মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই। কবির এমন অন্তিম ইচ্ছের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মৃত্যুর পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে। কিন্তু সেই সমাধিসৌধকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেই সাথে জাতীয় কবি স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স এর পরিবর্তে এর নাম রাখা হচ্ছে জাতীয় কবি শহীদ বদ্ধিজীবী এবং শিল্পাচার্য সমাধিসৌধ।
বল বীর, বল উন্নত মম শির এমন বাণী দিয়ে যে কবি এই জাতিকে করেছে অনুপ্রাণিত। এখন সেই কবির শির নিচু করে দেওয়ার সব আয়োজন চলছে। সংস্কারের নামে ভেঙে দেয়া হচ্ছে জাতীয় কবির মাজার। আমাদের স্বাধীনতা, জাতীয় সংস্কৃতি, চেতনা ও মননের প্রতীক কাজী নজরুল ইসলামকে অন্য অনেকের সমান্তরাল করতেই এমন সব উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ চক্রান্তের হোতা যারা: কাজী নজরুলের সমাধীর পর জাতীয় কবি স্মৃতি কমপ্লেক্স নাম করণের উদ্যোগে ফুঁসে উঠেছিল নজরুল বিদ্বেষীরা। এমন বিদ্বেষের সরাসরি প্রকাশ পায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঝে। তারই জের ধরে ১৯৯৮ সালে তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ আগ্রহে নাম পরিবর্তন সহ প্রকল্পে জাতীয় কবি নামের সঙ্গে পাশের সমাহিত অন্যদের নাম পরিবর্তনসহ কবর সমান্তরালের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বছরের ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় এমন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১২ সদস্যের একটি কমেটি গঠন করা হয়। এই সভাতেই কবির মাজার ভেঙে অন্যদের সমান্তরাল করে লে আউট করার দায়িত্ব দেয়া হয় সভাপতি মাজহারুল ইসলামকে। তিনি মাজার এলাকার শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘর, গ্যালারী ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করে ডিজাইন জমা দেন। ১৯৯৯ সালে ১৫ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় প্রকল্প প্রস্তাব এবং ডিজাইন অনুমোদন করা হয়। পরিবর্তীতে দীর্ঘ ৭ বছর প্রকল্পের অর্থ স্বল্পতা ও নানা অযুহাতে নজরুল বিদ্বেষীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার মতা গ্রহণের পর ২০০৭ সালের ৮ নভেম্বর সংস্কৃতি উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। ২০০৮ সালের ১১ মার্চ স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি আ.ফ.ম ইউসুফ হায়দারকে প্রধান করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমেটি গঠন করা হয়। জাতীয় কবির মাজার এলাকার শায়িত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পটুয়া কামরুল হাসান, ঢাবির সাবেক ভিসি আবদুল মতিন চৌধুরীর কবরের জন্য এবং ভবিষ্যত আরো ব্যক্তিদের মাজার করার চিন্তা ভাবনা থেকে সমাধিসৌধের নতুন প্ল্যান দেয়া হয়। এখানে শায়িত অন্যান্যদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, জাতীয় কবি শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পাচার্য সমাধিসৌধ নামের এই জাতীয় কবি বিদ্বেষী প্রকল্পে ১ কোটি ৯১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। গত ১০ নভেম্বর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
এখন চলছে সমাধিসৌধ ভাঙার কাজ। এখনই রুখে না দাঁড়ালে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বিদ্রোহী কবির সমাধি সৌধ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




