এলআরবির একটা গান আছে, “তিন পুরুষ, আমার তিন পুরুষ”। এক পুরুষে ধন সম্পদ বানায়, আরেক পুরুষের ভোগে সেটা খরচের খাতায় চলে যায়, শেষের পুরুষের জন্য আর কিছু বাকি থাকে না- এরকম কথা ছিল গানটায়। কবে যেন পড়েছিলাম মনে নেই ঠিক, একটা ভিন্ন ভাবে বলা তিন পুরুষের চিরাচরিত আখ্যান। পারিবারিক প্রতিষ্ঠা, অর্থ-বিত্ত, আর সর্বোপরি মানসম্মান গড়ে ওঠার ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন প্রজন্মকে বলে কেনারাম, বাবুরাম এবং বেচারাম। অনেকেই হয়ত জানেন, এরপরেও ভুমিকা দিয়ে নেয়ার দরকার আছে বলে মনে করছি (সবজান্তা ভাব নেয়ার চেস্টা)।
ব্যাপারটা এরকম, শুরুতে খান্দানের শান শওকত, পয়সা কড়ি তেমন থাকে না। এসময়টা হল কষ্টকর সংগ্রামের, তিল তিল করে সম্পদ বাড়ানো। এই প্রজন্ম থাকে অনেক সুশ্রংখল, ফোকাসড, কষ্টসহিষ্ণু, বৈষয়িকবুদ্ধিসম্পন্ন। এরা আদর্শের অথবা আধুনিক চাল চলনের তেমন ধার ধারে না। তথাকথিত “কালচার” এ পিছিয়ে থাকলেও বৈষয়িক সম্পদের প্রাচুর্য দিয়ে এরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা শক্ত ভিত করে দিতে চমৎকারভাবে। এরাই হল কেনারাম, প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে উঠে ক্রয়ক্ষমতার সিঁড়িতে উপরে উঠতে দারুন পারঙ্গম এরা।
তো এরপরে আসছে কারা? বাবুরাম অবশ্যই। এদের ব্যাপারে প্রথমেই যা বলা যায় যে, এরা হচ্ছে “বাবু সম্প্রদায়”, সমাজের এলিট গোষ্ঠী। কেনারামের ঘরে দুধ কলা খেয়ে বড় হওয়া বাবুরামেরা নিজেদের পূর্বপুরুষের সেকেলে মন মানসিকতার থেকে এগিয়ে গিয়ে আধুনিক যুগের উপযোগী করে নেয়- সোজা বাংলায় “খ্যাত” থেকে “স্মার্ট” হয়। চলনে-বলনে, বেশ ভূষায়, সামজিক আচরণে, সামগ্রিক জীবনযাপনে এদের সমসাময়িক উৎকৃষ্ট সাংস্কৃতিক চর্চার ছাপ থাকে। দক্ষতা বিকাশের সাধনা আর উচ্চ জীবনমান পরিচালনা এই দুই বিপরীত মুখি দাবীর চাহিদা মেটাতে পারদর্শী হয় এরা।
এরপর আস্তে আস্তে দক্ষতা, মনোযোগ, কষ্টসহিষ্ণুতা হারাতে থাকে আর জায়গা করে নেয় অবহেলা, অদক্ষতা, অপরিণামদর্শী বিলাসিতা। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন- এরাই বেচারাম। আগের প্রজন্মের সব অর্জনকে ধরে রাখার মত যোগ্যতা থাকে না, তাই ভরসা করতে হয় “বেচা”র উপর। শুধু যে সয় সম্পত্তিই এরা খরচের খাতায় লেখায় তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে বহুদিনের অর্জিত মান সম্মানও খুইয়ে বসে। এই অবস্থা যেন কোথায় ছিল? ঠিক ধরেছেন, এই অবস্থা ছিল বিফোর দ্যা রাইজ অফ কেনারাম। এটা অনেকটা যেন হিরোডটাসের জাতিগোষ্ঠীর উত্থানের ব্যাখ্যার মতই- “প্রথমে শৃঙ্খংলা জনিত উন্নতি এবং সাফল্য, এরপরে সাফল্য জনিত অহমিকা, সবশেষে অহমিকা জনিত পতন।“ (সকলে পড়েন, “ইন্নালিল্লাহে...”)
যাই হোক, এই হল তিন পুরুষের কারবারের ফিরিস্তি। প্রশ্ন উঠতে পারে সবাই কি এই প্রকরণে পড়ে কিনা? আর পুরো প্রক্রিয়াকে কেবল তিন প্রজন্মে সীমাবদ্ধ করা যুক্তিযুক্ত কিনা? পড়বে না মানে, একশবার পড়বে! নাইলে এত ধানাই পানাইয়ের পরে এই লেখকের ইজ্জত কই থাকে বলেন তো? আমার মতে, এই তিন পুরুষ আসলে তিন রকম অবস্থা যা চক্রাকারে আসে আর যায়। (ভাবছি নিজের নামে এটারে নাম দেব) হতে পারে কেনারামথেকে বাবুরামে আসতে কয়েক জেনারেশন লেগে গেল। আবার বাবুরামরা কিছুদিন মজা করে গেলেন। অথবা বেচারাম এক জন্মে সব বেচে দিতে পারল না। কিন্তু কথা হল ট্রানজিশান টা চলতেই থাকে- দ্রুত বা ধীরে। আমাদের চারপাশের মানুষ সাথে আমরা নিজেরা মিলেই এই পুরুষানুক্রমিক বাস্তবতা। বিশেষ করে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কিংবা একত্রিত হবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গেলে এই বিভাজনটা খুব চোখে পড়বে আপনার। দেখা যায় সমজাতীয়রা (যেম্নঃ বাবু-বাবু, কেনা-কেনা, বেচা-বেচা) এসব ক্ষেত্রে মিলে যায় ভালভাবে। বাবুরা যেসব জায়গায় ভীড় করবে কেনারামরা হয়ত সেখানে যেতে চাইবে না, আবার বেচারামরা যেখানে জটলা পাকায় সেখানে হয়ত অন্যরা যাওয়ার কথা চিন্তাও করে না। আবার এভাবেও দেখা যায়, কোন বেচারামের বেচাতেই তৈরি হচ্ছে কোন এক কেনারাম, শুরু হচ্ছে নতুন পরিক্রমার।
তবে এই থিওরি নারীজাতির উপর এপ্লাই করতে গিয়ে আবিস্কার করলাম তারা এই ধারার স্বাভাবিক গতির বিপরীতে যেতে চায়। সব মেয়েই বলে যে তার পছন্দ লম্বা, সুদর্শন, খোলা মনের ধনবান পুরুষ। এগুলা কিন্তু আমরা দেখেছি যে বাবুরাম কিসিমের কমন ট্রেইট। তাদের কারো ভাগ্যে সেই শিকে ছিঁড়লে সেক্ষেত্রে রিভার্স প্রগ্রেশন দেখা যায়। তো নারীকুলের আরোপিত ওয়েটেইজের দরুন দেখা যাচ্ছে বাবুরাম কেই আইডিয়াল স্টেট অর্থাৎ স্ট্যান্ডার্ড ধরা যেতে পারে। তাই সকল অবিবাহিত ভাইদের অতিসত্বর বাবুরাম কম্প্যাটিবিলিটি টেস্ট করার জন্য নিলে নেন না নিলে পস্তাইবেন টাইপ উপদেশ দেয়া যাচ্ছে। দরকার পড়লে গুগলে সার্চ মারুন, “হাউ টু বি এ বাবুরাম” অথবা “বাবুরাম ফর ডামিজ” ইত্যাদি।
অট- কেউ বাবুরাম বলতে বাবুরাম সাপুড়ে ইন্টারপ্রেট করলে লেখক কোনভাবেই দায়ী নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১২ রাত ১০:৪৫