মাত্র ক'দিন আগেই প্রধান মন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে বেশ কিছু গতবাঁধা কথার মতো বরাবরই নিজের পরিবার এর গল্প আর বিশ্ব ব্যাংকের মিথ্যে (?) অভিযোগের কথা তুলেছেন। অবশ্য এ কথা তাদের দলের সবাই বারবারই বলেছেন, এখানে নতুন কিছু নেই। দুর্নীতি হয়েছে কিনা, সেটা জনগণের জানার চেষ্টা আর বুদ্ধিমত্তার উপরই ছেড়ে দেয়া ভালো, যেহেতু দিন শেষে এই টাকা আপনাদেরই পরিশোধ করতে হবে, তাই আমি এটা নিয়ে খুব বেশী চিন্তিত নই।

ছবি কপিরাইটঃ ডেইলি স্টার
আজ প্রথম আলোতে চোখে পড়লো বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪০ বিলিনের নিচে নেমে যাওয়ার খবর। যুদ্ধ, বৈশ্বিক মন্দা, রেমিটেন্স আসা কমে যাওয়া সব মিলিয়ে একটা লেজে-গোবরে অবস্থা। মজার ঘটনা হলো, যেই বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগকে তুড়ি দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নের সেতু করার ঢোল সরকার পিটিয়েছে এখন সেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে ১ বিলিয়ন ডলার আর আই.এম.এফ এর কাছ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার লোন নেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রণায়ল নাকি কথা চালিয়ে যাচ্ছে। (সূত্র)। গতকাল আই.এম.এফ. এর প্রতিনিধিও নাকি বাংলাদেশে এসেছেন এ বিষয়ে কথা বলতে। বাংলাদেশ হয়তো লোন পাবেও, সমস্যা সেখানে নয়। সমস্যা হলো ক্রমবর্ধমান লোনের পরিমান বেড়ে যাওয়ার সুদের পেমেন্ট এর অংশও বড় হচ্ছে আর তাতেই রিজার্ভের একটা বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে নিয়মিতভাবে, পাশাপাশি আমদানি তো রয়েছেই। কিছুটা আশার কথা হলো যে বাংলাদেশ যে লোনগুলো চাচ্ছে সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদী (১০ বছরে পেব্যাক করতে হবে)। তবে, তথাকথতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখা কথা বলে যে ৫.৫ বিলিয়ন লোন নেয়া হচ্ছে সেটা কতটুকু ভোগান্তির কারণ হতে পারে সেটা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করা উচিত আমাদের।
শুধু রাস্তা-ঘাট, রেল-লাইন, সাবওয়ে করে দেশের উন্নয়নের চাকা রেডিক্যালি পরিবর্তন সম্ভব নয়। বৈশ্বিক বাজারে অর্থনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে এবং সেটা সহসাই চলে যাচ্ছে না। আমেরিকা ইতোমধ্যেই রিসিশনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। যুদ্ধের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য-সংকট ছাড়াও বৈশ্বিক বাণিজ্য ধীরে ধীরে আরো ব্যাহত হবে। বাংলাদেশে নাকি এখন নিয়ম করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে অথচ গত বছরের শেষ দিকেও আমি বাংলাদেশে ছিলাম দু'তিন মাস, তখন এই সমস্যা চোখে পড়েনি। টাকা ক্রমাগতই তার মূল্যমান হারাচ্ছে। আমি বিগত কয়েক মাস ধরেই সেটা লক্ষ্য করছি, কারণ প্রতি মাসেই বিভিন্ন কারণে আমি বাংলাদেশে টাকা পাঠাই। ৮৫/৮৬ টাকা রেট থেকে ৯৫/৯৬ কোথাও কোথাও ১০০ টাকা প্রতি ডলারে লেনদেন হচ্ছে। মানে হচ্ছে, রিজার্ভে ডলার থেকেও টাকার মূল্যমান হারিয়ে ফেলছে। তা ছাড়া পণ্য আমদানি, ইন্টারেস্ট পেমেন্ট এর কারনে প্রায় প্রতিদিনই রিজার্ভ কমছে। তদুপরি বাংলাদেশের বাজেট কমে নেই, সেটা শুধু বাড়ছেই। আর বাজেট ঘাটতিও বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে শুধু বড় অঙ্কের ঘাটতি বাজেট দিয়ে মনে শান্তি পেলেও, ঘাটতি পূরণের জন্য নানা জায়গা থেকে লোন নিতে থাকলে দেশে শান্তি আসবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




