আমাদের প্রায় অনেকের ই জীবনের অন্যতম সমস্যা শরীরের অতিরিক্ত ওজন। ২০১১ সালে আমি প্রথমে ওজন কমানো শুরু করি এবং ২০১২ সালে এসে ২৪ কেজি কমাতে পেরেছিলাম। পেরছিলাম বলছি এই জন্য যে ওজন কমানোর পরে সেটা ধরে রাখাও একটা কঠিন কাজ যেটা আমি পারিনি এবং আমার শরীর স্পঞ্জ এর মত পানি পেয়ে আবার প্রায় আগের অবস্থায় চলে যাবার দশা। সুতরাং আবার আমাকে সেই কঠিন পথ টা পাড়ি দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু চেঞ্জ হয়েছে জীবন যাত্রায় ২০১১ তে ছিলাম ছাত্র এখন চাকুরিজীবি সুতরাং সময় ও হাতে কম। যাই হোক নেট এ অনেক ঘাটাঘাটি করে এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলে আর আমার আগের অভিজ্ঞতায় যা জানি তা শেয়ার করব।
ইচ্ছা শক্তি ঃ
শুরুতেই যা দরকার বা ওজন কমানোর যেটা মূলনীতি তা হলো ইচ্ছা শক্তি। এটা যদি না থাকে তাহলে আপনি কখনোই আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারবেন না।
একটুখানি সায়েন্সঃ আমাদের খাদ্যের মধ্যে যে শক্তি থাকে তার একক কিলো ক্যালরি বা অনেকে শুধু ক্যালরি বলে।
আমাদের ওজন,উচ্চতা,বয়স এবং জেন্ডার অনুসারে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ করতে একেকজনের একেক রকম ক্যালরি দরকার হয়। যা প্রতিদিনের খাবার থেকে শরীর সংগ্রহ করে এবং উদ্বৃত্ত ক্যালরি জমা করে রাখে। এভাবে জমতে জমতে ৩৫০০ ক্যালরি জমা হয়ে গেলে ১ পাউন্ড ওজন বেড়ে যায়। ২.২০ পাউন্ড এ হয় ১ কেজি। সুতরাং শরীরে ৭৭০০ ক্যালরি বাড়তি জমা হলে ১ কেজি ওজন বেড়ে যায় এবং এভাবে জমতে থাকলে শরীরের ওজন ও বাড়তে থাকে। ঠিক তেমনি শরীরের যা প্রতি দিনের চাহিদা তা যদি খাবার থেকে না আসে তাহলে সে জমানো ক্যালরি থেকে তা গ্রহন করে এবং এভাবে যদি ৭৭০০ ক্যালরি খরচ হয় তাহলে শরীর থেকে ১ কেজি ওজন কমে যায়।
কিভাবে ওজন কমাবেনঃ
শুরুতেই বলেছি আপনার দরকার প্রবল ইচ্ছা শক্তি। এর পর যা করবেন আপনার বর্তমান ওজন,উচ্চতা জেনে নিয়ে http://www.livestrong.com
এ যেয়ে ডান পাশের ক্যালরি ক্যালকুলেটর থেকে বের করবেন দিনে আপনার কত ক্যালরি দরকার, সপ্তাহে পছন্দ মত ওজন কমাতে কত ক্যালরি দরকার তাও বের করে নিতে পারেন। এখন কাজের ক্ষেত্রে ৩ টা উপায় আছে। ১.শুধু ডায়েট কনট্রোল করে কমানো। ২.ডায়েট স্বাভাবিক রেখে ব্যায়াম করে কমানো ৩. ডায়েট এবং ব্যায়াম উভয় এর মাধমে।
১.যদি ব্যায়াম করতে না চান তাহলে দিনে আপনার যত ক্যালরি দরকার তা থেকে ৫০০-১০০০ ক্যালরি কম খাবেন। কোন খাবারে কত ক্যালরি তা পাবেন এখানে এখানে এই ফেসবুক পেজে অথবা নেট এ সার্চ করলে পাবেন, তবে এটা বেশ দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া।
২.যদি খাবার কমাতে না চান তাহলে হিসেব করে দেখবেন দিনে কত ক্যালরি খাচ্ছেন এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করে ৫০০-১০০০ ক্যালরি বার্ন করবেন । কোন ব্যায়ামে কত ক্যালরি বার্ন হয় তা নেটে লিখে সার্চ দিলে পেয়ে যাবেন অথবা এই পেজ থেকে দেখে নিবেন
৩. সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটু খাবার কন্ট্রোল করে আর কিছুটা ব্যায়াম করে কমানো। ধরুন আপনার দিনে ২০০০ ক্যালরি দরকার, আপনি ১৫০০ গ্রহন করলেন আর ব্যায়াম করে ৫০০ বার্ন করলেন তাহলে দিনে আপনার শরীর থেকে ১০০০ ক্যালরি ঝরে যাচ্ছে অর্থাৎ ৮ দিনে আপনার ৮*১০০০ = ৮০০০ ক্যালরি প্রায় ১ কেজি ওজন কমে যাচ্ছে।
খাবার নিয়ে কিছু কথাঃ আমি নেট ঘেটে যা দেখেছি তাতে সব ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট [ ভাত, আলু,রুটি,চিনি, বিস্কিট ইত্যাদি ] যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে এবং সেই সাথে চর্বি জাতীয় খাদ্য একদম নিষেধ। শরীরের অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ই জমে ওজন বাড়িয়ে ফেলে। প্রোটিন এর মধ্যে মাছ, মুরগী ডিম খেতে পারবেন তবে অবশ্যই ক্যালরি হিসেব করে খাবেন যাতে বেশি না হয়ে যায়। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি চিনির পরিবর্তে স্কয়ার এর জিরো ক্যাল খাই।
ডাক্তার প্রসঙ্গ ঃ আপনি কোন ডাক্তার দেখাবেন কিনা সেটা আপনার উপর নির্ভর করে, প্রথম বার ওজন কমানোর সময় আমি তেমন কোন স্পেশালিস্ট দেখাইনি। তবে এবার দেখিয়েছি একটা ওষুধ দিয়েছেন যেটা খাবার এর সাথে খেতে হয় এবং এটা কিছু এনজাইম ব্লক করে রাখে যাতে খাবারের ১/৩ অংশ চর্বি শরীর গ্রহন করতে না পারে।
তো এই ছিল আমার অভিজ্ঞতা, ওজন কমাতে চাইলে আজই শুরু করে দিন আপনার মত করে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:১৮