ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশের সফরকালে দেশটির এয়ারবাস কোম্পানী থেকে বাংলাদেশ দশটি এ৩৫০ বাণিজ্যিক বিমান ক্রয় করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং ভুল জেনে না থাকলে এ ব্যাপারে সমঝোতার চুক্তিও করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাই। প্রশাসনের কোন ব্যক্তি না হয়েও আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝতে পারি এ সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হয়েছে। এটি দেশের জন্য খুবই একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে, বাংলাদেশ বিমানের আধুনিকায়ন, সক্ষমতা ও সেবার পরিধি বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যুগোপযোগী বলে আমি মনে করি।
বিমানটির ব্যাপারে আমি জেনেছি আরো অনেক আগেই। যদিও ভাবিনি বাংলাদেশ বোয়িং বিমানের বহরে এয়ারবাস যোগ করবে। বিমানটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ও জ্বালানী ব্যবহারে বেশ মিতব্যয়ী। বিভিন্ন ক্যারিয়ারে তাদের ট্র্যাক রেকর্ডও বেশ ভালো।
খুব শীঘ্রই হজরত শাহ জালাল বিমান বন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হবে। সে উপলক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশ বিমানের এই নতুন সংযোজন অবশ্যই বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ারকে আরো বেশী দেশে যাত্রীসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই সাথে খুব সম্ভবত এর মাধ্যমেই বাংলাদেশ উত্তর আমেরিকায়ও তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করবে। অতীতে আমেরিকার এফ.এ.এ. বাংলাদেশ বিমানকে আরো আধুনিকায়ন (নতুন উড়োজাহাজ কেনা) ও সেবার মান বাড়াতে বলেছিলো। মাঝে বাংলাদেশ বোয়িং কোম্পানী থেকে বেশ ক'টি বিমান ক্রয় করলেও নানা কারণে বাংলাদেশকে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমতি দেয় নি। নতুন টার্মিনাল চালু হলে আর নতুন উড়োজাহাজ সংযোজিত হলে সে সম্ভাবনা দ্বারও উন্মোচিত হবে বলে আমার ধারনা।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এ৩৫০ মূলত দীর্ঘ দূরত্বে পরিচালনা করার মতো উড়োজাহাজ যা দিয়ে খুব সহজেই ঢাকা থেকে সরাসরি ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সেই সাথে ইউরোপে বিরতি দিয়ে (ট্রানজিট) ঢাকা থেকে উত্তর আমেরিকায়ও ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে এই নতুন বিমানগুলো যাতে হজ্বের জন্য বিশেষ ফ্লাইট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে মধ্য-প্রাচ্যের রুটে পরিচালনা না করা হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, বর্তমানে সিঙ্গাপুর এয়ার লাইনস এ৩৫০-৯০০ মডেলের ৬৩ টি বিমান ব্যবহার করছে এবং সংখ্যার দিক থেকে তারাই এর সবচেয়ে বড় অপারেটর।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ মূলত বোয়িং কোম্পানীর বেশ কিছু উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে। দীর্ঘদিন বোয়িং ব্যবহারের কারনে বাংলাদেশের পাইলটগণ বোয়িং-এ যথেষ্ট দক্ষ হলেও এয়ারবাস বিমান চালনার অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। আশা করছি এ ব্যাপারে পাইলটদের বিশেষ ট্রেনিং এর ব্যবস্থাও ফ্রান্স করবে। হ্যাঙ্গারে দুটো বিমান সংঘর্ষের ঘটনা বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও ঘটে বা সম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর সময় আবাঙ্গালরা যেন আরো সাবধানতা অবলম্বন করে সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। অবহেলায় দেশের সম্পদ নষ্ট করলে সাজার ব্যবস্থা করা উচিত।
বাংলাদেশ আরো একটি স্যাটেলাইট কিনতে যাচ্ছে। এটা পজিটিভ হলেও এ ব্যাপারে আমি পরিষ্কার ধারনা পাই নি। আশা করছি সরকার পুরো বিষয়টি জনগণের কাছে আরো খোলাসা করে বিষয়টি উপস্থাপন করবে। প্রথম স্যাটেলাইটি দিয়ে সরকার তার কার্যক্ষমতার কতটুকু ব্যবহার করছে এ ব্যাপারে কারো পরিষ্কার ধারনা আছে বলে আমার মনে হয় না। সেটা জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করলে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটি ক্রয় কতটুকু যুক্তি সঙ্গত তা বোঝা যেত। যতদিন এ বিষয়টি পরিষ্কার না হচ্ছে ততদিন এ নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলাটা আপাতত সমীচীন বলে মনে হচ্ছে না। গুডলাক বাংলাদেশ।
ছবি কপিরাইটঃ এয়ারবাস।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৫৬