহান অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছি। বর্তমান সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মানবতা আজ নির্বাক, গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, চারিদিকে অস্থিরতা লাশ আর বারুদের গন্ধে চরম শূণ্যতায়, হতাশায় আর স্থবিরতার মাঝে আল্লাহর ওলীকে স্বরণ করছি। তার অমর স্মৃতি চির জাগরুক থাকুক সুন্দর এ বসুন্ধরায়।
আমরা যেন তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে পারি। আল্লাহর কাছে এ দোয়া করি।
-(আমিন)