somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মামা এবং একাত্তুরের যুদ্ধ

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আমার মেজ মামা। নাম আবু তাহের প্রধান। একাত্তর সালে যুদ্ধের সময় তিনি কিশোর গঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) মিঠামইন থানায় (বর্তমানে উপজেলা) কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক কয়েক দিন আগে হুট করে মামা আমাদের বাড়ি এসে হাজির। দু’দিন থাকার পরই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থতি তখন খুবই নাজুক। এমতোবস্থায় বাবা মামাকে চাকরিতে যেতে নিষেধ করলেন, কিন্তু মামা বাবার নিষেধ মানলেন না, জোর করেই কর্মস্থলে চলে গেলেন।

মামা চলে যাওয়ার পর থেকে যুদ্ধের পুরো নয় মাস তার আর কোন খোঁজখবর ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পনরো দিন পরেই হুট করে মামা এসে হাজির। সবাই তো অবাক! মা তো মামাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেললেন। আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম এই যুদ্ধে মামা হয়তো বেঁচে নেই। সেই মামা হুট করে কোথা থেকে বের হলো, এতদিন কোথায় ছিল? আমাদের এই প্রশ্নের উত্তরে মামা যা বললেন তা হলো-- মামা কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার মিঠামইন অফিসে পৌঁছার পর দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। সারা দেশে পাক সেনাদের হত্যা যজ্ঞ শুরু হলে মিঠামইনও এই হত্যা যজ্ঞের বাইরে ছিল না, পাক সেনাদের হত্যা যজ্ঞের ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে চাকরি ছেড়ে তারই এক সহকর্মীর সাথে গফর গাঁও চলে আসেন। কয়েক দিন সেই সহকর্মীর বাড়িতে অবস্থান করার পর বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেও পারছিলেন না। মামার বাড়ি ছিল তখন রংপুর জেলার নীলফামারি মহকুমার (বর্তমানে জেলা) ডিমলা থানায় (বর্তমানে উপজেলা)। যুদ্ধের মধ্যে ময়মনসিংহের গফর গাঁও থেকে উত্তর বঙ্গের নীলফামারি যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমাদের বাড়িও ছিল রংপুর জেলার অন্তর্গত গাইবান্ধা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) ফুলছড়ি থানায় (বর্তমানে উপজেলা)। আমাদের এখানে আসাও সম্ভব ছিল না। কারণ, কয়েকশ' মাইলের পথ পায়ে হেঁটে আসলেও মাঝখানে বিশাল যমুনা নদী পার হওয়া আরও বিপজ্জনক ছিল। যমুনা নদীর দুই পারে দু'টি রেলের ফেরি ঘাট। পশ্চিম পারে ফুলছড়ি ঘাট ( পরে নাম পরিবর্তন করে তিস্তমুখ ঘাট বর্তমানে বালাসী ঘাট) এবং পূর্ব পারে বাহাদুরাবাদ ঘাট। এই দু'টি ঘাটেই ছিল পাক সেনাদের শক্ত ঘাঁটি। খান সেনাদের কড়া পাহাড়ার নজর এরিয়ে এপার ওপার দশ মাইলের বিশাল নদী পার হওয়া কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। নদীতে নৌকা দেখলেই খান সেনারা গুলি করতো।

এমতোবস্থায় মামাকে অফিস কলিগ হিসাবে তিনি তার নিজের বাড়িতে কিছুদিন রাখলেও দেশের যুদ্ধবস্থা এবং পারিপার্শ্বিক কারণে বেশিদিন রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। মামাকে বাড়ি থেকে বিদায়ও করতে পারছিলেন না। মামার অসহায়ত্ব এবং দেশের পরিস্থিতির কারনেই তিনি তার পাশের বাড়িতে আশ্রয়ের ব্যাবস্থা করে দেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো যার বাড়িতে তিনি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন-এর আপন চাচা।

ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে অনেক কঠিন সাজাভোগ করেছিলেন। আর্মি হওয়ায় পাকিস্তান আর্মিরা ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীনকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসাবে আর্মিদের যত কঠিন শাস্তি আছে সবই তাকে ভোগ করতে হয়েছিল, এমন কি তাঁকে হাত পা বেঁধে পাকা ফ্লোরের উপরে চিৎকরে শোয়ায়ে পুরো শরীর বুট জুতা দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পারিয়ে পারিয়ে আধমরা করে ছেড়েছিল কিন্তু এত কঠিন শাস্তির পরও তাঁর মুখ থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোন কথা বলাতে পারে নাই। দেশের জন্য যারা আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসাবে এমন কঠিন শাস্তি ভোগ করেছেন তাদের এই অবদান কোনভাবেই ভোলার মত নয়।

আমার মামা বিপদে পরেই যুদ্ধের পুরো নয় মাস ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন-এর চাচার বাড়িতে অবস্থান করে ছিলেন। চাকরি জীবনের শেষ সময়ে মামা লালমনির হাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×