somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্নার লোনা জলে ঈদ...

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কান্নার লোনা জলে ঈদ...
পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ বহন নাকি পৃথিবীর সবছে ভারী বোঝা, আর সেটি যদি হয় ঈদের দিন এবং সেটি যদি হয় ৩১বছরের এক যুবক সন্তানের, সেটি যে কতটা যাতনার, কষ্টের, দু:খের, ব্যাদনার, হতাশার, আহাজারির তা অন্য কেউই বুঝবেনা। আমার আব্বা আম্মার হৃদয়ের যে অসহ্য যন্ত্রনা কলিজাকে কুট কুট করে খাচ্ছে তার সান্তনা কিভাবে দেই।

আমার অতি আদরের আপন ছোট ভাই মো: নাছির উদ্দিন বিগত ১৭.০৭.১৫ইং (ঈদুল ফিতরের আগের দিন) দুপুর পৌনে ১টায় এপলাষ্টিক এনেমিয়া নামক রক্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালে (আইসিইউ তে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।। দীর্ঘ ২মাস হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতো সূস্থ্য হয়ে আবার বাড়ী যাবে, সিঙ্গাপুর গিয়ে আবার কাজে যোগদান করবে, আবার নিয়োজিত হবে দ্বীনের খেদমতে। চিকিৎসার জন্য ১৪লক্ষ টাকা খরচ করার উদ্দেশ্য ছিল ভাইটি আবার মুছকি হেঁসে বাড়ী যাবে। নিন্মমধ্যবৃত্ত পরিবারের পক্ষে যতটুকু করা যায় আমার বিশ্বাস তারছেয়ে অনেক বেশি প্রচেষ্টা আমাদের ছিল। এই ক্ষেত্রে মহান রবের করুনায় অনেক বেশি সিক্ত হয়েছি। ৫২ ব্যাগ রক্ত যোগার করার তাওফিক কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। শুন্য হাতে যখন টাকার জন্য দিক বিদিক ছুটছি তখনই ডাক্তার বললো একডোজ ইনজেকশন (এটিজি) দিতে হবে, বাংলাদেশে যার মূল্য ৮লক্ষ ৬০হাজার টাকা। এত টাকার বিরাট চাপটা কাকে দেব? আব্বা আম্মাতো এমনিতেই অসুস্থ্য হয়ে গিয়েছে, পরিবারেরর দু:সময়ে যে টাকার যোগান দিতো সেতো নিজেই বেডে শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে, আর ছোট ছোট দুটি ভাই, ইন্টার লেভেলের ছাত্রদের কিইবা করার আছে। মহান রবের একান্ত অনুগ্রহে সেই ইনজেকশনও শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়া থেকে কালেকশন করা গেছে। ৪দিনের মধ্যে ৩দিন পুশও করা হয়েছে। কিন্তু হটাৎ প্লাটিলেট মারাত্বক পর্যায়ে কমে যাওয়ায় প্লাটিলেট দেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। ঈদের মাত্র একদিন আগে ব্লাড ডোনার পাওয়া যখন দুষ্কর সেই মূহুর্তে একে একে ৬জন ডোনার রিফিউজ হলো বিভিন্ন কারনে। খুবই অসহায় মনে হচ্ছিল। ব্লাড ব্যাংকের বাইরে বসে আছি, টপ টপ করে ঝরছে চোখের পানি, মনে মনে প্রভূর কাছে বললাম মাবুদ গত দুই মাসেতো একদিনও এভাবে ফেরত দাওনি, আজও জোগাড় করে দাও। আল্লাহ কবুল করলেন। ডোনার পেলাম কিন্তু স্কয়ার হসপিটালের উদ্ভট নিয়মের কারনে মূমুর্ষ রোগীর জন্য শত অনুরোধ করেও প্লাটিলেট প্রসেস করতে পারলাম না। তারা নাকি বিকেল ৫টার পর বাহিরের রোগীর রক্ত প্রসেস করেনা। কত বললাম যে আমার ভাইটির অবস্থা খুবই খারাফ, রাতে প্লাটিলেট না দিলে হয়ত শরীরের বাকী রক্তও ঝরে যাবে। ঠিক তাই হলো নিয়ম মেনে সকাল বেলা প্লাটিলেট প্রসেস করতে করতেই আমার ভাইটির পালস জিরোতে নেমে আসে। হায়রে নিয়ম, হায়রে আইন! নিয়ম হবে মানুষের কল্যানের জন্য, অথচ সেই নিয়মের কারনেই মানুষের ক্ষতি হয়।
ডাক্তারের যে ভালোবাসা ও সাপোর্ট পেয়েছি তার তুলনায় সমাজের জন্য অনে...ক কিছু করেন দাবীদার এমন দুই একটি প্রতিষ্ঠানের আচরণ ভাব তৎপরতা ছিল খুবই হাস্যকর বিব্রতকর। আর কতিপয় ব্যক্তির ভালোবাসা করেছে আপ্লুত।

ছোট ভাইটি অনেক দোয়া পেয়েছেন। মৃত্যুর পর তার সহপাঠী, কলিগ, বন্ধুবান্ধব ও ইউনিটের ভাইদের টেলিফোনের কান্নাই আমাকে হালকা করে দিয়েছে। সে সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকায় সবাই তাকে চিনতো। তাই অনেক কল পেয়েছি। সবাই তার জন্য দোয়া করেছে। ঈদের দিন ১১টায় গ্রামের একটি জানাজায় ঝড় বৃষ্টি কাদা উপেক্ষা করে ছোট ভাইটিকে দোয়া করার জন্য এত মানুষের উপস্থিতি সত্যিই অবাক করার মত। তদোপরি আতিক ভাই, রেজাউল করিম ভাই, মফিজ ভাইয়ের কবর যেয়ারত ও সান্তনা প্রদানের জন্য বাড়িতে উপস্থিতি পরিবারকে একটু হলেও মনে সাহস যুগিয়েছে।

বিপদের মূহুর্তে একটা ফোন করে বুদ্ধি পরামর্শ সাহস দেওয়া ও অনেক বড় সাপোর্ট। পিঠে হাত বুলিয়ে আল্লাহ ভরসা শব্দটি উচ্চারণ করাও পরবর্তী কাজের শক্তি যোগায়। অনেক ভাইকে অনেক কষ্ট দিয়েছ, নিজেরাও স্বেচ্ছায় সাপোর্ট দিয়েছেন। বিশেষ করে ইবনে সিনার হাসান ভাই, সিঙ্গাপুরের আমির হোসনে, পশ্চিমের রিপন ভাই, পিয়াস, ইদ্রিস ফারুকী ভাই, মুশফিক, মাহির, কামরুল হাসান, রিয়াদ, মুরাদ, শাহাদাত ভাই, মোশাররফ, মামুন ভাইদের প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

পরিশেষে সবার কাছে ৩টি দোয়া চাই ...
১. আল্লাহ যেন আমার ভাইটিকে তার ভূলক্রটি মাপকরে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।
২. পরিবারের একজন ৩১ বছরের যুবক সদস্যকে হারিয়ে, আমাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমরা যেন সেই কষ্ট ভূলে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারি, এবং নাসিরের অবর্তমানে আমাদের পরিবার যেন স্বচ্চলতার সাথে এগিয়ে যেতে পারে।
৩. চিকিৎসা কেন্দ্রীক অনেক বড় ধরনের (প্রায় ৮ লক্ষ টাকা) ঋনের মধ্যে পড়েছে পরিবার, আল্লাহ যেন ঋনের পিছুটান থেকে পরিবারকে তার কুদরতি উপায়ে হেফাজত করে। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×