somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশে যাওয়ার সময় যা যা কিনবেন, যা যা কিনবেননা

০২ রা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন আগে সচলায়তনে একটা ব্লগ দেখেছিলাম দেশ থেকে বিদেশে আসার সময় কি কি জিনিষ দেশে থেকে নিয়ে আসা ভালো, কি কি এখানেই ভালো পাওয়া যাবে (তুলনামূলক ভাবে কম খরচে)। তবে ওটা বেশ আগে লেখা বলে কিছু কিছু আপডেট দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। সময়ের সাথে কিছু তো বদলায়ই।

ইউরোপে, আমেরিকায়, কানাডায় একেকরকম হওয়ার কথা। এই লেখাটা আমেরিকার ভিত্তিতে লেখা, কানাডার ব্যাপার কাছাকাছি হলেও ইউরোপের সাথে এটা মেলার সম্ভাবনা বেশ কম।

প্রথমেই আসি টেকনোলজির ব্যপারে। এদেশে ল্যাপটপ অনেক কম খরচেই কিনতে পারবেন, তাছাড়া ওয়ারেন্টির ব্যাপার তো আছেই। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অনেক ল্যাব আছে, লাইব্রেরিতে কমন ব্যাবহারের জন্য কম্পিউটার আছে, আপনার অফিসে একটা কম্পিউটারও দিতে পারে। অনেক রিসার্চ এ্যাসিস্টেন্টকে সুপারভাইজার ল্যাপটপ দেয় রিসার্চের কাজের জন্য। কাজেই যদি আগেই না থেকে থাকে, তাহলে দেশ থেকে না কিনে এখানে এসেই কিনুন। একই খরচে ভালো জিনিষ পাবেন। তবে এদেশে আসার পর নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কম্পিউটারের দোকানগুলো থেকে কিছু কিনবেন না। এরা দামী জিনিষের দাম মোটামুটি একই রাখলেও প্রয়োজনীয় এক্সসেসরিস (যেমন কীবোর্ড, মাউস, ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, কেবল, সিডি ইত্যাদি) অনেক বেশি দামে বিক্রি করবে। সেল থাকলে সেখানে কম দামে পেতে পারেন, তবে সবসময় সেসব থাকে না। অনলাইনে কিনুন এসব। কমদামে ভালো ভালো জিনিষ পাবেন। দেশ থেকে সফটওয়্যরের সিডিতে, পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভে বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভে প্রয়োজনীয় জিনিষ গুলো নিয়ে আসতে পারেন। সবই এখানে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন যদিও, তাই প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো ছাড়া বেশি কিছু আনার দরকার নেই তেমন। গান নিয়ে আসুন ইচ্ছা মতন। এমপিথ্রি প্লেয়ার নিয়ে আসতে পারেন।

আসা যাক বইপত্রের ব্যাপারে। আপনার প্রথম সেমিস্টারের বইগুলো নিয়ে আসতে পারেন। আসার পরপরই হাতে টাকা নাও পেতে পারেন, একটু দেরি হলেই টাকার সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে লাইব্রেরিতে, বা আগের কারো কাছে পেতে পারেন। আপনার ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে বইয়ের এ্যাভেইলাবিলিটি সার্চ করে দেখুন। যদি না থাকে তবে কিনে আনতে পারেন। একেবারে প্রয়োজনীয় না হলে দরকার নেই অবশ্য। আগের কারো কাছে বই পেতে পারেন, বা একটু দুই নম্বরী জানলে পিডিএফও জোগাড় করতে পারবেন। বই এর দাম এখানে অনেক, তবে কমদামে কেনার ব্যবস্থাও আছে। আশা করি পরের পোস্টে বই আর টেকনোলজির জিনিষ পত্র কমদামে কেনার কিছু সাইটের (অবশ্যই লেজিটিমেট) নাম দিবো।


রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে, এখানে মোটামুটি সবই পাওয়া যাবে, দামও খুব একটা বেশি না। একটু খুজলেই কয়েকদোকান মিলিয়ে কম দামে জিনিষ গুলো পেয়ে যাবেন। একেবারে বেসিক কিছু হয়ত আনতে পারেন অবশ্যই লাগেজের ওজনের দিকে খেয়াল রেখে। শুকনো মশলা প্রয়োজনমতন নিয়ে আসুন।

কাপড় চোপড়ের ব্যপারটাই বেশি ইম্পর্টেন্ট। সবচেয়ে কস্ট লাগে যখন এখান থেকে কোনো কাপড় কেনার পর দেখা যায় সেটা মেড ইন বাংলাদেশ (বা এরকমই কিছু) এবং দেশের মুদ্রা্য তার দাম আকাশছোয়া। উদহারন দেই, গুডউইলের দোকান ছাড়া দশ ডলারের নিচে টিশার্ট খুজে পাওয়া (পড়ার যোগ্য ডিজাইন) ভাগ্যের ব্যপার। অথচ সেটাই দেশে আপনি খুব বেশী হলে ২০০-৩০০ টাকায় (আরো কম হওয়ার কথা) পেয়ে যাবেন। এখানে কম খরচের দোকানেও ১০০ ডলারে যা পাবেন তার পুরো সেট ২হাজারের মধ্যে কিনতে পারবেন। এক গাদা টিশার্ট, শর্টস কিনে ফেলুন। শর্টস একটু ভালো দেখেই কিনুন। টাইট ফিট কিছু কিনলে একটু সমস্যায় পড়তে পারেন ( ;) ;) )। ড্রেস শার্ট কিনে ফেলুন কয়েকটা (নানা কাজেই লাগবে), এমনি হাফ ও ফুল হাতা শার্ট কিনুন বেশ কয়েকটা। ফুলশার্ট হাত গুটিয়ে সবসময়ই পড়তে পারবেন, নর্থের শীতের স্টেট গুলোতেই যান আর সাউথের গরমস্টেট গুলোতেই যান। শার্ট একটা টাইমলেস ডিজাইন কাজেই কিনুন নিজের ইচ্ছা মতন। আমার পার্সোনাল প্রেফারেন্স অন্তত ৫ সেট শার্ট ও ২সেট ড্রেস শার্ট। ড্রেস শার্ট একরং হলে ভালো, তাহলে ব্লেজার বা টাইয়ের সাথে মেলাতে সমস্যা হবে না। এবার নামুন প্যান্ট কিনতে। জিন্স কিনুন প্রয়োজন মতন, ছেড়া ফাটা ডিজাইন কেনার চিন্তা বাদ দিন। ভালো কাপড়ের (ভারী ডেনিম) জিন্স কিনুন। শীত গ্রীষ্ম সবসময়ই জিন্স পড়তে পারবেন। স্কীন জিন্স থেকে দুরে থাকুন, নানা কারনেই। সবচেয়ে বড় কারন হয়ত যদি একটু ওয়েইট গেইন করেন তাহলেই ওটা পড়তে পারবেন না। তাছাড়া সবসময় ওটা পরার মতন সিচুয়েশন নাও পেতে পারেন। রিলাক্সড ফিট ও রেগুলার ফিট গুলো কিনুন। এবার নামুন ড্রেস প্যান্ট কিনতে। গাঢ় রঙের দুতিনটা কিনুন বা বানিয়ে নিন। ফ্ল্যাট ফ্রন্টেড, সিংগেল বা ডবল প্লেটেড কিনতে পারেন। ট্রিপল প্লেট না কেনাই ভাল। ফ্ল্যাট বা সিংগেল সব কিছুর সাথেই ম্যাচ করে। তবে কাপড়ের দিকে খেয়াল রাখুন। যেসব কাপড়ে রোয়া (লিন্ট) উঠে সেগুলো না কেনা ভালো। যদি রং উঠে তাহলে বেশীদিন ব্যবহার করতে পারবেন না, কাজেই একটু খরচ করে ভালোগুলৈ কিনুন।

একটা স্যুট বা ব্লেজার বানিয়ে ফেলুন। ডবল বাটনের একটা স্যুট হলেই চলবে। সাইজ মিলিয়ে বানিয়ে নিন। হয়ত বছরে ১-২ বার পড়তে হবে, নাও হতে পারে। তবে যদি লাগে তবে এখান থেকে কিনতে হলে খবর হয়ে যাবে। কাজেই একটা বানিয়ে রাখাই ভালো।

গেন্জি রুমাল মোজা আন্ডারও্যয়ারের দাম যদিও এখানে খুব বেশি না, তবে অন্তত দুই তিন মাস চলার মতন সেগুলো নিয়ে আসুন। এর পর এখানে থেকেই কিনে নিতে পারবেন। এখানে যেকোনো বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই এগুলো পাবেন।

স্যান্ডেল নিয়ে আসুন। একটু ভালো স্যান্ডেল কিনে মুচির কাছে গিয়ে নতুন স্যান্ডেলই সেলাই করে নিন। মানে জুতোর তলা, সুখতলি ইত্যাদিতে সেলাই করে নিন যেনো খুলে না যায়, বিশেষত যেসব জায়গা গাম দিয়ে লাগানো থাকে। ২-৩ জোড়া স্যান্ডেল হলেই বেশ অনেকদিন চলে যাওয়ার কথা। সাধারন ব্যাবহারের জন্য এখানে মূলত স্নিকার (কেডস) পড়া হয়। এছাড়া ড্রেস স্যু ক্যাজুয়াল সু এগুলোও কিনুন। যেটাই কিনুন ভালো গুলো কিনুন। একটু শীতেই কমদামীগুলোর তলা ফেটে যাবে। দোকানদার যতই গ্যরান্টি দিক, ভালো ও ফ্লেক্সিবল তলার জুতো স্যন্ডেল কিনুন। স্নিকার হিসেবে হাইকিং (ওয়েইনবার্গার গুলো ভালৈ) এর গুলো কিনুন।


আসা যাক শীতের কাপড়ের ব্যাপারে। তাপ প্রবাহ নিয়ে সাধারন জ্ঞান থেকে জানা যায় একটি মোটা জ্যাকেটের চেয়ে লেয়ার বানালে (মানে দুই বা তিন পরতের কাপড়) ভালো কাজ করে। কাজেই খুব মোটা জ্যাকেট না কিনে মাঝারি ধরনের জ্যকেট কিনুন। শীতের স্টেটগুলোতে গেলে (মানে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে যায় যেসব জায়গায়) ওভারকোট কিনতে ভুলবেন না। মান্কি ক্যাপ আর গ্লাভস ও কিনবেন। তবে সাধারন শীত (৪০-৫০ ডিগ্রি) সোয়েটশার্ট (হুডেড শার্ট) দিয়েই কাটিয়ে দিতে পারবেন যদি একটু মোটা শার্ট বা টি্শার্টও থাকে। ভালো গ্লাভস আর ক্যাপ না থাকলে সমস্যায় পড়বেন।

এই দিয়েই হয়ে যাওয়ার কথা।


আর দেশ থেকে আসার আগেই থাকার জায়গা (এপার্টমেন্ট, রূমমেট ইত্যাদি) এসব ঠিক করে আসবেন। টিউশন, ফিস এসবের ব্যপারও আগে থেকেই জেনে রাখুন। এসেই একগাদা জিনিষ কেনা শুরু করে দেয়াটা ঠিকনা। বাজেট ঠিক করে কেনার ভালোমতন দরকার হলেই কিনবেন, ইমপালস বাই (হঠাৎ হুজুগে কিছু কেনা) এর পরে রিমোর্সে পরবেন বিরাট। শখের তোলা লাখটাকা প্রবাদ স্যুটকেসে ভরে রাখুন। কিছু কেনার আগে দাম নিয়ে রিসার্চ করে কিনুন। উদহারন দেই, বেস্টবাই বা ফ্রাইস এ যে ল্যাপটপ আপনি হাজার ডলারে কিনবেন, সেটারই অনলাইন ডিল পেতে পারেন ওদের ওয়েবেই, কূপনও পেতে পারেন। বা অন্য কোথাও কমদামে পেতে পারেন। ওদের দোকানে যে মাউস ২০ ডলারে কিনবেন, সেটাই হয়ত অনলাইনে ৫ ডলারে কিনতে পারবেন। ওদের দামই যদি কম হয় তাহলে তো কিনলেনই।

বদনা আনতে ভুইলেন্না ;) নাইলে বাগানে পানি দেবার ওয়াটারিং ক্যান কিন্তে হবে। নাইলে কৈলাম হাফলিটার বোতল দিয়ে কাজ চালাইতে হবে ;)

আশা করি এতে কিছু অন্তত সাহায্য হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৫৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×