সশস্ত্রবাহিনীর প্রতি
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
রাইফেল তাক কোরে আছো মানুষের দিকে।
সঙ্গিন উচিয়ে আছো ধূর্ত নেকড়ের মতো।
পায়ে বুট, সুরক্ষিত হেলমেটে ঢেকে আছো মাথা।
সশস্ত্র তোমার হাত, সংগঠিত, কে তোমাকে ছোঁয়!
তোমার বুলেট মানুষের বুক লক্ষ্য কোরে ছুটে যাচ্ছে
তোমার বুলেট মানুষের মাথার খুলি উড়িয়ে নিচ্ছে
তোমার বুলেট মানুষের হৃৎপিন্ড স্তব্ধ কোরে দিচ্ছে
তুমি গুলি ছুঁড়ছো, তুমি গুলি ছুঁড়ছো মানুষের দিকে।
যে মানুষের মধ্যে কেউ একজন তোমার ভাই
যে মানুষের মধ্যে কেউ একজন তোমার পিতা
যে মানুষের মধ্যে কেউ একজন তোমার বোন
যে মানুষের মধ্যে কেউ একজন তোমার ছেলে
সেই মানুষের দিকে তোমারা টার্গেট প্র্যাক্টিস করছো...
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
প্রকৃতির ভেতরে তাকাও, দ্যাখো আলো এবং অন্ধকার দুটি পক্ষ
নিসর্গের ভেতরে তাকাও, দ্যাখো পানি এবং মাটি দুটি পক্ষ
পৃথিবীর ভেতরে তাকাও, দ্যাখো শোষিত এবং শোষক দুটি পক্ষ
মানুষের ভেতরে তাকাও, দ্যাখো গরীব এবং বুর্জুয়া দুটি পক্ষ
এদেশের ভেতরে তাকাও, দ্যাখো পঁচাশি এবং পনেরো দুটি পক্ষ
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
এদেশের আশি যোগ পাঁচজন এখনো ক্ষুধার্ত প্রাণী
অর্থাৎ এখনো মানুষ নয় তারা এখনো মানবেতর,
তারা এমন কি দরিদ্রও নয়, দরিদ্র-সীমার নিচে।
ক্ষুধার আঘাতে পঙ্গু, বস্ত্রহীন, উদ্বাস্ত-উন্মুল এই
আশি যোগ পাঁচজন স্বপ্নাহত, নিঃস্ব, মুমূর্ষু মানুষ-
এই মানুষের দিকে তোমরা টার্গেট প্র্যাক্টিস করছো।
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
তুমি সেই আশি যোগ পাঁচজন মানুষের ছেলে-
তোমার পিতা একজন চাষা, ক্ষেতে লাঙ্গল চালায়
তোমার পিতা একজন শ্রমিক, মিলে গতর খাটায়
তোমার পিতা একজন মজুর, একজন কর্মচারী
তোমার পিতা একজন পিয়ন, রেলশ্রমিক, কেরানি
তোমার পিতা একজন বাসশ্রমিক, বেশ্যার দালাল
তোমার পিতা একজন স্কুল শিক্ষক, রিক্সাওয়ালা-
তোমার পিতার পাঁজরে তোমরা টার্গেট প্র্যাক্টিস করছো...
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
সীমান্ত রক্ষার নামে তৈরি করা হয়েছে তোমাকে,
সার্বভৌমত্বের নামে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তোমাকে।
শৃংখলা রক্ষার নামে তৈরি করা হয়েছে তোমাকে,
আইন রক্ষার নামে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তোমাকে।
সীমান্ত রক্ষাও নয়, সার্বভৌমত্বও নয়, শুধুমাত্র পুঁজি,
শুধুমাত্র পুঁজিবাদ রক্ষাই তোমাদের মৌল কাজ।
তোমরা এখন বিত্তের পাহারাদার, বিত্তবানের প্রহরী,
বিত্তবান তোমাকে ব্যবহার করছে তার বিত্তের স্বপক্ষে।
বিত্তের বিরদ্ধে তাই যখন শ্লোগান ওঠে শহরে ও গ্রামে,
যখন মিছিল নামে রাজপথে মানুষের দাবির মিছিল,
যখন মিছিল নামে রাজপথে মানুষের ক্ষুধার মিছিল-
তখন তোমার হাতে গর্জে ওঠে তীক্ষ্ম রাইফেল,
তুমি ব্যবহৃত হও, নিরুপায় ব্যবহৃত হও।
তোমার হাতের ভেতর তখন শোষকের হাত।
তোমার আঙুল, সে তখন খুনী জান্তার আঙুল।
তোমার সুশিক্ষিত পা, সে তখন স্বৈরাচারের পা।
তোমার চোখ তখন এক ঘাতকের খল চোখ।
তোমার জিভ তখন এক ঘৃণ্য দুর্বৃত্তের জিভ।
দাঁড়াও, নিজেকে প্রশ্ন করো- কোন পক্ষে যাবে?
একদিকে বিত্তবান,
অন্যদিকে বিত্তহীন ক্ষুধার্ত মানুষ।
একদিকে পূঁজিবাদ,
অন্যদিকে সাম্যবাদী শান্তির সমাজ।
ইতিহাস সাক্ষী দ্যাখো, অনিবার্য এ লড়াই-
কোন পক্ষে যাবে?
সংগ্রহীত কবিতাসমূহ-৩
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮