somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিওঃ Departures (২০০৮)

১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুভিঃ Departures (২০০৮)
জেনারঃ ড্রামা
দেশঃ জাপান
২০০৮ সালের সেরা বিদেশী ভাষার ছবি হিসেবে অস্কার পাওয়া ডিপারচার্সের শুরুটা দেখে কারো পক্ষেই ধারনা করা সম্ভব না ছবির প্লট কি নিয়ে, এমনকি ছবির অর্ধেক শেষ করে ফেলার পরেও আপনি বুঝতে পারবেন না, শেষে এসে মুভিটা আপনাকে কি রকম ধাক্কা দিতে যাচ্ছে। গল্পের শুরুটা নিতান্তই সাদামাটা, চাকরি হারিয়ে ফেলে ডিয়াগো তার স্ত্রী মিকাকে নিয়ে চলে আসে তার শৈশবের শহরে। নিজের শহরে এসে জিবীকার তাগিদেই চাকুরি যোগার করে এক ট্রাভেল এজেন্সীতে, তবে এই ট্রাভেল এজেন্সী মানুষকে অন্য কোন দেশে বা অন্য কোন শহরে ঘুরতে পাঠায় না, সরাসরি উপরে পাঠিয়ে দেয়। না, এরা কোন হিটম্যান না, এই এজেন্সীর কাজ হচ্ছে মৃতদেহের সৎকার করা।

মৃতদেহের সৎকার জন্য বিশেষ আয়োজন, মৃতদেহকে তার পছন্দমতো সাজানো (পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে জেনে নিয়ে) এবং মৃতকে সম্মান প্রদর্শন জাপানী সংস্কৃতিতে প্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান। মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মুভি বানানোতে ও মনে হয় জাপানীজরাই সবচেয়ে এগিয়ে, কুরোসাওয়া-র “ইকিরু”, ওযু-র “টোকিও স্টোরি”, ইতামি-র “দি ফিউনেরাল” কিংবা “মাবোরোশি”, “আফটার লাইফ”-এর মতো বিখ্যাত মুভিগুলোতে মৃত্যু একটা বিশেষ জায়গা দখল করে আছে, এবং আমার ব্যাক্তিগত মতামত; ডিপারচার্স মাস্টার পিস হিসেবে বাকি মুভিগুলোর চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই।

ডিপারচার্সের স্ক্রিপ্টিং এবং মেকিং এর পেছনে সময় লেগেছে মাত্র ১০ বছর, গল্পের প্রয়োজনে পেশাদারের কাছে গিয়ে ডিয়াগোকে শিখতে হয়েছে CELLO বাজানো এবং “Art of Encoffinment” । মৃতদেহের সৎকার জাপানীদের কাছে অনেক স্পর্শকাতর হওয়ায় পরিচালক অনেক গুলো সৎকারে নিজে উপস্থিত থেকেছেন সেই সময়কার পরিবেশ, নিয়ম কানুন, পরিজনদের অনুভুতি, আর পারিপার্শ্বিক খুটিনাটি বিষয় আয়ত্ত করার জন্য।

ছবির মিউজিক এবং সিনেমাটোগ্রাফি হচ্ছে ছবির সাফল্যের আরেকটি বড় কারন। ছবির শুরুর দিকের নাইনথ সিম্ফনি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ডিয়াগোর সেলোতে বাজানো মিউজিক বিশেষ করে আউটডোরে পাহাড়ে বসে সেলো বাজানোর কয়েক মিনিট আপনাকে মুগ্ধ করবেই (কাভারে যে ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন)। ছবিতে কোন স্পেশাল ইফেক্ট ব্যাবহার করা হয়নি, আর যেখানে যেখানে ক্লোজ শট নেয়া হয়েছে সেখানে ক্লোজ শটের গুরুত্বটা খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারবেন। এছাড়াও আরো কিছু কিছু টুকরো টুকরো মুহুর্ত আপনাকে মুগ্ধ করবে যেমন, ডিয়াগোকে দেখে মিকোর আনন্দের বহিঃ প্রকাশ, মৃতদেহের সৎকার কোম্পানির মালিকের সৎকার কিভাবে করতে হবে তার বিশদ বিবরন, ক্লোজশটে ইয়ামাশিতার মুখের এক্সপ্রেশনের বদল কিংবা জীবন এবং মৃত্যুকে বোঝানোর জন্য সিম্বলিক শট যেখানে ডিম পারার জন্য মা স্যামনের স্রোতের বিপরীতে সাতরে উপরে উঠার সময় মৃত স্যামনের স্রোতের সাথে নিচের দিকে নেমে আসা। আর মসৃন গতিতে এগোতে এগোতে মুভির এক প্লটের মাঝে কখন অন্য প্লট ডুকে যাবে সেটা বুঝাটাও অনেক কষ্টের, যখন বুঝবেন তখন আপনি নতুন প্লটে বসে আছেন।

IMDB তে ৮.১ রেটিং পাওয়া ডিপারচার্স দেখার পরে অনেকের-ই প্রিয় মুভির লিস্টে ডিপারচার্স নামটাও যোগ হবে সেটা হলফ করে বলতে পারি, বাবার ভালবাসা কি সেটাও নতুন করে উপলব্ধি করবেন ডিপারচার্স দেখে আর ফ্রি একটা টিপস দিয়ে দিচ্ছি, ছবি শেষ হবার ২০ মিনিট আগে চোখ মোছার জন্য টিস্যুর বক্সটা হাতের কাছে এনে রাখাই ভালো, কারো কারো কাজে লাগতেও পারে।

৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×