আমাদের সুজইন্যা,এসেছিলো সুজন হয়ে।
পাড়ার বিকেলের ক্রিকেটে,দাগটানা মাটিতে হাত রেখে লাষ্টম্যান সেজে।
তারপর সুজইন্যা বোলার হয়,তুখোড় ব্যাটসম্যান।
একদিন যখন আমরা শর্টক্রিজ ধরলাম।
সুজন ছয় মেরে আউট হয়,সুজইন্যা হয়ে মাঠ ছাড়ে।আর আসে নি বিকেলে।
আমরা থোড়াই কেয়ার করি,
বিকেলের ধুলোমাঠই আমাদের চিন্তাজগত।
অবশেষে সুজইন্যা আসে,কিশোরকে দুমড়েমুচড়ে।হাতে একদলা কাগজ।
মনে হয় ঝালমুড়ি খেয়েছে।
বলে ওটা মহাকাব্যের খাতা-
আবৃত্তি শুরু করে।
রাহুল ব্যাট হাতে মারতে আসে,আমরা তেড়ে যাই......শালা!
সুজইন্যা তখন দিন-রাত ধিকৃত ও নিন্দিত।
উপহাস, অবহেলা, উপেক্ষা, ব্যঙ্গোক্তিতে তখন বিকেলের আড্ডা বেশ গরম।
অপমান, কটুক্তির কাকের বাসা আমাদের মাথায় গজিয়ে উঠছে। এইরকম অবস্থায়,প্রতিকূল পরিবেশ,কোনপ্রকার বডিস্প্রে
ব্যবহার ছাড়া, হঠাৎ বল্গাহীন, উন্মত্ত,সন্ধ্যার সিগারেট মুখেই
বেমক্কা ফসফরাসের মত জ্বলে উঠেছিল
সুজন।শুধু কবিতা, কবিতা আর কবিতা।
স্কুল পালিয়ে কোচিংয়ে এসে দাঁড়ায়,মাধবীলতা বলে ওর কবিতাকে ভালোবাসে।
অথচ সুজনের কোন মোটা ফ্রেমের রোদ-চশমা ছিলনা,বেসলাইটও না,অথবা কোন চেইন ঘড়ি।
সব সে বিক্রি করে দিত, অবলীলায়।
তারপর মদ, জুয়া, কবিতা— নেশা। সাফাইযোগ্য জিনিসপত্তর
বাড়ি থেকে হাতে করে নিয়ে আসত,
রাজিব সেকেন্ড হ্যান্ড
মার্কেটে হাতবদল করে দিত।
সুজনের নিজস্ব কোনো বই ছিল না।
প্রতিমাসে দুইটা লিটলম্যাগ চুরি করত
দুলাল হকারের সাইকেল থেকে।
কিন্তু একদিন সুজইন্যার কবিতা সবে বেরিয়েছে,পত্রিকায়।
বিকেলের মাঠ প্রস্তাব দিল দোস্ত ট্রিট দে,
পকেট উল্টিয়ে সাদাকাপড় টেনে দেখায় আর সুজইন্যার সেকি দাত কেলানি।
আমরা তখন বেড়িয়ে পড়ি, পাড়া জুড়ে
চেঁচিয়ে বেড়াই-সুজইন্যা তখন সুজনদা।
মাথায় হিরহির করে পাখির কালোবাসা জন্মায়,গ্রীস্মের রোদেও চাদরের মস্তঝোলা সুজনদাকে হেব্বি লাগে।
আমরা সেবার নিজেরাই টাকা উঠিয়ে সেলিব্রেট করেছিলুম।
আর দিনরাত শহরের আলো,ধুলা,রোদ খেয়ে বেড়াই-
আমরা সুজনদার ফ্রেন্ড, সুজনদা আমাদের ফ্রেন্ড।
আর পত্রিকা পড়ি খুব,প্রথম আলো।
পত্রিকা না ছাই,শুধু সুজনদার নামখানি।
কবিতা না ছাই,শুধু সস্তা যৌনশব্দ পড়তে পড়তে বিকেলে সন্ধ্যা নামাই।
বেশ তো! সুজনদা বেশ লেখে!গায়ে সুরসুরি তোলে!
সুজইন্যা ততদিনে সুজনদার সম্মান পেরিয়ে জীবনানন্দের ক্রেষ্ট, আর মেডেল গলায় পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়ায়।