ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে মাত্র এইচ.এস.সি পাস করে বি.বি.এ-তে পড়ছি। মধ্যবিত্ত পরিবার টাকা-পয়সার সমস্যা না থাকলেও অপচয় করার মতো টাকা ছিলো না। সে সময়ে বড় ভাই ভারতে বি.বি.এ পড়তে গিয়ে দেশে বেড়াতে আসলো। আমাকে বাইকের ছবি দেখালো, তার বন্ধু পালসার কিনেছে। ব্যাস, ২০০৩ সালের কথা, হঠাৎ মাথায় জেদ চাপলো আমার বাইক কিনতে হবে। রীতিমতো বাসায় তোলপাড় অবস্থা, নানা অজুহাতে বোঝানোর চেষ্টা করছি আমার বাইক কেনা দরকার। বাবা সায় দিচ্ছিলেন না।
এর মাঝে আমার বাইক কেনার ইচ্ছের কথা ছোট চাচার কানে চলে গেল। তখন তিনি নিউ ইয়র্কে ব্লুমবার্গে জব করছেন। আমাকে কাজের অফার দিলেন। জার্মাানীর কিছু ব্যারিষ্টারের (পঞ্চাশ হাজারের উপরে) তথ্য একটা ডাটাবেইজে তুলে দিতে হবে, চুক্তিভিত্তিক কাজ। উপায় না দেখে খেয়ে না খেয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। দু'মাস এর মতো লাগলো শেষ করতে তবে এককালীন আয় হলো ৭০ হাজার টাকা। বাইকের স্বপ্ন সত্যি হতে শুরু করলো।
সে সময় বাজাজের পালসার বাইক উত্তরা মটরসে প্রথম এলো বাংলাদেশে। বাংলা মটরে তাদের শো-রুমে গিয়ে মাথা নষ্ট, এটাই কিনতে হবে যদিও বাইক চালাতে জানি না। কিন্তু বাইকের দাম ৯৩,৫০০। বাকি টাকা কোথায় পাবো? বাবা-তো টাকা দেবে না। শুরু হলো, মামা-খালা, ফুপুদের কাছে আবদার। এদিক-সেদিক করে টাকা জোগাড় হলো। একদিন সন্ধ্যায় আমার বন্ধুকে সাথে নিয়ে বাংলা মটরে গিয়ে হাজির। বাবা অফিসের ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে পিকআপ ভ্যানে আসলেন। কথা-বার্তা শেষ, টাকা দেয়ার আগে বাবা বলছেন কিনবো কিনা আবার ভাবতে। হ্যাঁ বলে নতুন বাইক বাসায় নিয়ে এলাম।
দু'একদিনের মধ্যেই বন্ধুর কল্যানে বাইক চালানো শিখে গেলাম। আমাকে আর পায় কে! কলেজে বাইক নিয়ে যেতাম। যারা ঢাকা সিটি কলেজে পড়েছেন, তারা হয়তো জানবেন ছাত্রদের বাইক গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্ক করে রাখা যেত। সে সময়ে কলেজের নিচ তলায় আমার বাইক পার্ক করা থাকতো। অনেকেই আমাকে শুধু বাইকের কারনেই চিনতো, এমনকি মেয়েরাও। মাঝে-মধ্যে বন্ধু-বান্ধব এ নিয়ে বেশ মজা করতো। সমস্যা হলো তেল কেনার টাকাতো নেই। উপায় বের হলো, কোচিং-এ পড়ানো শুরু করলাম। যা আয় হচ্ছিলো তা দিয়ে আমার বেশ চলছিলো। শুধু মাঝে মধ্যে ইঞ্জিন ওয়েল, ব্রেক শু, ইন্ডিকেটর এসব চেঞ্জ করতে হতো। আমেরিকায় আসার আগ পর্যন্ত বাইকটি আমার কলিজার টুকরোর মতো যত্ন করে ব্যবহার করেছি। তিন বছরে চালানো হয়েছিলো ২৫ হাজার প্লাস কিলোমিটার।
তিন বছর চালানোর পরেও ঐ বাকটা এক লক্ষ দশ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম। সে সময়ে পালসারের বেশ জনপ্রিয়তা ছিলো, এখন কি অবস্থা জানিনা তবে দেশে গেলে এখনও পালসার দেখি, পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে। যে দিন ক্রেতা এসে বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছিলো, আমি দৃষ্টির আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। সে যে কি ভীষণ ব্যাথা তা বাইকপ্রেমী ছাড়া বোঝানো কঠিন।
আমেরিকায় কখনো বাজাজের বাইক আসলে পালসার কেনার ইচ্ছে আছে। অবশ্য সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না জানি না।
ছবি কপিরাইট: আর্ন্তজাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৭:২০