Krzysztof Kieślowski–র The Three Colors trilogy দেখেননি বা নিদেনপক্ষে নাম শুনেননি এমন সিনেমাখোর খুঁজে পাওয়াটা অনেক কঠিন। 3 colors ছাড়াও তার অসাধারন কিছু সৃষ্টির মধ্যে পড়ে The Double Life of Véronique, A short Film about Love, A Short Film about Killing এবং The Decalogue নামক ১০ পর্বের কালজয়ী সিনেমা সিরিজ। বাইবেলের টেন কমান্ডমেন্টসের প্রতিটি কমান্ডমেন্টকে একটা থিম ধরে Kieślowski নির্মান করেছেন ১০ পর্বের এই মুভি সিরিজটি।
Warsaw র একটি বহুতল এপার্টমেন্টে বসবাসকারীদের জীবনযাত্রা নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রতিটি পর্ব। প্রতিটি পর্বের-ই রয়েছে সম্পুর্ন মৌলিক কাহিনী বিন্যাস, মৌলিক চরিত্র। যদিও এক পর্বের চরিত্রকে মাঝে মাঝেই দেখা যাবে অন্য পর্বে screen শেয়ার করতে। এ ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে এপার্টমেন্টের কমন লিফট ব্যাবহারের সময় বিভিন্ন চরিত্রের পাশাপাশি অবস্থান, অথবা এক যুবকের উপস্থিতি যাকে দশ পর্বের আট পর্বেই পর্দায় দেখা যায়। ১ম পর্বে লেকের পাড়ে আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকা, ২য় পর্বে হাসপাতালের কর্মচারী, ৩য় পর্বে ট্রাম ড্রাইভার, ৪র্থ পর্বে নৌকা চালক, ৫ম পর্বে কন্সট্রাকশনের কর্মী, ৬ষ্ট পর্বে বাজারের ব্যাগ নিয়ে চলে যাওয়া এক লোক, ৮ম পর্বে ইউনিভার্সিটির ছাত্র, ৯ম পর্বে বাইসাইকেল চালানো এই যুবকের পর্দায় উপস্থিতি অবশ্য খুব অল্প সময়ের জন্য। সংলাপ বিহীন এই চরিত্রকে মাঝে মাঝে দেখা যাবে বিষন্ন দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকতে। বিভিন্ন সিনেমাখোররা এই চরিত্রটির মাঝে যীশু খ্রীষ্ট কে খোঁজার চেষ্টা করলেও Kieslowski-র ভাষ্যমতে “আমি জানি না সে কে, হয়তো খুবই সাধারন একজন সাধারন মানুষ যে দূর থেকে আমাদের দেখে এবং আমাদের জীবন প্রনালী নিয়ে যে খুব একটা খুশি নয় ”।
এই মুভিগুলো কোন দার্শনীক চিন্তাভাবনার চিত্রায়ন নয় বরং কিছু ব্যাক্তিগত গল্পের সমাবেশ যা আমাদের খুব সহজেই গল্পের ভিতরে নিয়ে যাবে। এই মুভি সিরিজ দেখে The Decalogue এবং Kieslowski কে নিয়ে কুবরিকের মতামত, “The Decalogue is the only masterpiece made in my lifetime and He has the very rare ability to dramatize his ideas rather than just talking about them”। ছবিতে এমন একটা মুহুর্তও দেখানো হয়নি, যেখানে কোন কমান্ডমেন্ট নিয়ে আলোচনা বা কোন নীতির বুলি কপচানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চরিত্রকে দেখা যাবে জীবন যুদ্ধের পাশাপাশি নীতিবোধের সাথেও যুদ্ধরত। ২য় পর্বে যেমন গল্পের প্রধান মেয়ে চরিত্রকে দেখা যায় তার অসুস্থ স্বামীর পাশে চিন্তামগ্ন। স্বামী যদি মারা যায় তার অনাগত সন্তান তাহলে পৃথিবীর মুখ দেখতে পাবে; স্বামী বেঁচে থাকলে তাকে গর্ভপাত করাতে হবে, এমন জটিল নৈতিক গোলকধাঁধার সমাধান এসেছে স্বামীর চিকিৎসারত ডাক্তারের বেদনাদায়ক অতীত থেকে। ২ জন আলাদা আলাদা মানুষের ব্যক্তিগত জীবন সংগ্রাম পাশাপাশি চিত্রায়িত হয়েছে যেখানে এক জনের সাথে আরেকজনের কোনরকম সম্পর্ক নেই। কখনো দেখানো হবে নিঃসঙ্গ টিনেজ বালকের বাইনোকুলার দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের একাকী মহিলার জীবনযাত্রার উপর গোয়ান্দাগিরি করতে, আবার সেই মহিলাকেই দেখা যাবে এই বালকের যৌন অনভিজ্ঞতাকে ব্যাবহার করে তাকে হেয় করতে। তাদের সম্পর্ক এক সময় হয়ে উঠবে বিভ্রান্তিকর, অনেকটাই নৈতিক পরিস্থিতির শিকার। কে দোষী আর কে পরিস্থিতির স্বীকার দর্শকদের এই অনুভুতিটাকে পরিচালক screen পরিবর্তন করার মতো করেই বারবার পরিবর্তন করতে থাকবেন।
ডেকালগ ৫ এ দেখানো হবে এক খুনীকে; খালি চোখে দেখেই যাকে দোষী হিসেবে রায় দেয়া যাবে। কিন্তু গল্পে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আসামীর পক্ষের উকিলকেও, যে কিনা তার জীবনের প্রথম মামলা লড়তে এসে আবেগপ্রবন ভাবে চাইছে আসামীর সাজা কমিয়ে তাকে মৃত্যুদন্ডের হাত থেকে বাঁচাতে। পর্ব ১ এ মেধাবী ছেলের সাথে তার বিজ্ঞানী বাবার সম্পর্ক দেখে যেমন বাবাদের ভালবাসার একটা নিদর্শন পাবেন (১০ পর্বের মধ্যে সবচেয়ে বেদনাদায়ক পর্ব হচ্ছে পর্ব ১) তেমনি পর্ব ৪ এ মেয়ের সাথে বাবার সম্পর্কের শেষ পর্যন্ত কি হলো বা যেটা দর্শকদের দেখানো হলো না, সেটাই বা কি ছিলো এই চিন্তাতেও ডুব দিতে হবে। পর্ব ৯ এ দেখানো হয়েছে এক লোকের গল্প যার স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত, যেখানে দর্শক অনুভব করবে যে কোন একজনের আচরণ যদি একটু অন্যরকম হতো, তাহলে হয়তো...............
ডেকালগ ৫ এবং ৬ এর সাথে পরবর্তিতে আরো কিছু দৃশ্য সংযোজন করে নতুন করে বড় পর্দায় মুক্তি দেয়া হয়। ডেকালগ ৫ থেকে করা হয় A Short Film about Killing এবং ডেকালগ ৬ থেকে করা হয় A short Film about Love। মনিকা বেলুচি অভিনীত “Malena” এবং মনীষা কৈরালা অভিনীত “Ek Chhotisi Love Story” Kieślowski–র A short Film about Love মুভিটির-ই ইতালিয়ান এবং ইন্ডিয়ান ভার্সন। A short Film about Emotion নামে পরিচালকের আরেকটি মুভি করার কথা ছিল (সম্ভবত ডেকালগ ৩ নিয়ে যেখানে এক প্রেমিকা তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে ক্রিসমাসের রাতে সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়), কিন্তু এই মুভিটির কাজ শুরু করার আগেই Kieślowski কে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয়।
Kieslowski তার ডেকালগের ১০ পর্বের জন্য ১০ জন্য ভিন্ন ভিন্ন cinematographer এর সাথে কাজ করেছেন যাতে করে একি রকম ভিজুয়্যাল স্টাইল দর্শকদের বিরক্ত না করে। ১০ টি কমান্ডমেন্ট, ১০ টি মুভি কিন্তু কোন কমান্ডমেন্ডের সাথে কোন ছবির one to one রিলেশন নেই, বরং কিছু ছবি একাধিক কমান্ডমেন্ড টাচ করে গেছে, আবার কিছু ছবিতে চলে এসেছে সব কমান্ডমেন্ডের নৈতিক বিধি-নিষেধ। নিয়মের এককেন্দ্রিক প্রতিফলন নয়, বরং প্রতিটি ছবিতেই দেখানো হয়েছে বাস্তব জীবনের কিছু জটিল সমস্যা আর তার সাথে জড়িত মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি। পরিচালক কোনো পর্বের জন্য নির্দিশ্ট করে কোনো কমান্ডমেন্টের কথা উল্লেখ না করলেও সিনেমা বিশেষজ্ঞদের মতে সিরিজটির সাথে কমান্ডমেন্টের যোগসুত্রটা এই রকমঃ
পর্ব ১ : I am the Lord your God; you shall have no other gods before me."
পর্ব ২ : Thou shalt not take the name of the Lord thy God in vain
পর্ব ৩ : Remember the Sabbath day, to keep it holy
পর্ব ৪ : Honor thy father and thy mother
পর্ব ৫ : Thou shalt not kill
পর্ব ৬ : Thou shalt not commit adultery
পর্ব ৭ : Thou shalt not steal
পর্ব ৮ : Thou shalt not bear false witness against thy neighbor.
পর্ব ৯ : Thou shalt not covet thy neighbor's wife
পর্ব ১০ : Thou shalt not covet.
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য দি ডেকালগ দেখার একটা নিয়ম ও বাতলে দিয়েছেন, “সম্পুর্ন সিরিজটা একসাথে না দেখে, একটা একটা পর্ব করে দেখেন। দেখার পর ভাবেন কি দেখলেন? সুযোগ থাকলে কারো সাথে এ নিয়ে কথা বলেন, না থাকলে নিজের সাথে নিজেই আলাপ করেন যেটা Kieslowski-র চরিত্রগুলো সবসময়-ই করে থাকে” ।
বলা হয়ে থাকে ভালো মুভি আপনাকে আনন্দ দিবে অথবা আপনাকে চিন্তা করাবে অথবা আপনার মুখ থেকে ওয়াও শব্দটা বের করে নিয়ে আসবে, কিন্তু কালজয়ী অমর মুভিগুলো আপনাকে একি সাথে সবগুলো কাজ করতে বাধ্য করবে। ডেকালগ দেখার পর মনে হবে এটা শুধুই একটা মুভি নয়, এটা একটা শিল্প যেখান থেকে সুন্দর জীবনের প্রতিচ্ছবি আঁকার দিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য আপনি চিন্তা করতে বাধ্য হবেন।
দর্শক এবং সমালোচক উভয় মহলেই যে ডেকালগ নিজের একটা আলাদা অবস্থান তৈরী করে নিয়েছে তার প্রমান IMDB রেটিং ৯.০/১০, Rotten Tomatoes এর এভারেজ রেটিং ৯.৪/১০ আর Empire Online এর The 100 Best Films of World Cinema লিস্টে ডেকালগের অবস্থান ৩৬-তম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২