বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন, প্রথম ক্লাশ এবং প্রথম বিরক্তিকর ব্যাপার, সকাল সাড়ে আটটায় ক্লাশ। এবং পরবর্তি ৪ বছরে রুটিনে পরিণত করা ব্যাপারটার সুত্রপাত ঘটালাম ভার্সিটি লাইফের প্রথম দিনে-ই, ক্লাশে আধাঘন্টা লেট।
২য় হোচটটা খেলাম, ক্লাশে ঢুকার সাথে সাথে। স্কুল এবং কলেজ জীবন পার করে আসলাম লাস্ট বেঞ্চে বসে আর এখানে এসে দেখি পিছনে কোন সিট ফাকা নাই। বুঝলাম, স্কুল কলেজে সবগুলা আমার মতোই বাধাইম্যা আছিল।
বাধ্য হয়ে সামনের সারির দিকে আগালাম, সেখানে ৪ টা মেয়ে আর একটা ছেলে বসা। মেয়েদের পাশে বসব এই আনন্দে পিছনে না বসার কষ্ট ভুলে মনে মনে ৩/৪ টা ডিগবাজি মারলাম যদিও ভাব দেখালাম কষ্টে আমি এখনি মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করবো।
আসিফ : ক্লাসের প্রথম কাজ হলো পাশে বসা সহপাঠীর সাথে পরিচিত হয়ে তাকে ক্লাসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। আমার পাশে বসা রাজশাহীর ছেলে আসিফ (ভার্সিটিতে আসিফের সাথেই আমার প্রথম পরিচয় এবং এখনো সে একজন ভাল বন্ধু)। প্রথম ক্লাশ, মনের মধ্যে আমি কোন হনুরে টাইপ একটা উড়ু উড়ু ভাব, পাশে কিছু মেয়ে বসা বলে রোমিও টাইপ চেহারা করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে এর মাঝে কার ভালো লাগে আরেকজনের বাপ-দাদার বংশ পরিচয় জানতে, কাজেই আসিফের সাথে কম্পিটিশন করে তার বলার আগেই আমি ভুলে গেলাম এতক্ষন সে কি বলছিল। শুধু মনে করতে পারছিলাম সম্ভবত সে বলেছিল তারা এক ভাই, এক বোন।
পড়বি পড় মালির ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
এ ক্ষেত্রে মালিটা আমি, ম্যাডাম প্রথমেই আমাকে দাড় করালো আসিফ কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। আমার তখন কুত্তা চাই না মা, ভিক্ষা সামলা অবস্থা। তোতলাতে তোতলাতে বাংরেজিতে যা বলতে শুরু করলাম তার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে, ওর নাম আসিফ, রাজশাহী তে থাকে, ফ্যামিলিতে এক ভাই, এক বোন, এক বাবা আর এক মা আছে..............
আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না, তার আগেই পিছন থেকে ভেসে এলো হা-হা, হো-হো টাইপ কান ফাটানো আর পাশ থেকে মুখে ওড়না চেপে ধরে হি-হি মার্কা মেজাজ খিচরানো হাসির শব্দ। ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনিও মুচকি মুচকি হাসছেন। হাসছিনা শুধু আমরা ২ জন, আমি হাসছিনা কারন আমি তখনো বুঝিনি হাসার কি হলো, আর আসিফ কেন হাসছেনা তার কারনটা আজ পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
[আসিফ এখন সেই ইউনিভার্সিটির-ই সিনিয়র লেকচারার, খুব ভালো একজন ফটোগ্রাফার এবং একজন ভাল বন্ধু]।
হৃদয় : প্রথম পরিচয়ের দিন তাকে হৃদয় নামেই চিনতাম। যদিও ভাল নাম হুমায়ন কবির, এবং এখন তার বাবা-মা ছাড়া কয়জন তাকে হৃদয় নামে চেনে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করছি।
প্রথম দিন কার কি ভালো লাগে না লাগে এই ব্যাপারে ম্যাডাম যখন জিজ্ঞাসা করল তখন পিছন থেকে ঠোটে লিপস্টিক লাগানো ফর্সা একটা ছেলে (পরে জানতে পারি ঠোটে লিপস্টিক লাগানো না, তার ঠোট এমনিতে এমন, বন্ধু কবির রাগ করিস না ৮ বছর আগে প্রথম দেখায় আমার এটাই মনে হয়েছিল) বললো, ছেলেদের লাল শার্ট পড়তে দেখলে তার মেজাজ খারাপ হয়। আমার পরনে সেদিন লাল শার্ট ই পড়া ছিল, মনে মনে যুদ্ধ ঘোষনা করলাম, ব্যাটা তুই লাল লিপস্টিক লাগিয়ে আসতে পারবি, আর আমি লাল শার্ট পরে আসতে পারবোনা? আকাশ, বাতাস কে সাক্ষি রেখে কানে লাগানো হেডফোন ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজ থেকে প্রতি ক্লাশে আমি লাল জামা পরে আসবো আর বসবো তোর ঠিক সামনের সিটে।
প্রতিজ্ঞা শেষ পর্যন্ত রাখতে পারিনি (এ আর নতুন কি? কয়েকটা ছাড়া সব প্রতিজ্ঞাতেই ফেল মারছি)। সেমিষ্টারের শেষে এসে দেখা গেলো আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুদের একজন লিপস্টিক লাগানো কবির। এমনকি সেমিষ্টার ব্রেকে কবিরের নানা বাড়ি নাটোরে গিয়ে ১০ দিন কাটিয়ে আসলাম।
[বন্ধু কবির আমার এখনো আগের মতোই খ্যাপাটে বাধাইম্যা, কোন কাজের না]
পলিন : ভুল বুঝবেন না, ভার্সিটিতে আমার মেয়ে ফ্রেন্ড কয়টা ছিলো সেটা গুনার জন্য এক হাতের ৫ টা আঙ্গুল ও বেশি হয়ে যায়। পলিন দিনাজপুরের ছেলে, আল্লাহর রহমতে জন্মসূত্রে একটা নাম পাইছে, শাহ মোহাম্মদ সামিউল কবির চৌধুরী পলিন। খুব-ই ভালো বন্ধু আমাকে প্রতিদিন এপেটাইট ইন - এ নাস্তা করাইতো। আমি কোনদিন করাইনি এই কষ্টে-ই কিনা মাত্র ১৫ দিন পরেই সে সেকশন পরিবর্তন করে আমাকে নাস্তা বিহীন কষ্টের খালে একা ফেলে অন্য সেকশনে চলে গেল।
পলিন বন্ধু একটা সত্য কথা বলি, আমার ইচ্ছা ছিল তোরে নাস্তা করানোর, তুই এভাবে আমাকে একা ফেলে না গেলেও পারতি।
[ গ্রীনউইচ থেকে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটর উপর মাস্টার্স করে পল্লু এখন ইংল্যান্ডে আছে, ফেব্রুয়ারীতে দেশে আসতে পারে]।
দীপ : প্রদীপ্ত ভাস্কর সাহা (দীপ)-র সাথে পরিচয় প্রথম ক্লাশ থেকে হলেও ওর সাথে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় ২ বছর পর থেকে। ভার্সিটি-র প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দীপ আর জেমস একসাথেই থাকতো। একদিন তাদের দুইজনের প্রায় ঘন্টাখানেক দেরী করে আসার কারন জিজ্ঞাসা করাতে তারা যা বললো (যতদুর মনে পড়ে) তা হলো "মাই খালা'স হাউজ ইজ ফ্লাডেড উইথ গুয়ের পানি"।
[বন্ধু তুমি কবে আসবা? তোমারে অনেক মিসাই]
রিমনঃ আবুবকর রিমন, সুন্দর চেহারার বিশালদেহী বালক যার জীবনের প্রথম স্বপ্ন ছিলো ট্রাক ড্রাইভার হওয়া। বোকা বালকটা এটা বুঝতো না কাউকে মারার জন্য ওর ট্রাক ড্রাইভার না হলেও চলতো, মাশাল্লাহ যে শরীর ছিলো বাম হাত দিয়া ডান কানের নিচে কাউরে কইসা একটা থাবর দিলেই এমনিতে মইরা যাইতো।
ক্লাশে অলক দাস নামে একটা ছেলে ছিলো, সুমাইয়া নামের মেয়েটা (গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস মাশাআল্লাহ খারাপ ছিলো না
ক্লাশে একদিন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কথা উঠায় রিমন জানায় তার একটা ছোট্ট গার্লফ্রেন্ড আছে। সেদিন-ই ক্লাশ শেষে ক্লাশের বাইরে থেকে যখন ব্যাগ নিচ্ছিলাম তখন হটাৎ করেই কাপালী এসে বলতে থাকে আরে রিমন তোমার যে গার্লফ্রেন্ড আছে এটাতো আমাদের কাউকে কখনো বলোনি। চোখ মুখ করুন করে খুব সিরিয়াস হয়ে ফিসফিস করে রিমন জবাব দেয়, "কেন ধরা খাইছো? " প্রথম দিন ওড়না চেপে পিত্তি জ্বালানো হাসি দেবার প্রতিশোধ আজকে নিলাম খিক খিক মার্কা কিডনি জ্বালানো এক শয়তানি হাসি দিয়ে।
[প্রথম সেমিষ্টার পরেই এয়ার ফোর্সে সুযোগ পেয়ে রিমন চলে যায়, ওর সাথে আর দেখা হয়নি, হবে বলেও আর মনে হয়না ।]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




