অনেক অনেকদিন আগের কথা
ভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য মিলেমিশে বাস করত
একজন দুঃখবাদী মানুষের শরীরে
লোকটা জানতো
তার দেহ ও মনে
এই যে হাঁটাচলা
তা দুর্ভাগ্যেরই রুটিন প্যারেড
ওদিকে ভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যের ছিল
ভেতরে ভেতরে ভীষণ মিল
একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারতো না
আর পারলেও একজন
আরেকজনের সাথ ছাড়তো না
যেন একই মায়ের পেটে দুই ভাই
যদিও বেড়ে ওঠার সাথে সাথে
স্ফীত হয়ে যাচ্ছিলো দুর্ভাগ্যের শরীর
আর ভাগ্য
অপুষ্টির শিকার কোটি কোটি বাঙ্গালী শিশুর মত
হ্যাংলা পাতলা ক্ষীণকায়
বোকা লোকটার অস্তিত্বে নাড়া দিয়ে দুর্ভাগ্য
মাঝে মাঝেই জানান দিত
যে সে আছে সার্বক্ষণিক
অথবা লোকটি
মানিব্যাগে রাখা হারিয়ে যাওয়া প্রিয়মানুষের মুখ
সহসাই খুলে দেখার মত যখন তখন
দুর্ভাগ্যকে ডেকে নিত
পাশে বসিয়ে সুখ-দুঃখের গল্প করত
ভাগ্য তখন ভয়ে আর অভিমানে
পড়ে থাকতো তার পেছনের পকেটে
বেচারা বারবার তার দুর্ভাগ্যের জন্য
নিজেকে গালি দিত
তারপর মা-বাবাকে
যারা অযথাই তাকে পৃথিবীতে এনেছিল
এরপর সমাজ-সংসারের হস্তীকুল থেকে হাইড্রা
কাউকেই বাদ দিত না সে
শেষে গিয়ে ঠেকতো ঈশ্বরের দোরগোড়ায়
তাকেও গালি দিতে দিতে
সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ত
এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই, কেউ নেই
বলতে বলতে..
দুর্ভাগ্য নেশাগ্রস্ত মানুষের মত টলতে টলতে
হতাশার অন্ধকারে
অপমানে ম্লাণ হয়ে থাকা ভাগ্যকে খুঁজে বের করত
ভাগ্য তখন ব্যাগ গোছাচ্ছে
বলছে,
“না, এই মানুষের সাথে আর সংসার করা যায় না”
অগত্যা দুর্ভাগ্য তাকে বোঝাতো
ভালবাসাকে মূল্য দিতে গিয়ে কিভাবে মানুষ
নিজেরা নিজেদের ছেড়ে যায় না
ভাগ্য বলত, “ঠিক আছে, এই কিন্তু শেষ!”
লোকটা বেকার ছিল,
ভাগ্য কাকে যেন ধরে-টরে তার একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিল
লোকটা বলল,“আহা, আমার ফাটা কপাল !”
লোকটা ক্ষুধার্ত ছিল,
ভাগ্য একদিন তাকে শহরের সবচেয়ে বড় রেঁস্তোরায় নিয়ে গেল
কি এক মন্ত্রীর মেয়ের বিয়ে ছিল
লোকটা পেট পুরে খেতে খেতে বলল,
“ভাগ্য ভাল থাকলে স্বাদটা এমন বাজে হত না”
লোকটা আশ্রয়হীন ছিল,
ভাগ্য তাকে একদিন থাকার জায়গা করে দিল
লোকটা কপাল চাপড়িয়ে বলল ,“ফালতু”
ভাগ্য ঠিক করল আর নয়
এবার সে চলে যাবে
কোন ভাগ্যবানের কাছে
দুর্ভাগ্য বলল, “আমিও যাবো, আমায় নেবে?”
বাক্স-পেটরা সাজিয়ে
ওরা নিজেরা নিজেদের গোছালো
তারপর একদিন সন্তর্পনে
বেরিয়ে পড়ল অজানার উদ্দেশ্যে
আর লোকটা
কিভাবে যেন টের পেয়ে
দুর্ভাগ্যকে জড়িয়ে ধরল
হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল
“অনুগ্রহ কর, সবার মত আমাকে ছেড়ে যেও না”
কিন্তু লোকটা যখনই দুর্ভাগ্যকে জড়িয়ে ধরল আলিঙ্গণে
নিজের অজান্তেই
ভাগ্য পড়ে গেল তার জুতোর নিচে
লোকটা ভাগ্যকে পায়ে দলে
হাতের রেখাগুলো প্রদর্শন করে
নিজের দুর্ভাগ্যের ফিরিস্তি দিতে দিতে
বলল, “ভাগ্য ভাল থাকলে..”
ভাগ্যের অকাল মৃত্যুতে
জনৈক সন্দেহপ্রবণ সম্পাদক পরদিন তার কাগজের শিরোনামে লিখলেন
“ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস...”
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:১১