somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি আইনের (অধ্যাদেশ) সূচনা যেভাবে

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইনডেমনিটি শব্দের অর্থ ‘শাস্তি এড়াইবার ব্যবস্থা’ অর্থাৎ, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ হল সেই অধ্যাদেশ যার মাধ্যমে অপরাধের জন্য শাস্তি এড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট চারবার ইনডেমনিটি (দায় মুক্তি) অধ্যাদেশ/ আইন জারি হয়েছে। দেশে প্রথম ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ণ হয় ১৯৭৪ সালে। ওই বছর জাতীয় রক্ষীবাহিনী আইনের সংশোধনী এনে ইনডেমনিটি দেয়া হয়। রক্ষীবাহিনীকে অত্যাচার, নির্যাতন, লুটতরাজ ও গোপনে-প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডের দায় থেকে মুক্তি দিতে জাতীয় রক্ষীবাহিনী আইনে এ সংশোধনী আনা হয়।

১৯৭৪ সালের ১১নং আদেশ:
১৯৭৪ সালে রক্ষীবাহিনী আইনের সংশোধনী এনে ইনডেমনিটি দেয়া হলেও কার্যকারিতা দেখানো হয় ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। অর্থাৎ রক্ষীবাহিনী কার্যক্রমের শুরু থেকে যা কিছু দায়ভার, সবই দায়মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালের সংশোধনীতে। ১৯৭২ সালে আইন তৈরির মাধ্যমে রক্ষীবাহিনী গঠনের পর এটিই ছিল এই আইনের প্রথম সংশোধনী।

জাতীয় রক্ষীবাহিনী অর্ডার প্রণয়ন করা হয় যা ১৯৭২ সালের ২১নং আইনে। ১৯৭৪ সালের রক্ষীবাহিনী আইনের দুটি সংশোধনী আনা হয়।

১৬ (ক) অনুচ্ছেদ সংশোধনী:
রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা তাদের যে কোনো কাজ সরল বিশ্বাসে করেছেন বলে গণ্য করা হবে এবং এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের, অভিযোগ পেশ কিংবা আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না।

৮ (ক) অনুচ্ছেদ সংশোধনী:
রক্ষীবাহিনীর যে কোনো সদস্য বা অফিসার ৮নং অনুচ্ছেদবলে বিনা ওয়ারেন্টে আইনের পরিপন্হী কাজে লিপ্ত সন্দেহবশত যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে। এছাড়া যে কোনো ব্যক্তি, স্হান, যানবাহন, নৌযান ইত্যাদি তল্লাশি বা আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে-এমন যে কোনো সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন। যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং তার সম্পত্তি হস্তগত করার পর একটি রিপোর্টসহ নিকটতম থানা হেফাজতে পাঠিয়ে আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহণ করতে পারবে।

দ্বিতীয় ইনডেমনিটি আইন (অধ্যাদেশ) জারির পটভূমি:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী জুনিয়র অফিসারের হাতে সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশ সিঁড়িতে রেখেই তাঁর দীর্ঘকালের সহচর ও মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে । বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার ২১ সদস্য মোশতাকের মন্ত্রীসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগমুহূর্তেও বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। খন্দকার মোশতাককে মন্ত্রীসভা গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা করেন তৎকালীন কেবিনেট সচিব এইচ টি ইমাম (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা)।

দ্বিতীয় ইনডেমনিটি আইন (অধ্যাদেশ) জারি:
অবৈধ রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। সেদিন ছিল শুক্রবার। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর আছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর আছে।

অধ্যাদেশের প্রথম অংশে বলা হয়েছে,
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে,
রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাত্ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

জিয়ার ভূমিকা:
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করেছিল, আওয়ামী লীগের এই প্রচারণা বিভ্রান্তিমূলক এবং ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রকারী হিসাবে আবিভূর্ত হন। ওই সময় বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সায়েম জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। সংশোধনীটি পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে যায় বলে অভিযোগ করে আসছে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।


বৈধতার নেপথ্যে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা:

সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় পূর্ববর্তী সরকারের সকল অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়া পরবর্তী সরকারের একটি রুটিন ওয়ার্ক। যেমন: অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী স্বৈরশাসক এরশাদ সরকার প্রণীত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমে বৈধতা দেওয়া হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে। একইভাবে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের বৈধতা দেওয়া হয় ২০১১-তে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। কাজে জিয়াউর রহমানের আমলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্ববতী সরকারের জারিকৃত অধ্যাদেশ ও কার্যক্রমকে আইনি বৈধতা ছিল একধরনের রুটিন ওয়ার্ক।

জিয়ার দায়:
পঞ্চম সংশোধনীকে বৈধতা না দিলে জিয়াউর রহমানের আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যেত। কিন্তু তিনি তা করেনি। জিয়া সরকার খুনিদের বিচার না করে সরকারি উপর মহলে এবং বিদেশের দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। জিয়া নিহত হওয়ার পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বা রহিত করেনি। ফলে দায়মুক্তি পেয়ে খুনিরা হত্যার কথা প্রকাশ্যে বলে বেড়াত। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১২ নভেম্বর ‘দি ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬’ বিলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তির কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে শুরু হয়।

তৃতীয় ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ:
এরশাদ ক্ষমতায় আসীন হলে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল না করে আবার নিজের সুবিধার জন্য দ্বিতীয়বার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে যা ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীতে এটি অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত এরশাদ সরকারের জারিকৃত সকল প্রকার সামরিক আইন, অধ্যাদেশ, বিধি নির্দেশ ইত্যাদি বৈধতাদানের উদ্দেশ্যে তৃতীয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

চতুর্থ ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ:
চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি বিল ২০০৩’ নামে সবশেষে ইনডেমিনিটি আইন পাস হয়।

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ আর্কাইভ, রক্ষীবাহিনীর অজানা অধ্যায় (কর্নেল অব. সরোয়ার হোসেন)রক্ষীবাহিনী: সত্যকথন ও দায় স্বীকার (আনোয়ারুল আলম). উইকিপিডিয়া, সংবিধানের রাজনৈতিক বিতর্ক (আমীন আল রশীদ), Constitutional History of Bangladesh (Dr. Belal Hossain), স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ (হায়দার আকবর খান রনো)।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:২৪
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×